প্রশ্ন জাগে সদগুরু না হলে ক্ষতি কি?

এই জগতের বেশিরভাগ মহাসাধক বা মহাপুরুষ খুব দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছেন। কিন্তু এনারা কেউ ক্ষুদ্র স্বার্থ বা স্থূল বিষয় ভোগের বাসনায় রাতারাতি আশ্রমের দায়িত্ব পালন করেন নি। তবে শ্রীভগবানের ইচ্ছায় হয়ত দায়িত্ব ও পালন করেছেন
শ্রীরাকৃষ্ণদেব বললেন - গুরু কাঁচা হলে গুরুর ও যন্ত্রণা আর শিষ্যের ও যন্ত্রণা। কাঁচা গুরুর পাল্লায় পড়লে শিষ্য মুক্ত হয়না। 
শ্রী রামদাস কাঠিযাবাবা আর এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বললেন - ' সব্ সাচ্চা গুরুকো পায় লাগ, ঝুঁটা গুরুকা মার লাথ্ '। অর্থাৎ সকল শ্রীসদগুরুর চরণে আশ্রয় লাভ করবে আর অসদ গুরু বা কপট গুরুর সংস্পর্শ ত্যাগ করবে। শ্রীবাবাজী মহারাজ বলতেন - সদগুরুর সেবা করবে, শ্রীচরণে আশ্রিত হয়ে থাকবে এবং কাছে গিয়ে প্রণাম করবে আর অসদ গুরুর সংস্রব ত্যাগ করে দূর থেকে প্রণাম জানাবে।
এখন ভারতের এই সমস্ত গুরুদেবের সমন্ধে আলোচনা করলে দেখা যাবে যে ওনাদের বেশিরভাগ লৌকিক শিক্ষায় অশিক্ষিত বা অর্ধ শিক্ষিত আর ওনাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান সমন্ধে বিচার করার সামর্থ্য আমাদের নেই, তবে বলা যেতে পারে ওনাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নির্বাণ বা ব্রহ্মজ্ঞান নয়। 
তাছাড়া ওনাদের বেশিরভাগ আর্থিক স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসেনি বা ওনারা গুরুদেব হবার পূর্বে আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই অর্থ উপার্জন বা অন্যান্য সুখ সুবিধার জন্য গুরুদেব বা মহন্ত রূপে আশ্রম পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন। 
তবে এনাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী শ্রী গুরুদেব যে নেই তা বলা যাবে না - যেমন এনারা লৌকিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও আর্থিক স্বচ্ছল পরিবার থেকে এসে আশ্রমের গুরুদাযিত্ব গ্রহণ করেছেন। এই সমস্ত আচার্যগণের চরণে প্রণাম জানাই। এখন অনেকে প্রশ্ন তুলবেন - শ্রীগুরুদেব হতে হলে কি লৌকিক শিক্ষার খুব প্রয়োজন? 
তবে সমস্ত বিষয পর্যালোচনা করে বলা যেতে পারে - এই প্রপঞ্চ জগতে বা লৌকিক সংসারে সকল মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য ও অজ্ঞান বা অবিদ্যার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোকে উত্তরণের জন্য লৌকিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে। 
তাই শ্রুতির ভাষায বলা যেতে পারে - ' অন্ধেনৈব নীযমানা যথান্ধা।’ অর্থাৎ একজন অন্ধ অপর অন্ধকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে না। এ
খানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য - লৌকিক শিক্ষার জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে গুরুগৃহে বা সন্দীপন মুনির পাঠশালায় গিয়ে লৌকিক শিক্ষার পাঠ নিতে হয়েছিল। এরকম অনেক উদাহরণ আছে যা এখানে উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন। 
আর একটা বিষয় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য - এই জগতের বেশিরভাগ মহাসাধক বা মহাপুরুষ খুব দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছেন। কিন্তু এনারা কেউ ক্ষুদ্র স্বার্থ বা স্থূল বিষয় ভোগের বাসনায় রাতারাতি আশ্রমের দায়িত্ব পালন করেন নি। তবে শ্রীভগবানের ইচ্ছায় হয়ত দায়িত্ব ও পালন করেছেন।
যাইহোক, এ ব্যাপারে অনেকে প্রশ্ন তুলবেন-- এই জগত সংসারে অনেক মহান শ্রী গুরুদেব আছেন যাঁরা তথাকথিত লৌকিক শিক্ষায় অজ্ঞ বা শিক্ষিত না হয়েও এই জগতের কল্যাণ সাধন করেছেন বা করে চলেছেন। উদাহরণ স্বরূপ এনারা শ্রীরামকৃষ্ণদেব, ব্রহ্মচারী শ্রীশুকদেব বা আরও অনেক মহা পুরুষের কথা তুলে ধরবেন। 
 এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে যাতে প্রকৃত সত্যের প্রকাশ হয় বা কিছু লোকের ভ্রান্ত ধারণা নিরসন হয়। তাই এখানে শ্রী রামকৃষ্ণদেবের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই। 
 শ্রীরাকৃষ্ণদেব-- অতি বাল্যকালে পাঠশালায গিয়ে সামন্য লেখাপড়া শিখে বাড়িতে থেকে ' রঘুবীরের ' সেবা করতেন। ওনার লৌকিক শিক্ষা এই পর্যন্ত। পরবর্ত্তী কালে ঈশ্বর প্রেরিত শ্রী গুরুদেব তোতাপুরীর কাছে এগার মাস বেদান্তের শিক্ষা নিয়ে ছিলেন। 
শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে শিক্ষা দেওয়া কালীন শ্রী তোতাপুরীর ( ন্যংটার) কি অবস্থা হয়েছিল সে সমন্ধে এখানে নীরব থাকব। তাছাড়া শ্রীভগবান প্রেরিত তান্ত্রিক সাধিকা শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে তন্ত্রোক্ত অনেক সাধন শিখিয়েছিলেন আর শ্রীগৌরাঙ্গ জ্ঞানে শ্রীচরিতামৃতাদি বৈষ্ণব গ্রন্থ শুনিযেছিলেন। 
 এ ব্যাপারে একটা সুন্দর ঘটনা আছে - ব্রহ্মণী ওনাকে সাবধানী বাণী শুনিযেছিলেন -- ' বাবা, বেদান্ত শুন না - ওতে ভাব ভক্তি সব কমে যাবে।'
যাইহোক এই দুই শিক্ষার সঙ্গে তথাকথিত লৌকিক শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই। অথচ ভারতীয় ধর্ম জগতের মহান সাধক ও লৌকিক শিক্ষায শিক্ষিত স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণদেব প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন -- ' He was the living commentary to the Vedas and to their aim. He had lived in one life the whole circle of the national existence in India '. অর্থাৎ তিনি বেদ ও বেদান্তের জীবন্ত ভাষ্যরূপ এবং এক জীবনে ভারতের জাতীয় ধর্মজীবনে সমগ্র কল্পটি অতিবাহিত করিয়াছেন।
 তাছাড়া শ্রী \বিবেকানন্দ একটি চিঠিতে লিখেছিলেন -- 'দাদা, বেদ - বেদান্ত, পুরান- ভাগবদে যে কি আছে, তা রামকৃষ্ণ পরমহংস না পড়লে কিছুতেই বোঝা যাবে না।' এর থেকে বলা যেতে পারে যে শ্রীরামকৃষ্ণদেব সমন্ধে স্বামী বিবেকানন্দ যা বলেছেন - তা কি ভুল তথ্য বা ওনার কথা কি ঠিক বুঝতে পারিনি ? কারণ যে মানুষটি জীবনে কোন লৌকিক শিক্ষার পাঠ নিলেন না, তিনি কেমন করে বেদ, বেদান্ত, পুরান, ভাগবত সহজ সরল ভাষায উপস্থাপনা করলেন?

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad