তারক ঘোষ
১৯৭২ সালে নিখোঁজ হওয়া ফ্লোরিডা এক কিশোরীকে শনাক্ত করা গেল। চিহ্ণিত করা গেল তার খুনীকে। গোয়েন্দাদের মতে তাকে একজন সিরিয়াল কিলার পুলিশ হত্যা করেছিল। সুসান পুল। মাত্র ১৫ বছর বয়স ছিল তার। ১৯৭২ সালে ক্রিসমাসের ঠিক আগে সে হঠাত নিখোঁজ হয়ে যায়। কোথাও তাকে খুজে পাওয়া যায়না। তার এই অন্তর্ধান সবাইকে বিস্মিত করেছিল। এমনকি সেই সময় তার মৃতদেহও পাওয়া যায়নি। সেটা পাওয়া গেলে এটুকু আন্দাজ করা যেত, সে আর বেচে নেই। সেইসময় সবাই এমনকি তার পরিবারের মানুষজন বিশ্বাস করেছিল, সে অন্ততঃ বেচে আছে। কিন্তু, ১৯৭৪ সালের জুন মাসে পাম বিচ কাউন্টির একটি দূরবর্তী স্থানে একটা মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। একটি ম্যানগ্রোভ গাছের সঙ্গে তার দিয়ে বেঁধে রাখা একটা কঙ্কাল। হাড় ছাড়া তার কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। কঙ্কাল্টি পুলিস নিয়ে যায়। কিন্তু সনাক্ত করা আর সম্ভব হয়নি, কারণ তখন গোয়েন্দাদের কাছে ডিএনএ প্রযুক্তি ছিল না যা এখন সহজলভ্য। ফলে মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৫ সালে, কয়েকজন তদন্তকারীরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের ডাটাবেসে ডিএনএ রিপোর্ট জমা দেয়। এরপর ডিসেম্বর মাসে ওথ্রাম, টেক্সাস-ভিত্তিক ফরেনসিক ল্যাব (যেটি বংশবৃত্তান্ত ব্যবহার করে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে) শেরিফের অফিসে যোগাযোগ করে এবং বলে যে তারা ক্লোজড মামলাগুলি সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে। পরের বছর মার্চ মাসে তারা পুলের মায়ের কাছ থেকে একটি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পাঠায়। সেই নমুনার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের ডিএনএ ম্যাচ করে যায়। ফলে বোঝা যায়, ১৯৭২ সালে নিখোজ মেয়েটির কঙ্কালটি সেদিন উদ্ধার করা হয়েছিল। সমাধান হয় কিশোরী অন্তর্ধান রহস্যের। জানা যায়, সেদিন ওই মেয়েটিকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। কিন্তু কে করেছিল?
তদন্ত শুরু করেন ডিটেকটিভ উইলিয়াম স্প্রিঙ্গার। তার সন্দেহ হয়েছিল ফ্লোরিডা রাজ্য কারাগারে বন্দী শ্যাফার নামে একজন সিরিয়াল কিলারের উপর। ১৯৯৫ সালে সে একজন সহবন্দীর ছুরিতে মারাত্মকভাবে জখম হয়। এই শ্যাফার ফোর্ট লডারডেল শহরতলির উইল্টন ম্যানরসে একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন এবং পুল নিখোঁজ হওয়ার সময় মার্টিন কাউন্টি শেরিফের অফিসের ডেপুটি হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
ফোর্ট লডারডেলের কাছে বসবাসকারী ১৬ এবং ১৭ বছর বয়সী আরও দুটি মেয়েকে হত্যা করার জন্য শেফারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তাদের বিকৃত এবং শিরচ্ছেদ করা দেহাবশেষ ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে মার্টিন কাউন্টিতে পাওয়া যায়। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে, ফ্লোরিডায় ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে মৃত্যুদণ্ড ছিল না এবং শেফারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এই কিশোরদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেই একইভাবে পাওয়া গিয়েছিল কঙ্কালটি।
তাই, স্প্রিংগারের বিশ্বাস হয়েছিল, ওই কঙ্কালের সঙ্গে নিশ্চই শেফারএর যোগাযোগ থাকতে পারে। পুলের মৃত্যুর সঙ্গেও সে জড়িত থাকতে পারে। যে গাছটিতে শেফার তার শিকারদের নির্যাতন ও হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে সেটি দক্ষিণ ফ্লোরিডায় "ডেভিল ট্রি" নামে পরিচিত। জানা গেছে, শেফার ৩০ জন এর মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ছিল। রবার্ট স্টোন, যিনি শেফারের বিচার করেছিলেন, একবার তাকে ডেকেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "আমার দেখা সবচেয়ে যৌনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তি।“ এখনো তদন্ত চলছে, আশা করা যায়, পুলের খুনী কে শেষপর্যন্ত প্রমান করা সম্ভব হবে।