উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিল কেন?

রক্তিম দাশগুপ্ত, নতুন দিল্লিঃ ষোড়শ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হলেন দ্রৌপদী মুর্মু। ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি তথা দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পরই শুরু হয়ে গেছে দেশের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়। আগামি ৬ ই আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। উল্লেখ্য, উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে এম বেঙ্কাইয়া নাইডুর মেয়াদ ১০ ই আগস্ট শেষ হচ্ছে। উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে জগদীপ ধনখড়কে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। 


যৌথ বিরোধীরা ধনকরের বিরুদ্ধে মার্গারেট আলভাকে তাদের প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস অংশগ্রহণ করলেও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কেন তৃণমূলের এই পৃথক অবস্থান? আর তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা। একটু পিছনে তাকানো যাক। উপ-রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বিরোধী দলের বৈঠকে মমতা কিন্তু তাঁর প্রতিনিধি পাঠাননি। এই সময় বিষয়টা নিয়ে রাজনীতিতে যথেষ্ট সারা পড়েছিল। তাহলে কি সিদ্ধান্তটা আগেই নেওয়া হয়েছিল? বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা? এরপর যখন মার্গারেট আলভা তার মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তখনও মমতার কাছ থেকে কোনও মন্তব্য য়াসেনি বা, তাঁর
 দলের কেউও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।

 

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, "উপ-রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনয়নের আগে আমাদের সম্মতি নেওয়া হয়নি।“ তিনি বলেছিলেন, “আলভার ব্যাপারে টিএমসির সঙ্গে যথাযথ পরামর্শ এবং আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।“ অন্যদিকে মমতা বলেছিলেন, একদিকে এনডিএ-র প্রার্থী হলেন ধনখড়, যিনি গত তিন বছর ধরে রাজ্যের রাজ্যপাল থাকাকালীন "সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট" ছিলেন, এবং অন্যদিকে, আলভাকে টিএমসির সাথে কোনও আলোচনা ছাড়াই বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটাই কি একমাত্র কারণ? না কি নেপথ্যে অন্য কিছু ‘খেলা’ আছে? এর কারণ কি রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীশ ধনখড়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমস্ত সাংসদদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তৃণমূল এনডিএ প্রার্থী জগদীপ ধনখড়কে সমর্থন করবে না। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, মমতা দলের প্রতিটি সাংসদকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে অবস্থানটি কী হওয়া উচিত। সকলে উল্লেখ করেছিলেন, বৈঠক ডাকার মাত্র ১৫ মিনিট আগে তৃণমূলকে যেভাবে জানানো হয়েছিল, তা মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বৈঠকের শেষের দিকে, শরদ পাওয়ারকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থির করেছেন আগামি লোকসভা নির্বাচনে একটি সমন্বিত ও বিশ্বাসী বিরোধী দল দরকার এবং তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন।
বিরোধী ঐক্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেছিলেন, 'বিরোধী ঐক্য রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের উপর নির্ভরশীল নয়। আপনি যদি সত্যিই বিরোধী ঐক্যে আগ্রহী হন তবে আপনাকে অহংকার এবং স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে আপনি বিরোধী ঐক্য পেতে পারেন। নির্বাচনী পাটিগণিত অনুযায়ী, টিএমসির বিরত থাকার সিদ্ধান্ত এনডিএ প্রার্থীকে সাহায্য করবে না। সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের অধিকার।" তিনি আরও বলেছেন, উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে টিএমসির "মতাদর্শগতভাবে পার্থক্য" করার অধিকার রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন; তারা মনে করেন যে টিএমসি এর এই সিদ্ধান্ত, প্রমান করছে, বিরোধী ঐক্য খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। দ্য প্রিন্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত, বলেছেন যে বিরোধী ঐক্যটি ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, "তৃণমূল বুঝতে পেরেছে যে তার পরিসর কেবল বাংলার মধ্যেই রয়েছে এবং তারা এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারে না। আর এর ফলাফল সবার কাছেই স্পষ্ট যে, তারা একটি ভেঙে পড়া বিরোধী দল দেখতে পাবে," যোগ করেন তিনি। কেউ কেউ মমতার সিদ্ধান্তকে তার পক্ষ থেকে একটি সঠিক পদক্ষেপ হিসাবে দেখছেন। কারণ, তিনি টিএমসিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী থেকে দূরে রাখতে চান এবং তার দলকে বিজেপির জন্য একটি অ-কংগ্রেসী বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন করতে চান।

 
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad