ইতিমধ্যেই, ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। মারহুরা সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার যোগেন্দ্র কুমারের সুপারিশে মাসরখ স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও) রীতেশ মিশ্র এবং কনস্টেবল বিকেশ তিওয়ারিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু, এতে ক্ষোভ কমেনি ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর। দায় কার? এতগুলো মৃত্যুর দায় কার? এই প্রশ্নটাই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে মৃতের পরিবার থেকে সরকারের অন্দরমহলে।
কথা হচ্ছিল, এক মহিলার সঙ্গে। তিনি হিন্দিতে যা বললেন, তার মানে দাঁড়ায়, কতবার বারণ করেছি, আমার কথা শোনেনি। ছেলে-মেয়েদের সামনে আমায় চুল ধরে থাপ্পড় মেরে টাকা নিয়ে ছুটেছে মদ খেতে। মদ আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে।
মদের নেশা যে এই দূর্বল পরিবারের কাছে একটা বড়ো অভিশাপ, যেখানেই কথা বলেছি, টের পেয়েছি। কিন্তু, এই রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ, আসছে কোথা থেকে, ভেজাল মেশাচ্ছে কারা? এর জাল কতদূর? এই প্রশাসনিক প্রশ্নের উত্তর সেভাবে মেলেনি।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে নীতিশ কুমার সরকার বিহারে মদ বিক্রি ও পান করা নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু, মদের যোগান বন্ধ হয়নি, চোরা পথে মদ ঢুকেছে, সে ভালো মদই হোক আর বিষাক্ত মদ। এর দায় কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
জানা গেছে,য বুধবার ও বৃহস্পতিবারের মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সারণ জেলার ইসুয়াপুর, মাশরাক এবং আমনুরে মারা গেছে বহু মানুষ। পুলিশ বলছে, ময় তদন্ত হলে বোঝা যাবে, মৃত্যুর কারণ কী। কিন্তু, মৃতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন তাদের মরদরা বিষ মদ খেয়েই মারা গেছেন। একটা চাপান-উতোর রয়েছে। তবে, গ্রামের গরীব মানুষগুলো বিচার চাইছেন। যাতে, আর এই ধরণের ঘটনা না ঘটে। যে কটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা কেউ চান না, বাড়ির ছেলে, বুড়ো, মরদরা মদ খাক। কিন্তু, প্রতিবাদ করলে, মহিলাদের কপালে জোটে মার, অত্যাচার।
অন্যদিকে, গতকাল রাজ্যসভায় এই নিয়ে রাজ্যের ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদরা সরব হওয়ায় নীতীশ কুমারের প্রাক্তন জোটসঙ্গী বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকে যখন ছাপরা মদ ট্র্যাজেডি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে "যদি কেউ মদ পান করে তবে তারা মারা যাবে।"
বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় উত্থাপিত সমস্যাগুলির মধ্যে একটি ছিল ছাপরা মদ ট্র্যাজেডি, যার ফলে ৪০ মিনিটের অল্প সময়ের মধ্যে তিনবার সংসদ মুলতবি করা হয়েছিল।
এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছিলাম কয়েকজনের সঙ্গে। তারা কিন্তু নীতিশ কুমারের এই মন্তব্যকে ভালোভাবে নেন নি।
এছাড়া, এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন, “রাজ্যে বিক্রি হওয়া এগুলি মদ নয়,'বিষ'। কাজেই, ভাল হবে যদি মানুষ মদ্যপান ছেড়ে দেয়... কারণ, এখানে যা আসছে সেগুলো বিষ,মদ নয়।" তিনি বলেছিলেন, "খেলাধুলা করে নিজেকে আরও শক্তিশালী করলে, তবেই, আপনি মদ সহ্য করতে পারবেন।"
মদ নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই নীতিশ কুমার মেজাজ হারিয়েছিলেন। তিনি কড়া ভাষায় বলেছিলেন, 'সবাই জানে, মদ কতটা বিপজ্জনক এবং মানুষের সতর্ক হওয়া উচিত। মহাত্মা গান্ধীর পদক্ষেপ অনুসরণ করে, আমরা সর্বদা বিহারে মদের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। শুধু আমাদের রাজ্যেই নয়, মদ খেয়ে সারা দেশেই মানুষ মারা গেছে।'
কিন্তু, বুঝবে কে?