আইন থাকলেও, পুরানো রীতি মেনে কিশোর-কিশোরীরা বিয়ে করে ফেলছে ১৩ থেকে ১৭ বছরেই

ভয়েস ৯, কাঠমান্ডুঃ আইন আছে, ২০ বছরের আগে বিয়ে করা যাবে না। কিন্তু কে মানে সেই আইন? কেউ ১৩ বছর বয়সে, কেউ ১৬ বছর বয়সেই সেরে ফেলছে বিবাহ। তারপর বছর ঘুরতেই বাবা-মা হয়ে যাচ্ছে এই কিশোর-কিশোরীরা। অথচ, নেপালের দেওয়ানি বিধি আইন ২০৭৪-এ বলা হয়েছে, ২০ বছর বয়সের আগে বিয়ে করলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ৩০ হাজার জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এমনকি এই ধরণে বিয়ে ধরা পড়লে পাত্র-পাত্রীর বাবা-মা বা সাহায্যকারী সকলেই আদালতের সম্মুখীন হবেন।
জানা গেছে, নেপালের পূর্ব রুকুম জেলার পুথা উত্তরগঙ্গা গ্রামীণ পৌরসভার সুনীতা বুধা (১৬) ও অনিল রোক্কা (১৭) নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে করে। পরের বছর সুনীতা গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং অনিল কাজের সন্ধানে ভারতে চলে যায়। ফলে, বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। এই রকম অনেক ঘটনা এই জেলা জুড়ে। বন্ধ করতে হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে হয়, কিন্তু সেরকম অভিযোগ জমা পড়ে না। ফলে, আইন নয়, পুরানো রীতি মেনে চলছে বাল্য-বিবাহ। শুধু রুকুম নয়, ধানুষাতেও বাল্য-বিবাহের খবর পাওয়া গেছে। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, বছরে কত বাল্যবিবাহ হচ্ছে, তার কোনও তথ্য নেই। রুকুম পূর্বের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য আধিকারিক নিমপ্রসাদ গিরি জানান, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে যাঁরা প্রেগন্যান্সি চেক-আপের জন্য আসেন, তাঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বয়স ২০-এর নীচে। গিরির মতে, ২০১৯/০২০ অর্থবছরে ২০ বছরের কম বয়সী ৩২০ জন গর্ভবতী মেয়ে, ২০২০-০২১ সালে ২৪১ জন এবং ২০২১-০২২ সালে ২৪৬ জন গর্ভবতী মেয়ে চেক-আপের জন্য এসেছিল। একইভাবে ২০ বছরের ঊর্ধ্বে ৭৬৭ জন গর্ভবতী নারী ২০১৯/০২০ অর্থবছরে, ২০২০-০২১ অর্থবছরে ৭০৬ জন এবং ২০২১-০২২ অর্থবছরে ৭২১ জন গর্ভবতী নারী চেক-আপের জন্য এসেছিলেন।
জেলায় বাল্য বিবাহ রুখতে নানা রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রাম, পুলিশ এবং বিভিন্ন সংগঠন বাল্যবিবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করছে। সিসনে গ্রামীণ পৌরসভার মহিলা, শিশু ও প্রবীণ নাগরিক শাখার প্রধান সুনীতা খাদকা বলেন, এটি প্রতিরোধের জন্য ওয়ার্ডে শিশু ক্লাব, মায়ের দল এবং মেয়েদের দল গঠন করা হয়েছে এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করা হচ্ছে। খাদকা জানান, সময়ে সময়ে দল ও ক্লাবগুলোকে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আইনগত বিধান, বাল্যবিবাহের চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করা হয়। তিনি বলেছিলেন যে তারা বাল্যবিবাহের বিষয়ে রাস্তায় সচেতনতামূলক কাজ করছেন। ফলে অতীতের তুলনায় বাল্য বিবাহের সংখ্যা কমছে বলে জানিয়েছেন খড়কা।
ডেপুটি পুলিশ সুপার প্রকাশ ডাঙ্গি বলেন, সামাজিক সচেতনতার অভাবে বাল্যবিবাহ নিয়ে অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে না। তিনি আরও বলেন, থানায় অভিযোগ দায়ের না হওয়া পর্যন্ত বাল্যবিবাহের বিষয়টি তদন্ত করা সম্ভব নয়। তবে অভিযোগ পেলে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, জেলা পুলিশ কার্যালয় ও অধস্তন পুলিশ কার্যালয়ের সমন্বয়ে কমিউনিটি পুলিশ পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সময়ে সময়ে গ্রাম, বাজার ও বিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
ধানুশার জেলা পুলিশ অফিসের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ জিতেন্দ্র কুমার বাসনেট জানান, গত দেড় মাসে বাল্যবিবাহের নয়টি ঘটনা প্রতিরোধ করেছ পুলিশ। ডিএসপি বাসনেট আরও বলেন, বাল্যবিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জনসচেতনতা ছড়িয়ে দিয়ে কম বয়সীদের বিয়ে বন্ধের জন্য প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। ধানুশা বিদেহা পৌরসভার বিজয় মণ্ডল বলেন, মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ভাল এবং সক্ষম ছেলেকে বেছে নেওয়ার পরে বিয়ে ঠিক করা হয়। তিনি বলেন, 'বিয়ের তারিখ ঠিক করার সময় ছেলে-মেয়ের বয়স নিয়ে কেউ কথা বলে না। অনেকেই আইনি বিধান সম্পর্কে জানেন না।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad