১৪ মাসের ঘুমন্ত কন্যাশিশুকে পুকুরে ফেলে দিলো পাষণ্ড বাবা!

বিশ্বজিৎ মন্ডল, ঢাকা: শুনেছি কন্যাসন্তান পিতা-মাতার সৌভাগ্যের প্রতীক হয়। কন্যারা পিতার অনুরূপ হয়ে সফলতা ও ব্যর্থতার অংশীদার থেকে সর্বদা পিতার স্নেহ ও ভালোবাসা লাভ করে। আজ এমন এক নিষ্ঠুর পিতার কথা বলবো - প্রথমটি মেয়ে সন্তান তাদের, এরপর প্রত্যাশা ছিল ছেলের। কিন্তু আবারও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়ে সবসময় স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া লেগে থাকতো। এই পারিবারিক কলহের জের ধরে জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি তার ১৪ মাসের ঘুমন্ত কন্যাশিশুকে পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এই ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামে। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঘুমন্ত শিশুটিকে তুলে নিয়ে পুকুরের পানিতে ছুড়ে ফেলেন জাকির হোসেন। ঘাতক জাকির হোসেনের (৪৫) স্বীকারোক্তির পর মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে পুকুর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। পরে মরদেহ এবং জাকিরকে পুলিশে দেন তারা।

 স্থানীয় সূত্র জানায়, সাত বছর আগে জাকিরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের নামা সিংড়াপাড়া গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম মোছা. জান্নাতি খাতুন। বর্তমানে বয়স ছয় বছর। এরপর বাবা জাকিরের প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হয়। তার নাম রাখা হয় মোছা. হুমায়রা খাতুন। কিন্তু দ্বিতীয়বারও মেয়ে হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন জাকির। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এ কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এরই জেরে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। 

এক পর্যায়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে দেন জাকির। বিলাপ করতে করতে হুমায়রার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার মেয়ে খাটের ওপর নাই। পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। একইসঙ্গে আমার বোন-দুলাই ভাইকে খবর দেই। প্রতিবেশীদেরও জানানো হয়। সবাই এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে চাপ দেন তারা। পরে আমার মেয়েটিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। জাকিরের ভায়রা সাইফুল ইসলাম বলেন, তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোরে পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। 

এরপর জাকিরকে আটক করে থানায় খবর দেই। জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই হাসান বলেন, শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করায় ঘাতক জাকিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad