নয়ডা থেকে অলোকেশ শ্রীবাস্তব
একটু আগেই বেজে ছিল সাইরেন। তারপর বোতামে চাপ। আর তারপর সব শেষ। চারিদিকে এখন ধোয়া। একটু আগেই বিষ্ফোরণের শব্দ মিলিয়ে গেছে। আর সেই শব্দের সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল যমজ টাওয়ার। ক্ষণকালের জন্য থমকে গিয়েছিল সব। শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ। তারপর দীর্ঘ ১০ বছরের আইনী লড়াই শেষ। কিন্তু, যে সমস্যা সবচেয়ে জটিল, তা হল, এই ধুলো, এই বারুদ, এই শব্দ পরিবেশের কতটা ক্ষতি করলো। কারণ, এই ক্ষতি এখন বোঝা যাবে না। যাবে কিছুদিন পর থেকেই, এমন আশংকা পরিবেশবিদদের।
টুইন টাওয়ার মাটিতে বিলীন হওয়ার আগেই শোনা যাচ্ছিল হাততালির শব্দ, আর তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে স্লোগান, ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে তোলা স্লোগান। আসলে এই টুইন টাওয়ার ছিল দূর্নীতির আকাশচুম্বি শিখর। আজ সেই শিখর লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। এক ক্ষণস্থায়ী কম্পন টের পাওয়া গেল। ঠিক যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। তারপর শুধু ধুলো। দীর্ঘ ১০ বছরের আইনি লড়াই শেষে জয় পেয়েছিল মামলাকারীরা। তাই এই জয়ের জন্যই বার বার হাততালি আর স্লোগান।
কয়েক বছরের লড়াই শেষ হল কয়েক সেকেন্ডে। কিন্তু এখন পড়ে আছে অনেক প্রশ্ন। কীভাবে গড়ে উঠেছিল এই বেয়াইনি যমজ টাওয়ার?
তবে, এই বিষ্ফোরণের সময় যে আশংকা ছিল, সেটা হল আশপাশের বাড়িগুলির কতটা ক্ষতি হবে, জানালার কাচের কী অবস্থা হবে। তবে যতটা ক্ষতির আশংকা ছিল, তা হয়নি। অবশ্য একথা বলার সময় এখনো আসেনি। এলাকাবাসীর আর একটা প্রশ্ন রয়েছে, তা হল, পুলিশ বিভাগকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোন বিষ্ফোরক এলাকায় পড়ে না থাকে।
নয়ডার পুলিশ কমিশনার জানান, মূলত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়েছে, বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে রয়েছে। তবে, এই মুহুতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান বা তা আদৌ হয়েছে কিনা তা বলা সম্ভব নয়, এটা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞরাই ধ্বংস-পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ধারণ করতে পারেন। অবশিষ্টাংশ এবং অবশিষ্ট বিস্ফোরকগুলি যদি সেখানে ফেলে রাখা হয় তবে তা মূল্যায়ন করার জন্য আমরা সাইটে যাচ্ছি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এলাকা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর যারা চলে গিয়েছিলেন বাড়ি ছেড়ে, তারা ফিরতে পারবেন, তবে সেটা সন্ধ্যা ৬.৩০ এর পর।
নয়ডার সিইও রিতু মাহেশ্বরী জানান, নিকটবর্তী হাউজিং সোসাইটিগুলির কোনও ক্ষতি হয়নি। কেবলমাত্র কিছু ধ্বংসাবশেষ রাস্তার দিকে এসেছে। আমরা এক ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পাব।
এই বিষ্ফোরণের তীব্র কম্পাঙ্কে আশ-পাশের বাড়িগুলির কতটা ক্ষতি হয়েছে, তাও দেখা হবে। সেই ক্ষতিপূরণের হয়ত ব্যবস্থা হবে, কিন্তু পরিবেশের কী হবে? কে তার ক্ষতিপূরণ করবে?
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নয়ডা-গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ের কাছে সেক্টর ৯৩এ-তে অবস্থিত এই দুটি টাওয়ার ভেঙে ফেলার প্রথম নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর সুপ্রিম কোর্ট এক বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিল এই টুইন টাওয়ার ভেঙ্গে ফেলা হবে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষ। আজ সেই দিন। এই দুটি ভবনেই মোট ৮৫০টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
এই টুইন টাওয়ার নিয়ে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয় অনেক আগে থেকেই।নয়ডা পুলিশ ২৬ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শহরের আকাশে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। আজ এই বিষ্ফোরণের আগেই এক নটিক্যাল মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে বিমান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাখা হয়েছে, ১০ টি অ্যান্টি-স্মোগ গান, দমকলের অসঙ্খ্য ইঞ্জিন, বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স। সব মিলিয়ে যেন যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।