গরুর গাড়ি কি আজ সাদাকালো হয়ে যাওয়া নিতান্তই বিষণ্ণ এক স্মৃতি?


সাদাকালো হয়ে যাওয়া নিতান্তই এক স্মৃতি?" হয়তো তাই। কারণ, সময় সবকিছু খেয়ে নেয়। প্রগতির নামে, উন্নতির নামে সবকিছুই এক সময় হারিয়ে যায়। পড়ে থাকে গরুর গাড়ি করে যাওয়া স্বপ্ন দেখা এক তরুণীর ছবি।  যে চলেছে তার শ্বশুরবাড়ি। প্রথমবার।

বিশ্বজিৎ মন্ডল, ঢাকাঃ
মনে পড়ে ,"কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি/বোঝাই করা কলসী-হাঁড়ি..." কিংবা আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে-ধুতুর, ধুতুর, ধুতুর ধুর সানাই বাজিয়ে, যাব তোমায় শ্বশুরবাড়ি নিয়ে...’ আজ কী সেই ছবিটা নেহাতই ছবি? সাদাকালো হয়ে যাওয়া নিতান্তই এক বিষণ্ণ  স্মৃতি?" হয়তো তাই। কারণ, সময় সবকিছু খেয়ে নেয়। প্রগতির নামে, উন্নতির নামে সবকিছুই এক সময় হারিয়ে যায়। পড়ে থাকে গরুর গাড়ি করে যাওয়া স্বপ্ন দেখা এক তরুণীর ছবি।  যে চলেছে তার শ্বশুরবাড়ি। প্রথমবার।

 এক সময় গ্রামীণ চলাচলের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত গরুর গাড়ি নিয়ে রচিত গানে প্রমান মিলে এর জনপ্রিয়তার। মেঠোপথে দুই চাকার গরুর গাড়ি দিয়ে ধান, পাট, মানুষসহ নানান জিনিস আনা নেওয়া করা হতো। তবে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তের পথে দুই চাকার গরুর গাড়ি। গরুর গাড়ি শব্দটি এখন বইয়ের পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ। সভ্যতার প্রায় উন্মেষকাল থেকেই বাংলাদেশের সর্বত্রই যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি। তবে, আধুনিকতার সভ্যতার বিবর্তণের যন্ত্রচালিত লাঙল বা পাওয়ার টিলার এবং নানা যন্ত্রযানের উদ্ভবের ফলে বিলুপ্ত গরুর গাড়ি। 

মৎস ও শষ্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলার সর্বত্রই এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহি গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তের পথে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটেছে। পক্ষান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এ ঐতিহ্য। তবে এখনো গরুর গাড়ি টিকে রেখেছে নানারকম লোকসাংস্কৃতি ও তাকে ভিত্তি করে নানা মেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জানা যায়, গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রি. জন্মের ১৫০০-১৬০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর – পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিলো। যা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম বাংলায় এই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকায় জনপ্রিয় বাহন ছিলো গরুর গাড়ি।

 বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিলো গরুর গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই জনপ্রিয় পল্লী বহন। বর্তমানে নানা ধরণের মটোরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যান বাহনের ব্যবহার কমে আসছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়েনা। বর্তমান যুগ হচ্ছে আধুনিক যান্ত্রিক যুগ। এখনকার মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহণের জন্য ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লড়ি, নসিমন, করিমনসহ বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য মটোরসাইকেল, রেলগাড়ি, অটোরিকশা মাইক্রোবাস ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়েনা গরুর গাড়ি। গরুর গাড়ির যানবাহনটি হলো নিরাপদ। এই বহনে অন্যতম সুবিধা হলো জ্বালানীর কোন প্রয়োজন হয়না। জ্বালানী না থাকায় দূর্ষিত ধোয়া তৈরী হয়না ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে তেমন কোন দূর্ঘটনা ঘটার কোনো আশংকা থাকেনা। 

অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে। এ বিষয়ে পত্নীতলার সূধীসমাজ ও অভিভাবকগণ জানান, শহরের ছেলে মেয়েরা তো দূরের কথা বর্তমানে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সাথে তেমন পরিচিত নয়। আবার শহরের অনেক ছেলে মেয়েরা তাদের বাবা মাকে গরুর গাড়ি সম্পর্কে প্রশ্ন করে গরুর গাড়ি কী? এটা দেখতে কেমন? চলে কীভাবে?
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad