তারকেশ্বরঃ “দূর্নীতির আসল আখড়া কোথায়? এই বাংলায়? না দিল্লিতে?” ধিক্কার সমাবেশে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য

মৈনাক পালঃ “দূর্নীতির আসল আখড়া কোথায়? এই বাংলায়? না দিল্লিতে? দিল্লির তো কোন নীতিই নেই, সবটাই দূর্নীতি। এমনকি ইদানিং টুকলিও করছে। টেনি তো কন্যাশ্রী, যুবশ্রী থেকে ‘শ্রী’ টুকলি করে ‘পিএমশ্রী’ বিশ্ববিদ্যালয় করছেন।“ শনিবার তারকেশ্বরে তৃণমূল আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এভাবেই বৃহস্পতিবারের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি স্থানীয় বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়ের প্রশংসা করে বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্ম ওই নক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ করবে। ওরা মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে যে অপরাধ করেছে, তার ক্ষমা নেই। আর শুভেন্দু, দিলীপ ঘোষেরা এখন দুধে সোনা খুঁজছেন।“
শৈবতীর্থ তারকেশ্বর এক শান্ত শহর। অপরাধ বা রাজনৈতিক দিক থেকে এখানে কোন ‘ঝামেলা হয় না। এলাকাবাসীরা শান্তিতেই বসবাস করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিজেপির নবান্ন অভিযান কর্মসূচির অংগ হিসাবে যে ঘটনা ঘটলো, তাতে তারকেশ্বরের বাসিন্দাদের এক বিরাট অংশের মানুষ কিছুটা ভীত ও অনেকটাই ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার তারকেশ্বর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় যেখানে শুভেন্দু অধিকারী সভা করেছিলেন, সেই এলাকাটি দুধপুকুরের জল ঢেলে পরিষ্কার করেন মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। শনিবার সেই স্থলে পালটা সভা করে তৃণমূল। 
তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়,   বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে বিজেপির গুন্ডাবাহিনী দ্বারা সাধারণ মানুষ পুলিশ কর্মী এবং সাংবাদিকদের ওপর বর্বররোচিত আক্রমণ করার প্রতিবাদে এই ধিক্কার সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব, বিধায়ক, স্থানীয় নেতৃবর্গ আর হাজার হাজার তৃণমূল সমর্থক। এই সভায় ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, সিঙ্গুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্না, এলাকার বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়, ধনিয়াখালির বিধায়িকা অসীমা পাত্র, হরিপালের বিধায়িকা করবী মান্না, উত্তরপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব, হুগলি জেলা পরিষদের সভাপতি, তারকেষ্বর পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান উত্তম কুন্ডু, ভাইস-চেয়ারম্যান প্রবীর চন্দ্র সহ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন সামন্ত, কাউন্সিলরগণ, আরামবাগ, গোঘাট, পুড়সুরার তৃণমূল নেতারা সহ তারকেশ্বরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এই প্রতিবাদ সভায় বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায় বলেন, “সারের দাম ১৭০০ টাকা বস্তা, জিনিষপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। ওই মহিলারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার প্রতিবাদ করছিল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর মদ্যপ বাহিনী তাদের উপর নির্লজ্জ আক্রমণ চালিয়ে ওদের আহত করলো। পুলিশ, সাংবাদিক কাউকে বাদ দিল না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি আর ভবিষ্যতে এই ঘটনা ঘটলে আমাদের প্রতিবাদ আরও তীব্র হবে।“ বেচারাম মান্না এ দিনের প্রতিবাদ সভায় বামফ্রন্ট, বিজেপি ও কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “মমতা ব্যানার্জীর উন্নয়ন দেখে ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।“ তিনি এলাকায় এলাকায় তৃণমূল কর্মী ও নেতাদের মিটিং এর উপর জোর দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানান, “আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে যে কোনো রাজনৈতিক দল মিটিং-মিছিল করুক। কিন্তু, দয়া করে উস্কানীমূলক কিছু করবেন না, যাতে এলাকার শান্তি ক্ষুণ্ণ হয়।“ অন্যদিকে, বিজেপির মিছিল থেকে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় ৯ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করেছে তারকেশ্বর থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিজেপির মিছিল সহ গোটা ঘটনাটি পুলিশ ভিডিওগ্রাফি করেছিল। সেখান থেকেই মিলেছে প্রমান। অন্যদিকে, তারকেশ্বর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় যেখানে শুভেন্দু অধিকারী সভা করেছিলেন, সেই এলাকাটি দুধপুকুরের জল ঢেলে পরিষ্কার করেন মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। স্লোগান দেওয়া হয়, শুভেন্দু অধিকারী বাংলা থেকে দূর হটো।
বৃহস্পতিবার ঘটনার পর পরই এলাকার বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায় বলেছিলেন, শৈবতীর্থে ওরা যা করেছে, তা শুধু নিন্দাজনক অপরাধ নয়, তারকেশ্বরের কাছে লজ্জাজনক। মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যাওয়া মহিলাদের উপর তারা আক্রমণ চালিয়ে শৈবতীর্থকে রক্তাক্ত করেছে। ন’জন মহিলা ওদের হাতে আহত হয়েছেন।“ শুদ্ধিকরণের পর তিনি জানান, ‘‘আমাদেরকে এই কর্মসূচি নিতে বাধ্য করা হল। জেলা থেকে মাত্র হাজার ১২০০ লোক তারকেশ্বরে বিজেপির সভায় এসেছিল। তারা প্রত্যেকেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল।“


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad