সংবাদপত্র ভালো কাজের পাশে থাকবে আর খারাপ কাজের সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক

সংবাদমাধ্যম অনেক সময় প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হয়। তাদের সত্য ও বাস্তব সমালোচনাকে যদি শাসকদল গ্রহণ করে, তাহলে শাসনতন্ত্রের দোষ-ত্রুটি গুলি সংশোধন করা সহজ হয়।


মিহির দত্ত 

 সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে কিছু হয় কী? আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এটা অনেকটা ‘সোনার পাথরবাটি’র মতো। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে আরো একটি বিষয় জড়িয়ে থাকে, সেটি হলো সাংবাদিকদের স্বাধীনতা। সত্যই কি সাংবাদিকরা স্বাধীন! সাংবাদিকতাকে কি আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে একটা ‘মিশন’ বলে মনে হয়? না কি নিছক একটা প্রফেশন? অনেক প্রশ্ন। আমরা গর্বের সঙ্গে বলি, সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের একটা স্তম্ভ।
 শব্দগুলো বেশ ওজনদার। তাই না? প্রখ্যাত সাংবাদিক ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, সাংবাদিকরা শেষ জীবনে এসে বুঝতে পারেন, তারা ‘ভারবাহী পশু’ ছাড়া আর কিছুই নয়, সারা জীবন একটা ময়লা টানার গাড়ি টেনে এসেছেন। মার্জনা করবেন, কথাগুলো পার্থবাবু তার সাংবাদিকতা বিষয়ক গ্রন্থে লিখেও গেছেন।
কিন্তু, বাস্তব কি বলে? সংবাদপত্র সত্যি বলুক, এটা মনে হয়, কোন রাজনৈতিক দলই চায় না। কারণ, সত্য বড় কঠিন। সে দল দেখে না, ক্ষমতা দেখে না। আর যে সংবাদপত্র এই সত্যকে তুলে ধরে, তারা অনেক সময় সরকার বা বিরোধীপক্ষের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে। আমরা বামফ্রন্ট শাসনেও এইছবি দেখেছি। 
দূর্নীতির খবর করতে গিয়ে বারংবার সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের  উপর নেমে এসেছে আঘাত। শাসক দলের বিরুদ্ধে যায়, এমন সত্যি খবর প্রকাশিত হলে, উল্লসিত হন বিরোধী রাজনৈতিক দল। তাদের কাছে তখন ‘প্রিয়’ হয়ে ওঠে ওই সংবাদপত্র। আবার বিরোধীদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশিতি হলে, আনন্দ পান শাসকদল। আসলে, ‘সত্যি’ টাই বিপদের কারণের হয় সংবাদমাধ্যমের । কারণ, সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকরা শাঁখের করাতের উপর বসে থাকেন। কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে, বা ক্ষমতা থেকে চলে গেলে, বদলে যায় তাদের অবস্থান। 
কিন্তু, খুব কম সংবাদমাধ্যম তাদের চরিত্র বদলায়। 
সংবাদমাধ্যম অনেক সময় প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হয়। তাদের সত্য ও বাস্তব সমালোচনাকে যদি শাসকদল গ্রহণ করে, তাহলে শাসনতন্ত্রের দোষ-ত্রুটি গুলি সংশোধন করা সহজ হয়, এতে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়ানোর প্রতিজ্ঞাটাও পূর্ণ হয়। কিন্তু ক্ষমতার আষ্ফালনে, সংবাদমাধ্যমের  সত্যি খবরকেও যদি ‘মিথ্যা বা সাজানো’ বলে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়, সেটা আখেরে ক্ষতির কারণ হয়।
সংবাদমাধ্যম যেমন ভালো কাজের পাশে থাকবে, তেমনই খারাপ কাজের সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি বলছিনা, সব সংবাদপত্র একেবারে নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন। কিন্তু, যারা সংবাদমাধ্যমকে মনে করেন সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ, যারা অনায়াসে শাসক ও বিরোধী দল সহ সমাজের দোষত্রুটিকে একইভাবে তুলে ধরতে দ্বিধা করেন না, আমি তাদের কথা বলছি। 
সাংবাদিকদের অবস্থান বদলায় না। তারা সত্যের সন্ধানেই থাকেন, কিন্তু যেহেতু তারা চাকরি করেন সংবাদপত্র বা টিভি মিডিয়ায়, তাই তাদের চলতে হয়, মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। অপরাধা তাদের নয়, অথচ, যেহেতু তারা ফিল্ডে কাজ করেন, তাদের একটা ঝুঁকি থাকেই। এটা ‘প্রফেশনাল হ্যাজার্ডস’। থাকবে। কিন্তু, আমার প্রশ্ন, এই স্বাধীন দেশের বুকে সংবাদপত্র, কেন তার সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারবে না? কেন, নিজ স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে, তাদের মনে হবে প্রতিবাদী লেখক-সাংবাদিকরা ‘কলম-সন্ত্রাসী’? সাংবাদিকতার ধর্ম তো সেটা নয়।

লেখক প্রাক্তন সাংবাদিক। এইপ্রতিবেদনে তিনি তার নিজস্ব মতামত লিখেছেন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad