তারক ঘোষ
ভারতীয় হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ‘শ্রীমদ্ভগবত গীতা’ কতজন ভারতীয় হিন্দু পড়েছেন? কতগুলো পরিবার তার পরবর্তী প্রজন্মকে গীতা পড়তে উতসাহিত
করেন? গীতা পড়া মানে কী শুধু ধর্মগ্রন্থ পাঠ? গীতা পাঠ মানে কি নিজেকে স্মার্ট পৃথিবী
থেকে প্রাচীন সময়ে নিয়ে চলে যাওয়া?
প্রশ্নগুলো
নিজেই নিজেকে করলাম। কেন জানেন? কারণ অনেকে মনে করেন গীতা, রামায়ণ, মহাভারত পড়বেন
বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, কিংবা ধার্মিক মানুষজন, কিংবা হিন্দু সন্ন্যাসীরা। এই প্রজন্ম শুধু নয়, এর আগের ও তার আগের
প্রজন্মের মানুষজনের মধ্যেও সেই একই ধারণা ছিল। এই ধারণা যে খুব একটা বদলেছে তাও
নয়।
আসলে
গীতা যে কী, সেটা কিছু ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী ও গবেষক যেমন জেনেছিলেন, তেমনই জেনেছিলেন এই বিশ্বের
উন্নত দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী গবেষক ও দার্শনিকরা। তারা বুঝে গিয়েছিলেন, গীতা আমাদের থেকে কয়েক
হাজার-লক্ষ বছর পরের বিজ্ঞান। যে বিজ্ঞান এখনো পৃথিবীবাসী আবিষ্কার করতে পারেনি।
জেনে রাখুন, শ্রীমদ্ভগবত গীতার প্রতিটি শ্লোকের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে রয়েছে এমন অনেক
তত্ত্ব যে তত্ব, এখনো বাস্তবের রূপ দেখেনি। শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বহু জটিল সমস্যার সমাধানও রয়েছে, এই সমস্যা রাজনৈতিক, পারিবারিক, এমনকি ডিপ্লোম্যাসী সম্পর্কিত। আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে
পারেন, নাও পারেন, কিন্তু মনে
রাখুন, বিজ্ঞানের বই হিসাবে
শ্রীমদ্ভগবত গীতা আপনার পড়া উচিত।
শ্রীমদ্ভগবত গীতা শুধু মনোবিজ্ঞান নয়, ভবিষ্যতের পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, গণিত এবং মহাকাশবিজ্ঞান। জটিল সব সূত্র রয়েছে এখানে, এর
মধ্যে কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব হলেও প্রায় সবটাই অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। যদিও প্রতিনিয়ত,
আমেরিকায় এর উপর গবেষণা চলছে।
Thermodynamic
Laws, Meditation, Artificial Life, Simulation, Atomic physics, Re-incarnation, Multiverse
theory, Soul and software – এসব কিছু নিয়েই গীতা। গীতায় ব্যাখ্যাত হয়েছে এই
বিশ্বের সৃষ্টি রহস্য। মানুষের সৃষ্টি ও বিনাশ। ইউনিটি ইন ডাইভারসিটিকে সুন্দরভাবে
উপস্থাপিত করা হয়েছে এই গীতার মধ্যেই। আধুনিক বিজ্ঞান বিশ্বাস করে যে মাল্টিভার্স একটি শক্তিশালী হাইপোথিসিস। এই
মহাবিশ্ব একটি সিমুলেশন। স্টিফেন হকিংও
এটা বিশ্বাস করতেন, ইলন মাস্কও।
বিশ্বের প্রতিটি জীব এর
আত্মা এক একটা সফটোয়ার, যার অল্গারিদম সৃষ্টি করা হয়েছে এক গভীর উদ্দেশ্য নিয়ে। আর
সেই সৃষ্টিকর্তার হাতেই আছে, ওই অল্গারিদমকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা। প্রতিটি
জীবাত্মা তথা এক একটা সফটোয়ার যুক্ত রয়েছে ভগবান তথা পরমাত্মা তথা মেন সার্ভার এস
সঙ্গে। যে জীব তার মস্তিষ্কে ইন্সটল করা সফটোয়ারের আপডেট করতে চান, তাকে
ইন্টারনেটের মাধ্যমে মেন সার্ভারে সংরক্ষিত আপডেটেড ভারসান থেকে আপডেট করতে হবে।
সোজা কথায় ধ্যানের মাধ্যমে নিজেকে যুক্ত করতে হবে পরমাত্মার সঙ্গে। ধ্যান হলো,
অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের এক ইন্টারনেট সিস্টেম। যার সাহায্যে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার
যোগাযোগ সম্ভব।
এই মহাবিশ্বে সমস্ত
সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তিনি কে, এই প্রশ্নের উত্তর পেলেই সবকিছু
বোঝা হয়ে হয়ে যাবে।
গীতা ভালো করে অনুধাবন করলে বুঝতে পারবেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঠিক
কী বলেছিলেন, আর তার মাধ্যমে কী বলতে চেয়েছিলেন।
আমাদের বাবাজী মহারাজ এসব জানতেন। তিনি বুঝেছিলেন, একমাত্র গীতাপাঠ ও তা
উপলব্ধি করতে পারলেই মানুষ এই ‘ইল্যুশান’ তথা ‘মায়া’ থেকে মুক্ত হতে পারবে। মানুষ
বুঝতে পারবে, তারা ভগবানের নিয়ন্ত্রিত ‘জৈবিক রোবট’ ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের মধ্যে
থাকা আত্মা বা সফটোয়ার নিয়ন্ত্রিত হয় বিশ্বপিতার দ্বারা। গীতা থেকে মানুষ জানতে
পারে সম্পর্ক ও সম্পর্কের জটিলতা, মানসলোকে লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার পাপ ও তা থেকে
মুক্তির উপায়।
বাবাজী তাই সকলকে গীতা পড়ার উপদেশ দিতেন ও তার উপযোগীতা ব্যাখ্যা করতেন।
এমনকি নতুনগ্রাম আশ্রমে দেখেছি বাবাজী আশ্রমে থাকলে প্রতিদিন ভোরে তিনি ছোট ছোট বালক-বালিকাদের গীতা
পাঠ অভ্যাস করাতেন।
বাবাজী মহারাজকে অনেকে অন্যান্য সাধুদের মতো মনে করেন, যেমন বেশিরভাগ
মানুষ গীতাকে হিন্দুদের একটা ধর্মগ্রন্থ ভাবেন। আসলে, বাবাজী মহারাজ ছিলেন এক
বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজতত্ববিদ। যিনি তাই বারে বারে চেয়েছিলেন, বিজ্ঞানের সাহায্যে
আত্মাতত্বকে ব্যাখ্যা করার। ধর্মকে বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করতে চাওয়ার মধ্যেও ছিল
তার বিজ্ঞানমনষ্ক যুক্তিবাদী মন। তিনি শুধু গীতার টিকাকার ছিলেন না, তিনি গীতাকে
নতুন করে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করার কথাও ভেবেছিলেন, কিন্তু, দূর্ভাগ্যের
বিষয়, তাকে চলে যেতে হলো।
কেউ কেউ বলেন বাবাজী মহারাজের সব কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল,
তাই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন, তিনি আর থাকবেন না। এদের উদ্দ্যেশ্যে বলি, ‘আপনারা কি
ভগবান? যে আগাম জেনে গেলেন, বাবাজী মহারাজের সব কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল?
বাবাজী মহারাজ
তাহলে নতুন করে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করার কথা ভাবছিলেন কেন? আমি বলছি জোরের
সঙ্গে, কারণ, আপনারা শুনেছেন লোকমুখে, আর বাবাজী সাংবাদিক হিসাবে, আমাকে তার নানা
পরিকল্পনার কথা বলে গিয়েছিলেন। আর সেসব শেষ না করে তিনি কোথাও যেতেন না। আর এটাই
ছিল তার উপর তার শ্রীগুরু জানকীদাসজীর নির্দেশ। ভক্তদের জন্য কোরো।
আর, এরকম গুরু-অন্ত-প্রাণ সন্ন্যাসী আমি খুব কম দেখেছি।
শূন্য থেকে তিনি সব কিছু করেছেন। আর এমন কিছু ‘সাধু’ আছে, যারা সব কিছুকে শূন্যে
পৌছে দিতে পারে। থাক, এসব তথাকথিত ওই
মানুষদের কথা। এরা থাকে প্রত্যেক যুগে। এদের জন্যই প্রভু যীশু বলেছিলেন, ‘ওদের ক্ষমা
করো প্রভু, ওরা জানেনা, ওরা কী করছে।‘