ভালো নেই প্রয়াত কবি বিজন বিশ্বাসের স্ত্রী-সন্তানেরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: একসময় স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই কাটছিলো দিন। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎই মৃত্যুর কাছে পরাজয় স্বীকার করেন কবি বিজন বিশ্বাস। সেই সাথে এক নিমিষেই ভেঙে যায় একটি পরিবারের তিল তিল করে গড়ে ওঠা সব স্বপ্ন। বাগেরহাটের চিতলমালীতে কবি বিজন বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে তার পরিবার। অর্থের অভাবে তার সন্তানদের পড়াশুনা বন্ধ হতে বসেছে। 
২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি সাহিত্য সম্মেলনে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিজন বিশ্বাস এবং সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে কয়েকদিন পর তিনি মারা যান। প্রয়াত এ কবি চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
কবি বিজন বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনা বিশ্বাস জানান,স্বামীর মৃত্যুর পর এখন সংসার চালানোর কোন সংগতি নেই। স্বামীর মৃত্যুর সময় তার মানিব্যাগে মাত্র তিন হাজার টাকা রেখে গেছেন। এছাড়া কোন অর্থ জমা রেখে যাননি। তার দুটি মেয়ের পড়াশানার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন অসহায় বিধবা অঞ্জনা । বড় মেয়ে বৃষ্টি বিশ্বাস খুলনার একটি কলেজে অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়াশুনা করছেন। ছোট মেয়ে আরাধ্যা বিশ্বাস ৪র্থ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন। 
স্বামী বিজন বিশ্বাস সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি বাগেরহাট জেলা সদরে আইনজীবি হিসাবে কাজ করতেন। এতে যেটা রোজগার হত সেটা দিয়ে সংসার চালাতেন। তারা জেলা শহরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। এছাড়া স্বামীর ভিটে বাড়িতে তাদের কোন বসবাসের ঘর নেই। দুই মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে রাত কাটছে তাদের। সামনে দুই মেয়েকে নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবেন সে চিন্তায় হতাশায় ভুগছেন হতভাগ্য মা । এ অবস্থায় তিনি সরকার এবং বিত্তবানদের কাছে ০১৬৫০০৫৬৬০২ নম্বরে যোগাযোগের মাধ্যমে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট লেখক এবং সাংবাদিক পংকজ মণ্ডল জানান, বিজন বিশ্বাস বাগেরহাট জেলা গাংচিল সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন। 
কবি লেখকরা সাধারণত সংসারের চিন্তা-ধারার বাইরের জগতে ডুবে থাকেন। যে কারণে তিনি কোন অর্থ সম্পদ পরিবারের জন্য জমা করেননি। ফলে তার মৃত্যুতে স্ত্রী-সন্তানরা সার্বিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন। ওই পরিবারের পাশে আমাদের এগিয়ে আসা উচিৎ। আমার জানামতে তার প্রকাশিত গ্রন্থ, নুনজল কষ্টরা( কাব্য), পঙ্গু বর্ণের মিছিল, ( কাব্য), রং নম্বর( উপন্যাস) প্রভৃতি। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হিমাংশু মণ্ডল জানান, বিজন বিশ্বাস একজন ভালো কবি ছিলেন। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির কথা উঠে এসছে তার লেখনীতে। তার মৃত্যুতুতে স্ত্রী-সন্তানরা খুবই মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। 
এই মুহূর্তে তার স্ত্রী-সন্তানদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন জানান, আমাদের পরিষদে বিধবা ভাতাসহ অন্যান্য যে সেবা রয়েছে সেগুলো প্রদান করা হবে। সেই সাথে কবি বিজন বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুতে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানান তিনি। এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, বিজন বিশ্বাসের পরিবার থেকে আবেদন করলে তার স্ত্রী-সন্তানদের জন্য সরকারী বিধি মোতাবেক যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad