রজত রায় ও শম্পা দত্তঃ নবান্ন অভিযান এখন রণক্ষেত্র। সাতরাগাছি যুদ্ধক্ষেত্র। মধ্য কলকাতার মহাত্মা গান্ধি রোডে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। দমকলকর্মীরা অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এভাবেই শুরু হলো বিজেপির নবান্ন অভিযান। প্রথমে শুভেন্দু, রাহুল, লকেটকে গ্রেপ্তার, পরে দিলীপ ঘোষের মিছিলকে আটাকালো পুলিশ। নবান্ন অভিযান শুরু হওয়ার পর যখন সাতরাগাছিতে আন্দোলন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, তখন একদিকে সুকান্তের নেতৃত্বে একটি মিছিল ও অন্যদিকে দিলীপের নেতৃত্বেীকটি মিছিল এগোতে থাকে। এই মুহুর্তে দিলীপের মিছিলকে আটকে দিল পুলিশ।
যত সময় যাচ্ছে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। কলকাতা হাওড়ার পাশাপাশি জেলা থেকেও সংঘর্ষের খবর আসছে। সবমিলিয়ে এক ধুন্দুমার কান্ড সারা কলকাতাতে। মিছিল আটকালেই শুরু হয়ে যাচ্ছে অশান্তি। জলকামান ও লাঠি চালিয়ে অবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে। ইতিমধ্যেই লাঠির আঘাতে বহু বিজেপি কর্মী আহত হয়েছে, অসুস্থ বহু। আহত হয়েছেন বেশ কিছু পুলিশ কর্মী। একদিকে জলকামান ও টিয়ার গ্যাস, অন্যদিকে ইঁট ও লাঠি। এভাবেই নবান্ন অভিযানের দৃশ্য দেখছে সারা দেশ। বিজেপি এই অভিযানকে বলেছে রাজ্য সরকারের পাহাড়-প্রমান দূর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই। অন্যদিকে, রাজ্যে যাতে অশান্তি সৃষ্টি না হয় তার সরকারী প্রচেষ্টা। বিজেপি কর্মীরা আজ নবান্নের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ ব্যারিকেডে আটকে পড়লে মারমুখী হয়ে ওঠে। ব্যারিকেডের বাশ ভেঙ্গে পুলিশকে আক্রমণ করতে শুরু করে।
ভেঙ্গে ফেলা হয় পুলিশের কিয়স্ক, পাথর-ইঁট ছোড়া হতে থাকে পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশ প্রথমে জল-কামান দিয়ে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে, কাদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে থাকে। এরপর কর্মীরাদের তাড়া করে আটক করতে থাকে। এখন পর্যন্ত কয়েকশো বিজেপি কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্মীরা পিছোতে পিছোতে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে ।বিজেপির নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে রীতিমতো যুদ্ধের আবহাওয়া। ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজ্য-রাজনীতি।
জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সাঁতরাগাছি। সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিন পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের। নবান্ন অভিযান শুরুর আগেই শুভেন্দুকে আটক করা হয়। সাঁতরাগাছি থেকে মিছিল শুরুর আগেই পুলিশ পথ আটকায় শুভেন্দু অধিকারীর। তার পরেই পুলিশের সঙ্গে তীব্র বচসা শুরু হয়। শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন মহিলা অফিসাররা তাঁর গায়ে হাত দিয়েছে। তার পরেই উচ্চ পদস্থ পুলিশ অফিসারদের তলব করতে বলেন তিনি।
যদি তাঁকে গ্রেফতার করা হয় তাহলে তাঁকে গ্রেফতার দেখাতে হবে বলে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আজ সকালেই শুভেন্দু টুইটে লিখেছিলেন, “মমতা পুলিশ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করার চেষ্টা করছে। সাঁতরাগাছিতে উত্থাপিত ইস্পাতের ব্যারিকেডটি তার উদ্বেগ এবং ভীরুতার প্রতীক।“ আজ এক টুইটবার্তায় এ কথা জানান, বিজেপি নেতা তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আরো বলেন, “কোনো দেয়ালই 'গণতন্ত্রের ঢেউ'-এর সামনে দাঁড়াতে পারবে না, এটা অচিরেই ভঙ্গ হবে। মমতা পুলিশের অফিসার - ডিজি ও আইজিপি রেলওয়ে; পশ্চিমবঙ্গ রেল পুলিশ; ডঃ দেবাশীষ রায়, আইপিএস; অপারেশনকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এব্যাপারে এমসি তাদের ফ্রন্টাল অর্গানাইজেশন ব্যবহার করছে যাতে আমাদের কর্মীরা নবান্নের কাছে পৌঁছাতে না পারে।“
এদিন, মমতা ব্যানার্জীকে উত্তর কোরিয়ার কিম এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বিরোধী দলনেতাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে লালবাজারে যায় পুলিশ। শুভেন্দু বলেন, ‘ভয় পেয়েছেন মমতা।’ অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষ বলেন, "শক্তিশালী বিরোধীপক্ষ আগে ওরা দেখেনি। ওরা এই ঢেউকে বাধা দিয়ে ঠেকাতে পারবে না। সমাজবিরোধীরা এই বাংলার দূর্নাম করছে। পুলিশকে এই দাদাগিরি করার অধিকার কে দিয়েছে?"
গ্রেপ্তার করে লালবাজারে আনার পর লালবাজারে সেন্ট্রাল লকআপে বিক্ষোভে দেখাতে থাকেন বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, লকেট চট্টোপাধ্যায় ও রাহুল সিনহা। লালবাজারের গেটে বসে পড়েন অগ্নিমিত্রা পল। লালবাজারের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রেফতার হন বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।