চুঁচুড়াঃ প্রিয় পোষ্যর মাত্র পাঁচ মাসেই একটি পা কাটতে হল চিকিৎসককে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ওই পোষ্যের মালিক দ্বারস্থ হলেন আদালতের। একইসঙ্গে, তিনি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় থানাতেও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। হুগলি জেলার চুঁচুড়া থানার অন্তর্গত ব্যান্ডেলের যুবক সৌমেন মুখোপাধ্যায় বলেছেন, পশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও যাতে ডাক্তাররা সচেতন হন, তার জন্যই তিনি থানা-আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানালেন সৌমেন। চুঁচুড়া থানার অন্তর্গত ব্যান্ডেলের সাহেববাগান এলাকার বাসিন্দা নিম্নবিত্ত মুখোপাধ্যায় পরিবার কুকুর-প্রেমি হিসাবেই এলাকাই পরিচিত। শুধু বাড়ির কুকুর নয়, পাড়ার বেওয়ারিশ কুকুরদেরো দেখভাল করেন এই পরিবারের সদস্যরা। কুকুর-প্রেম অবশ্য স্থানীয়দের অজানা নয়। সৌমেনের বাবা অ্যাম্বুলেন্স চালান।
জানা গেছে, মাস পাঁচেক আগে পাড়ার একটি কুকুরের এক শাবককে বাড়িতে তুলে এনেছিলেন সৌমেন। তারপর সেটিকে একেবারে সন্তানের মতো করে প্রতিপালন করেন সৌমেন সহ গোটা মুখোপাধ্যায় পরিবার। ছোট্ট সারমেয়টি একেবারে ছায়ার মতো সৌমেনের পায়ে-পায়ে ঘুরে বেড়াত। তাই আদর করে তিনি কুকুরছানাটির নাম রেখেছিলেন শ্যাডো অর্থাৎ ছায়া। সৌমেন জানান, গত মাসে শ্যাডোর পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। ব্যান্ডেল বালির মোড় এলাকায় এক পশু চিকিৎসকের কাছে সারমেয়টিকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান তিনি। ওই চিকিৎসক বিষয়টি গুরুতর নয় বলে চিকিৎসা শুরু করেন।
বেশ কয়েকবার তিনি শ্যাডোকে ওই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তাঁর দেওয়া ওষুধও খাওয়ান। কিন্তু তারপরেও শ্যাডো সুস্থ হয়নি। বরং শ্যাডোর পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। অবশেষে কয়েকজনের পরামর্শে সৌমেন ব্যান্ডেলের এক পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে উত্তর ২৪ পরগনার এক পশু চিকিৎসকের কাছে শ্যাডোকে নিয়ে যান। চিকিৎসক শ্যাডোকে দেখা মাত্রই জানান, তার ওই পা-টি গ্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ পচন ধরেছে। অবিলম্বে পা-টি বাদ দিতে হবে। না হলে বাঁচানো যাবে। বাধ্য হয়ে শ্যাডোকে বাঁচাতে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক অস্ত্রোপচার করে ৫ মাসের পোষ্যটির একটি পা বাদ দিতে হয়।
সন্তান সম শ্যাডোর মাত্র পাঁচ মাস বয়সে অঙ্গহানির ঘটনা মেনে নিতে পারছে না মুখোপাধ্যায় পরিবার। গোটা ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ সৌমেন। তাঁর অভিযোগ, ব্যান্ডেল বালির মোড় এলাকায় ওই পশু চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার জন্যই শ্যাডোর পা বাদ গিয়েছে। তাই আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। থানায় অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের (Consumer Affairs Court) দ্বারস্থ হয়েছেন। সৌমেনের কথায়, "মানুষের মতো পশুদেরও প্রাণ আছে। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় যাতে কোনও পশুর ক্ষতি না হয়, কেউ যাতে কুকুরদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করে, সেজন্যই ওই ডাক্তারের উপযুক্ত শাস্তি চাই।"