বাবাজী মহারাজের গবেষণার বিষয় আধ্যাত্মিক ভারতের ভবিষ্যৎ সমাজ গঠনের একটা নতুন মডেল হতে পারে



আজ থেকে এই কলমে প্রকাশিত হবে ড. স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া, এম.এ. পিএইচডি, গোল্ড মেডালিস্ট এর সমাজ-চেতনা। কারণ তিনি আধ্যাত্মিকতা ও মানব-সমাজের মধ্যে এমন একটা সেতু-বন্ধন করেছিলেন তার গবেষণায়, যা ভবিষ্যতের এক সুস্থ-বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মডেল হয়ে উঠতে পারে।
 “ভয়েস ৯ নিউজ গ্রুপ” তার এই চিন্তাধারাকে বিশ্ব তথা ভারতের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য ইংরাজী, তামিল, হিন্দি, পাঞ্জাবী, ফরাসী, রাশিয়ান ভাষায় তার কাজকর্মকে ছড়িয়ে দেবে বিশ্বের শিক্ষিত মানুষদের কাছে। দেশের উন্নতি ও দেশের আধ্যাত্মিকতা ও সংষ্কৃতি রক্ষার ব্যাপারে সংবাদপত্রের যে দায়িত্ব আছে, সেই দায়িত্ববোধ থেকেই ‘ভয়েস ৯ নিউজ গ্রুপ’ এই কাজ করতে চলেছে।

তারক ঘোষ

বাবাজী মহারাজ অর্থাৎ ড. স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া মহারাজকে যদি কেবলমাত্র ‘ধর্মগুরু’ আখ্যা দিয়ে একটি গন্ডীর মধ্যে রেখে তার ধর্ম বা বাণী প্রচার করা হয়, তাহলে তার চারিধারে যে বৃত্ত রচিত হবে, সেটা একটা অসম্পূর্ণ বৃত্ত। আর এটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতের সমাজতত্ববিদেরা একটা বিরাট কিছু হারাবেন। 
কারণ, তিনি ছিলেন সংষ্কারক - ধর্মের ও সমাজের মধ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক সংষ্কার সাধন করে এক নতুন ধর্মীয় ও সামাজিক বিন্যাস করতে চেয়েছিলেন। এর ফলে, এই একবিংশ শতাব্দীতে আর একটা ধর্মীয় ও সামাজিক নবজাগরণ ঘটতে পারত।
 আজ তিনি দেহে নেই, কিন্তু, যেটা রয়ে গেছে, সেটা হল, তার দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল – তার গবেষণা গ্রন্থ। আর এখানেই তার সঙ্গে অন্য সন্ন্যাসী বা ধর্মগুরুদের পার্থক্য। এই পার্থক্যটা না বুঝে, কেউ যদি তাকে কেবলমাত্র একটা অর্ধ-বৃত্তের মধ্যে তাকে রাখেন, তাহলে এই দেশ একটা বিরাট কিছু হারাবে। আমি বিশ্বাস করি, বাবাজী মহারাজের এই সমাজ-চেতনা ভবিষ্যতের গবেষকদের গবেষণার বিষয় হিসাবে শুধু থাকবে না, একটা নতুন সমাজ গঠনের উপাদান হিসাবেও কাজ করবে, আর তাকে কাজে লাগাতে হলে, এগিয়ে আসতে হবে, উচ্চশিক্ষিত সমাজতত্ববিদদের। আজ তাকে প্রয়োজন ভারতের।
বাবাজী নিজেই বলেছেন –(২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত ‘জনমত’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে)
 “আমি ভগবানকে ডাকতে সাধন ভজনই শুধু করতে আসিনি। সাধন ভজনের জায়গাতো আছেই। আমি চাই, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি আমার সাধনায়, অল্প শিক্ষায়, তা মানুষের মধ্যে ভাগ করে একটা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে। এই হানাহানি বন্ধ করতে। হিংসাকে জয় করতে শেখাতে। লোভকে সংবরণ করতে।“ 
এটা তিনি চেয়েছিলেন। অর্থাৎ, তিনি নিজেই নিজেকে একটা নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে আটকে রাখতে চাননি। আর তা চাননি বলেই হাত দিয়েছিলেন গবেষণায়। 
অথচ, দুর্ভাগ্যের বিষয়, তিনি তা নিজে চাইলেও, তার এই দিকটা নিয়ে আমাদের আলোচনা কম করা হচ্ছে। ভক্তির আতিশয্যে যদি তার লক্ষ্যকে আমরা ভুলে যাই, তাহলে ভবিষ্যতের পৃথিবী আমাদের ক্ষমা করবে না।

 

কিন্তু, সেই বাবাজী মহারাজ ওই সাক্ষাৎকারে আক্ষেপের সঙ্গেই বলেছিলেন –“কতটা পেরেছি, তা নিয়ে সংশয় আছে।“ 
সমাজের আগে আছে ব্যক্তি। সুস্থ সমাজ গঠনের আগে প্রয়োজন একটা সুস্থ সংসার। আর সুস্থ সংসার গঠনের আগে দরকার একটা সুস্থ ব্যক্তি। ব্যক্তির সঠিক বিকাশ না হলে, সুস্থ সংসার গড়ে উঠতে পারে না। সুস্থ সন্তান আসতে পারে না। তাই ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতির পাশাপাশি তার আর্থিক সমাধানের বিষয়টা বাবাজীর ভাবনার মধ্যে ছিল। 
কারণ, আর্থ-সামাজিক বিন্যাসের পরিবর্তন করতে হলে, মানুষের জন্য চাই কর্ম। প্রয়োজন অর্থ। এই অর্থ ও কর্ম গড়ে তুলবে এক একটা সুস্থ পরিবার। আর সে জন্য চাই, কুসংষ্কারমুক্ত একটা চেতনা – সেটা ধর্মীয় হতে পারে, সামাজিক হতে পারে। আর তার জন্য চাই শিক্ষা। 
কারণ সঠিক শিক্ষার অভাব একটা জাতিকে পিছনে ফেলে দিতে পারে। সমাজে শিক্ষিত, কুসংষ্কারমুক্ত মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, সমাজ হয়ে উঠবে শক্তিশালী। এই সমাজের স্বপ্ন বাবাজী দেখতেন বলেই হাত দিয়েছিলেন এমন একটা গবেষণায়, যে গবেষণার ফসল, ভবিষ্যত সমাজের একটা মডেল।
বাবাজী বলছেন – “The transformation of human society through dialectical materialism and class stuggle is nothing but transformation of Real manship to a True manship.” তিনি তাই বলছেন –“Human being is an organ of human society.” তিনি বলছেন –“
মার্ক্স বলেছেন – কম্ম্যুনিস্ট শাসনে ‘State will be withered away.’ মার্ক্সের সাম্যবাদের চিন্তা ভারতে নতুন কিছু নয়। আর ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে, ধর্মকে বাদ দিয়ে সাম্যবাদ আনার চেষ্টা ভয়ঙ্কর পরিণতির মুখোমুখী হতে পারে। 
চলবে

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad