কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্য পশু-প্রাণীদের উপর অত্যাচার করলে আপনার ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে

বিশেষ প্রতিবেদন
প্রথমেই একটা কথা বলে রাখি, এই পৃথিবীটা আপনার একলার নয়। এখানে আপনার যেমন বেঁচে থাকার অধিকার আছে, ঠিক তেমনি অধিকার আছে, প্রতিটি পশু-পাখির। কাজেই যদি আপনি ভেবে নেন, একটা কুকুর, বিড়ালকে ধরে যদি দু ঘা দিয়ে দিই, তাহলে অসুবিধা কোথায়? দেখছে কে, আর বলছেই বা কে? এতদিন পর্যন্ত যদি এই ধারণা নিয়ে আপনি ওদের উপর নানা নির্যাতন চালিয়ে যান, তাহলে জেনে নিন, আপনার জেলের বাতাস খাওয়া ও জরিমানা দেওয়া দুটোই আপনার ভাগ্যে আছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৮ এবং ৪২৯ ধারা অনুসারে একটি প্রাণীকে হত্যা, বিষ দেওয়া, পঙ্গু করা বা নির্যাতন করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। এই ধরনের কাজ দুই থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড, বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় করতে পারে। এই সমস্ত মানুষদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা নথিভুক্ত হলে তাদের সরকারি চাকরি হারাতে হবে, কারাদণ্ড হবে, জরিমানাও হবে।
রাস্তায়, কোণায়, কোণায় পথ কুকুরের পাল দেখে বিরক্ত হয়ে অনেকেই তাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে এবং অনেক সময় হত্যাও করে। প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতার ঘটনা প্রতিদিন আমাদের সামনে আসে। রাস্তার পশু হোক বা পোষা প্রাণী, সবাইকেই নিষ্ঠুরতার সম্মুখীন হতে হয়। বেশিরভাগ শহুরে এলাকায় কুকুরদের নিষ্ঠুরতার সম্মুখীন হতে হয়। পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা সংক্রান্ত কঠোর আইন আছে, কিন্তু মানুষ তা জানে না এবং অজান্তে এমন ভুল করে এবং পরবর্তীতে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হয়. ঘোড়া, উট, ষাঁড়, গাধার মতো প্রাণী পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং প্রায়শই চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। মানুষ শুধু পশুদের ভোগান্তি সম্পর্কে অজ্ঞই নয়, তাদের ওপর আরোপিত শাস্তি সম্পর্কেও মানুষ সচেতন নয়। মালিকানা কুকুরের জন্য আইন আইপিসির ধারা ৪২৮, ৪২৯ এবং PCA আইনের ১১ ধারার অধীনে, যদি কোনও প্রাণী কোনও ব্যক্তির মালিকানাধীন হয়। এটি ৪২৮ এবং ৪২৯ ধারার অধীনে আসে। ধারা ৪২৮: কোনো প্রাণীকে হত্যা ও বিষ প্রয়োগ করলে বা তাকে পঙ্গু করে দিলে তা দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের জন্য যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ধারা ৪২৯: কোনো প্রাণীকে হত্যা, বিষ প্রয়োগ বা পঙ্গু করার জন্য যেকোন বর্ণনার যেকোন একটি মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে যা পাঁচ বছর পর্যন্ত হতে পারে, বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৮ এবং ৪২৯ ধারা অনুসারে একটি প্রাণীকে হত্যা, বিষ দেওয়া, পঙ্গু করা বা নির্যাতন করা একটি আমলযোগ্য অপরাধ। এই ধরনের কাজ দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড, বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয়। পথ কুকুরের জন্য আইন কুকুরটি যদি পথ কুকুর হয় এবং কেউ অভিযোগ করে, তাহলে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার জন্য Prevention of Cruelty to Animals Act 1960 (PCA Act, The Prevention of Cruelty to Animals Act, 1960) এর অধীনে জরিমানা বা তিন মাস শাস্তির বিধান রয়েছে। ধারা ১১, প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট, 1960 অনুসারে, কোনও প্রাণীকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ যে এটি ক্ষুধা বা তৃষ্ণার কারণে কষ্ট পায়। যদি একজন মালিক তার পোষা প্রাণীকে পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় বা আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন, 1960 এর ধারা 11(1)(h) অনুযায়ী শাস্তির জন্য দায়ী থাকবেন, এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কোনো প্রাণীকে দীর্ঘ সময় ধরে ভারী শিকল বা দড়িতে রাখা বা বেঁধে রাখা পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার আওতায় আসে এবং জরিমানা বা ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘সাজার পরিমাণ বাড়াতে আমরা একসঙ্গে বিধানসভায় প্রস্তাব রাখব। তবে তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে।’’ পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় রাজ্য প্রাণী কল্যাণ পর্ষদের কমিটি থাকলেও সেখানে কোনও বৈঠক হয় না বলে অভিযোগ করেন খোদ মন্ত্রীই। যাঁরা পশু-পাখির উপরে অত্যাচার চালাচ্ছেন, তাঁরা ‘দুষ্কৃতী’র থেকে কোনও অংশে কম নয় বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী তাপস রায়। অনেক সময়ে কুকুর-বেড়ালকে মারার খবর পেয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ ওঠে। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে।’’ তিনি জানান, রাজ্যে এ মুহূর্তে পথ-কুকুরের সংখ্যা ৭০ লক্ষ। পশুদের জন্য বর্ধমানে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বানানো হয়েছে। বিধাননগরে তৈরি হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুল্লি।
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad