রজত রায়, কলকাতাঃ ছবিটা এক থাকে, শুধু বদলে যায় প্রশাসনের সর্বোচ্চে থাকা মুখগুলো। এ যেন মনে করিয়ে দেয় বামফ্রন্ট আমলে কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেসের রাইটার্স অভিযান। সেই ছবিটাই আজ দেখবে বাংলা। এবারে বিরোধী আসনে বিজেপি আর তাদের ডাকে ‘নব রাইটার্স’ নবান্ন অভিযান। ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ স্লোগানকে সামনে রেখে বিজেপি রাজ্যের বিভিন্ন জায়াগায় যে কর্মসূচি পালন করেছিল, আজ তার পূর্ণাংগ রূপায়ন।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসেছেন হাজার হাজার বিজেপি কর্মী ও স্থানীয় নেতা। প্রস্তুত নবান্ন অভিযানের রূপরেখা। কলকাতা পুলিশের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই সাজানো হয়েছে পরিকল্পনা। অন্যদিকে প্রস্তুত প্রশাসনও। বন্ধ রাখা হচ্ছে বেশ কিছু রাস্তা, যার ফলে শহরবাসী আর একবার যানজটের শিকার হবেন।
এবারে নবান্ন অভিযানে যাতে অশান্তি না হয়, তা দেখার জন্য তৈরি কলকাতা পুলিশের এক বিশেষ শেল। নামছে মোট দু হাজার পুলিশকর্মী। দায়িত্বে থাকছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার দময়ন্তী সেন। ধর্মতলা-লালবাজার-সহ হাওড়া ব্রিজ, কলেজস্ট্রিট, মহাত্মাগান্ধি রোড ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে দায়িত্বে থাকবেন মোট ১৮ জন ডেপুটি কমিশনার, ৩২জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, ৬২জন ইন্সপেক্টর, ১২৪জন সার্জেন্ট। হাওড়া ব্রিজ ও ধর্মতলায় থাকবে দুটি বজ্র। থাকছে ব়্যাফ, সশস্ত্র পুলিশ ফোর্স-সহ সিভিক ভলান্টিয়ারদের এক বিরাট দল। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা, হাওড়া ব্রিজ, রেডরোড-সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকছে পাঁচটি জলকামান। জলকামানে যে জল ব্যবহার করা হবে, তাতে রঙ মেশানো হবে , যাতে বিক্ষুব্ধুদের সহজে শনাক্ত করা যায়। প্রস্তুতি সারা। এদিকে, আকাশে বৃষ্টির ভ্রুকুটি। সেই বৃষ্টিতে ড্রোন দিয়ে নজরদারি কতটা চালানো যাবে, বা আদৌ যাবে কিনা , তা এখন বোঝা জাচ্ছে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী ড্রোনের ব্যবহার করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
হাওড়া কমিশনারেট এলাকাতেও প্রায় আড়াই হাজার পুলিশফোর্স নবান্নকে ঘিরে সুরক্ষাবলয় গড়ে তুলবে। সাঁতরাগাছির দিক থেকে যে মিছিল আসবে সেই মিছিল নবান্নের বহুদূর আগেই আটকে দেওয়া হবে। হাওড়ার কালিবাবুর বাজার-সহ ফোরশোর রোড এবং হাওড়া ময়দান এলাকায় থাকবে ব্যারিকেড। কলকাতা থেকে মিছিলকে হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখে আটকে দেবে পুলিশ।
দুপুর বারোটা থেকে কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত, স্ট্যান্ড রোড থেকে উত্তর দিকে কিংসওয়ে মোড় পর্যন্ত যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই সময়ে বিকল্প পথ হিসেবে থাকছে কিংসওয়ে-আরআর এভিনিউ-সেন্ট্রাল এভিনিউ অথবা কিংসওয়ে-আরআর এভিনিউ-দক্ষিণ দিকের রাস্তা। যান নিয়ন্ত্রণ দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে। বিকল্প পথ হিসেবে এই সময়ে থাকছে এজেসি বোস রোড-পূর্বে এক্সাইড মোড়, এজেসি বোস রোড- উত্তর দিকে এপিসি রোড, এজেসি বোস রোড-জওহরলাল নেহরু রোড-উত্তরে সেন্ট্রাল এভিনিউ।কলকাতা পুলিশের তরফে বলা হয়েছে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত দ্বিতীয় হুগলি সেতু এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যদিকে দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত হাওড়া ব্রিজ এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া রাত আটটা পর্যন্ত শহরে মালবাহী গাড়ি ঢোকা নিষিদ্ধ বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বিজেপি বাইরের রাজ্য থেকে দুষ্কৃতি আনতে পারে, এই গোপন সংবাদ পাওয়ার পর বহিরাগতরা কোন কোন হোটেলে এসে উঠছে, সেই তথ্যও জোগাড় করছে পুলিশ। বাইরে থেকে 'লোক' এনে গন্ডগোল পাকানোর ছক ভেঙে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আসানসোল–দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।
এই ছকের বিষয়ে আসানসোল–দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অভিষেক মোদী বলেন, ‘ভিন রাজ্য থেকে দুষ্কৃতী নিয়ে এসে রাজ্যে হিংসা ছড়াতে পারে বলে সতর্কবার্তা রয়েছে। আমরাও চূড়ান্তভাবে তৎপর রয়েছি। ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে আসা গাড়িগুলির উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।’