করোনাকে ছাপিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুঃ দায় কার? পুজোর মুখে নয়া আতঙ্ক

কামড়ানোর ২-১০ দিনের মধ্যে, ডেঙ্গু বা ব্রেকবোন ডিজিজের ভাইরাসটি আক্রান্তের অন্যান্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং লালাতেও। একবার মশা একটি অসংক্রামিত ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি সংক্রামিত হয়। জানা গেছে, সংক্রামিত ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত বা অঙ্গদানের মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। তবে শহরের চিকিৎসকদের যে একটা বিষয় চিন্তায় ফেলে দিয়েছে, তা হল ডেঙ্গির নতুন উপসর্গ। সম্প্রতি প্রকাশিত ঘটনাগুলিতে দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত শিশুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে।
শম্পা দত্ত, কলকাতাঃ ভয়ে ভয়ে কেটেছে ২০২০ ও ‘২১ সালের পুজো। রাজ্যবাসীর আশা ছিল, করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায়, ২০২২ সালের পুজোটা চুটিয়ে কাটাবে। কিন্তু, সে আনন্দেও আশঙ্কা এনেছে ডেঙ্গু। যেভাবে পুজোর মুখে রাজ্য জুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তাতে ব্রাজ্যবাসীর কপালে আবার চিন্তার ভাজ। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই মুহুর্তে রাজ্যে ১৬৬০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। শনিবারে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৩৫। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। দু মাস আগে এই মরশুমে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৭৪৫ জন রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান ওই আধিকারিক।
   
বহুদিন আগে একটা ছড়া চালু ছিল—‘রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে বেচে আছি।‘ কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, দিনের মশাদের কথা। দিনের বেলা যে মশারা কামড়ায়, তারাই ডেঙ্গু ছড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত স্ত্রী এডিস প্রজাতির (Ae. aegypti বা Ae. albopictus) মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রামিত হয়। মশা যখন কোনও ব্যক্তিকে তাদের রক্তে উপস্থিত ডেঙ্গু ভাইরাস সহ কামড়ায়, তখন এটি সংক্রামিত হয়, এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সরাসরি এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, এডিস মশাগুলি বেশিরভাগ সূর্যোদয়ের দুই ঘন্টা পরে এবং সূর্যাস্তের কয়েক ঘন্টা আগে সক্রিয় থাকে, তাই, তারা প্রাথমিকভাবে দিনের বেলা কামড়ায় - যদিও তারা ভালভাবে আলোকিত এলাকায় রাতে কামড়াতে পারে। এডিস এজিপ্টি মশাগুলি পিছন থেকে এগিয়ে এসে গোড়ালি এবং কনুইতে কামড়ায়। কামড়ানোর ২-১০ দিনের মধ্যে, ভাইরাসটি আক্রান্তের অন্যান্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং লালাতেও। একবার মশা একটি অসংক্রামিত ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি সংক্রামিত হয়। জানা গেছে, সংক্রামিত ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত বা অঙ্গদানের মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে।
রাজ্য সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে। রাজ্যের সমস্ত পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে সতর্ক করা হয়েছে। নজর রাখতে বলা হয়েছে এলাকার কেউ জ্বরে আক্রান্ত কিনা। একইসঙ্গে এলাকায় যাতে জল না জমে সে ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুরসভাগুলি যাতে এলাকার প্রতিটি জায়গায় মশানাশক ছড়ায়, সে ব্যাপারে পুরসভাকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এর আগে রাজ্য স্বাস্থ্য-দপ্তরের কাছে অভিযোগ এসেছিল, করোনার সময় থেকে বেশ কিছু পুর-এলাকায় মশা-নিয়ন্ত্রণের দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে না। পাশাপাশি পুরসভা যাতে পুজোর সময় এলাকাবাসীকে ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক করে সেটাও দেখা হচ্ছে। 
 সাধারণভাবে পরিলক্ষিত ডেঙ্গুর উপসর্গগুলি নিম্নরূপ: 
 হঠাৎ শুরু খুব উচ্চ জ্বর
 তীব্র মাথা ব্যাথা সাধারণত চোখের পিছনে
 পেশী এবং জয়েন্টগুলিতে তীব্র ব্যথা
 ত্বকে ফুসকুড়ি 
 ক্লান্তি 
বমি 
হালকা রক্তপাত।
 

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad