সিঙ্গুরঃ টাকাকড়ি না থাকলেও দেশ দেখার বাসনা চাপা থাকে না অদম্য স্পৃহা থাকলে। আর সেটাই আর এক বার প্রমাণ করে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরের যুবক মিলন মাঝি। ইচ্ছা ছিল দেশ দেখার জন্য একটা বাইক কেনা। কিন্তু সেটাও যখন হল না তখন পায়ে হেঁটেই সুদূর লাদাখের পথে অগ্রসর হন মিলন। মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় তিনি পৌঁছে যান লাদাখের খারদুংলার গিরিপথে, যেটা বিশ্বের উচ্চতম সড়কপথ! মিলনের বাবা অনিল মাঝি চালান এক মামুলি চায়ের দোকান। কিন্তু এর আয় থেকে ছেলেকে মোটরবাইক কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই পায়ে হেঁটে লাদাখ যাওয়ার পরিকল্পনা করেন সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্রামের এই বাসিন্দা।
২২ ফেব্রুয়ারি হাওড়া থেকে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এর পর ১৫ মে লাদাখের খারদুংলা গিরিপথে পৌঁছে যান। সেখান থেকেই বাড়িতে ফোন করে তাঁর স্বপ্নপূরনের কথা জানান। পেশায় তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। রানিগঞ্জে একটা কারখানায় কাজও করতেন। তবে লকডাউনে চাকরি চলে যায় ওঁর। এর পর কামারকুন্ডুতে বাবার চায়ের দোকানে বসা শুরু করেন। সেখানেই বাবাকে মাঝেমধ্যে সাহায্য করতেন। তবে সাধ ছিল লাদাখ যাওয়ার। সে সাধের কথা অবশ্য নিজের মধ্যেই রেখেছিলেন। এমনকি, লাদাখের পথে পা পাড়ানোর দিনও কিছুই জানতেন না তাঁর মা-বাবা।
মিলনের বাবা বলেন, ‘‘ছেলে বলেছিল, কাজের সন্ধানে রানিগঞ্জে যাচ্ছে। আমি জানতামই না ও লাদাখ যাবে। এক বার বাইক নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে ওকে বাইক কিনে দিতে পারিনি। তখন থেকেই মনে মনে প্রস্তুতি নেয় পায়ে হেঁটে লাদাখ যাওয়ার। ফেসবুকে ছবি দেখে জানতে পারি যে ও লাদাখ যাচ্ছে। ছেলের স্বপ্নপূরণে আমি গর্বিত।’’ছেলের জন্য গর্বিত মিলনের মা চণ্ডী মাঝি। তাঁর কথায়, ‘‘মিলন যখন খারদুংলায় বরফের উপর জাতীয় পতাকা গেঁথে দিল, সে সময় গর্বে বুকটা ভরে গিয়েছিল।" মিলন মাঝি আজ একটা স্বপ্ন পূরণের নাম, একটা প্রতিজ্ঞার নাম।হাওড়া থেকে লাদাখ প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটেই স্বপ্নপূরণ করে নিজের বাড়িতে ফিরল।
আজ তার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতে হরিপালের বিধায়ক ডাঃ করবী মান্না উপস্থিত ছিলেন মিলনের বাজেমেলিয়ায় বাসভবনে। মিলনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন,"তুমি সিঙ্গুর তথা বাংলার গর্ব। আগামীদিনের জন্য একরাশ শুভেচ্ছা ও স্নেহাশীষ রইলো।"
সৌজন্যেঃ খবর আজ কাল পরশু