Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

গৃহী ও সাধুদের জন্য ডক্টর স্বামী শ্রীশ্রী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া মহারাজের বাণী। আজ প্রথম অংশ


 

বাবাজী মহারাজ অর্থাৎ ডক্টর স্বামী শ্রীশ্রী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া মহারাজের জীবনই ছিল তার বাণী। তিনি আলাদাভাবে তার ভক্তদের কোনো বাণী বিতরণ করেননি। তার দৈনন্দিন জীবনে ভক্তদের কাছে বলা নানা কথা থেকেই এই বাণী সংকলন। তার এই কথাগুলো মনে রাখলে ও পালন করলে জীবন সুন্দর হবে।  তারক ঘোষ



 

বাবাজী দুটি বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিতেন। একটি হলো আত্মবিশ্লেষণ, অন্যটি হলো অন্যের দোষ না দেখার অভ্যাস। তিনি বারবার বলতেন দিনের শেষে বিছানায় শুয়ে ভেবে দেখবি, সারাদিন যে কাজগুলি করলি। সেই কাজগুলি যদি বিশ্লেষণ করে দেখিস কোনটি ঈশ্বর-সেবামূলক আর কোনটি নিছক অন্যের দুঃখের কারণ সৃষ্টিকারক।

 তিনি পরনিন্দা-পরচর্চা একদম পছন্দ করতেন না। 

বলতেন, মানুষের কাজ না থাকলেই এসব করে। তাই ঈশ্বরের দিকে মন রেখে গৃহী মানুষকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে জোর দিতে বলতেন। 

 

বাবাজী মহারাজ শঙ্করদেবের দর্শন সম্বন্ধে লিখছেন – “শুদ্ধচরিত্র ব্যক্তিগণকেই বৈষ্ণব বলা যেতে পারে। প্রকৃত বৈষ্ণবের কোন জাতি নাই, শত্রু নাই, তিনি মানবতার পূজারী। এই অর্থে প্রত্যেক সৎ ব্যক্তিই বৈষ্ণব। ভগবানের ভক্ত বা সত্য শিব সুন্দরের পূজারী ব্রাম্ভন নন, ক্ষত্রিয় নন, শূদ্র নন, বৈষ্ণব নন, মুসলমান নন, খ্রীষ্টান নন, তিনি ভক্ত। পৃথিবীটাকে সুন্দর করার জন্যই তারা জীবন ধারণ করেন।

 বাবাজী বলতেন, “সাধু হওয়া খুব কঠিন। আর সাধুর সবচেয়ে বড় শত্রু হলো লোভ।

 তিনি একটি করুণ ইতিহাসপুস্তিকায় লিখছেন – “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন এইরূপ অসৎ ব্যক্তিদের দ্বারা পরিবৃত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তখন তিনি তাহা ধ্বংস করিয়া গিয়াছিলেন। নিজের ইচ্ছায় নিজের যদুবংশ তিনি ধ্বংস করিয়া গিয়াছেন। যে পশুতার বিরুদ্ধে তিনি সারাজীবন লড়াই করিয়া গিয়াছেন, মানুষ শেষে তাহাকেই পশু ভাবিয়াই হত্যা করিয়াছে। সেই সময়ও হাসিতে হাসিতে বলিয়া গিয়েছেন দারুককে – ‘সকলের কল্যাণ যদি তুমি করিতে চাও এবং করিতে থাক তবে তুমিও মনে মনে তৈরি থাক তোমার শেষ পরিণতি এইরূপই হইবে। তবুও আদর্শকে ছাড়িও না। ইহাই নিষ্কাম কর্মযোগ। 

 


বাবাজীর কথায় আশ্রমে শান্তি পাওয়া যায় না, শান্তি পাওয়া যায় ভগবানকে জানতে পারলেই। আর সে জন্য আত্মাকে জানতে হবে। আর এই আত্মাকে জানতে হলে প্রথমেই ঠিক করতে হবে লক্ষ্য। আর লক্ষ্য ঠিক রেখে এগোলেই দেখতে পাবি, তোর কর্ম ঠিক আছে। 

 বাবাজী মহারাজের একটা কুসংষ্কারবিরোধী মন ছিল, আর এটা তিনি পেয়েছিলেন তার শ্রীগুরু স্বামী জানকীদাসজীর কাছ থেকেই। কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, অনেকে বিশ্বাস করেন, কারো কারো মুখদর্শন কর্মে বাধার সৃষ্টি করে। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির মুখ দেখে গেলে নাকি বাধা আসে।

 

 এই প্রসঙ্গে বাবাজী বলতেন, এটা একটা অন্ধ-বিশ্বাস। যারা মনে করেন, অমুক ব্যক্তির মুখ-দর্শন করাতেই তার বিপদ হল। অন্যদিকে, সেই অমুকব্যক্তিটিও ভাবতে পারেন, ‘তমুকব্যক্তির মুখোমুখী হওয়াতেই তার কার্যসিদ্ধি হল না। এই প্রসঙ্গে স্বামী জানকীদাসজীর প্রসঙ্গ টেনে বাবাজী বলতেন বাবা বলতেন, ‘কারো মুখ দেখা পাপ, এই কথাটা কুসংষ্কার। এটা সামাজিক অন্যায়।

 

তিনি বলতেন, নেতাজী, স্বামীজী, এপিজে আব্দুল কালাম, বালগঙ্গাধর তিলকের জীবন ও বাণী মানুষকে পথ দেখাতে পারে। তারা যে আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, আমরা কোথাও না কোথাও সেই আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আর এই দূরে সরতে সরতে আমরা চলে যাচ্ছি ঈশ্বরের কাছ থেকে, মুক্তি থেকে অনেক দূরে। ওই সমস্ত মহামানবরা আমাদের দিয়ে গেছেন প্রকৃত ভারতীয় আদর্শ, কুসংষ্কারবিরোধীতা আর সংযমের শিক্ষা। 

 


গুরু কেমন হবে, কে গুরু? এই নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন – “আমরা সহজে গুরু হয়ে যাচ্ছি। ফলে আমাদের কথার গুরুত্ব কমছে। এই প্রসঙ্গে তিনি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথা তুলে বলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন, সাধু হল বারুদ ভরা গুলি আর গৃহস্থ হল ফাকা গুলি। কাজেই সাধু যদি আধ্যাত্মিকতায় ধনী না হয়, তাহলে তো সমাজ পরিবর্তন করতে পারবেন না। আমরা যেন নিজেদের যোগ্য করে তুলেই আপনাদের সামনে আসতে পারি। 

 

একবার বাবাজী মহারাজ বলেছিলেন, “মানুষের উপর দেবতার ভর হওয়া, এই ব্যাপারটা আমি বিশ্বাস করিনা। এগুলোর পিছনে উদ্দেশ্য থাকে, অনেক সময়, মৃগি রোগের শিকার হওয়া কোন রমণীকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ভর হয়েছে বলে প্রচার করে, সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে অনেক অসাধু কাজ করা হয়।বিশ্বাসভঙ্গ পাপ বলে তিনি মনে করতেন। 

আবার কারোর বিশ্বাসে আঘাত করারও পক্ষপাতি ছিলেন না বাবাজী মহারাজ। তাই সকলকে বলতেন, প্রত্যকের গুরুই তার কাছে শ্রেষ্ঠ। কারো ধর্ম ও গুরুদেবকে অসম্মান করাউচিত নয়। 

বার বার বলেছেন, তোরা যখন এখানে আসিস, আমার কথা শুনিস, ভালো লাগে। ভাবি তোরা জীবনে সেগুলো পালন করবি। কিন্তু, কিছুদিন পর যে কে সেই। মনে রাখিস, বৈরাগ্য ভালো, কিন্তু শ্মশান বৈরাগ্য নয়। মনটাকে বিরাগী কর, আচরণে বৈরাগ্য আন, কিন্তু বসনে বৈরাগ্য আর চিন্তায়-চেতনায় বিষয়াসক্তি মটর দানার মতো গজগজ করবে, তাহলে কিছু হবে না। 

একইভাবে সাধুগণের উদ্দেশ্যেও বলেছেন – “সাধু যদি জপ, ধ্যান না করে বা ঈশ্বরকে না ডাকে তবে কেবলমাত্র বৈরাগী, মহন্ত পদবী বা জটাদাড়ি, বেশভূষার দ্বারা সে যথার্থ সাধু হতে পারে ন। 

 


বাবাজী  মহারাজ বলতেন, ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল দিবি না। এটা বিপদের কারণ হবে।

 আজ তাই হচ্ছে। মোবাইলে পর্ণ ছবি দেখে নিজেদের ও অন্যদের সর্বনাশ করছে কিশোর সময়। বাবাজী বারে বারে মেয়েদের দায়িত্ব কী, বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী, ছেলেরা কীভাবে চলবে এসব কিছু নিয়ে আলোচনা করেছেন। দুঃখ যে মানুষকে খাঁটি করে এ কথাও বলেছেন। কিন্তু, সেই দুঃখ কি না-পাওয়ার দুঃখ? কখনোই না। সেই দুঃখ হল, ঈশ্বরকে ভুলে, বিবেককে অস্বীকার করে কর্ম বা দুষ্কর্ম করে যাওয়া। 

তিনি উপনিষদের কথা তুলে ধরে বলেছেন –“ঈশ্বরচিন্তা ছাড়া শান্তিলাভের আর কোন রাস্তা নাই। নিম্বার্ক দর্শনে শিক্ষাপ্রবন্ধে বাবাজী মহারাজ লিখছেন

শ্রী ভগবান ছাড়া অন্য কোন কিছু হইতে শান্তি বা সুখের সন্ধান করিতে চাহিলে ঠকিতে হয়। পার্থিব যতগুলি জিনিসের সহিত আমরা আমাদের হৃদয়ের যোগস্থাপন করি, হৃদয়ে ততগুলি শোকশলাকা প্রোথিত করিয়া রাখি। হয় সেই বস্তুগুলি আমাদের ছাড়িয়া যায় নতুবা আমরাই তাহাদের ছাড়িয়া চলিয়া যাই। জড়বস্তু হইতে সুখ পাইতে চাহিলে ব্যর্থই হতে হয়। নারী বা পুরুষ দেহ, খাদ্য, টিভি, ঘর-বাড়ি, গাড়ি, পোশাক সবই জড়বস্তু। এই সবের উপভোগের মাধ্যমে যথার্থ সুখ পাওয়া যায় না। নশ্বর বস্তু শাশ্বত সুখ সুখ দিতে পারে না।

 


বাবাজী মহারাজ বলতেন, সবচেয়ে কঠিন কাজ আমিত্বকে ত্যাগ করা। নিজের মধ্যে যে আমিবোধটা লুকিয়ে আছে, সেটাকে ত্যাগ করা খুবই কঠিন। আর যিনি সেটা ত্যাগ করতে পেরেছেন, বা আমিকে তুমিতে বদলাতে পেরেছেন, তিনি ভগবানের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। 

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও এই আমিকে ত্যাগ করার কথা নানা লোক-কথার মাধ্যমে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। 

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies