হুগলিঃ অভিযোগ পুরসভার জলের অপচয় করছেন বহু ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিক’, ক্ষতি করছেন ভূগর্ভস্থ জলস্তরের

নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলিঃ হুগলি জেলার পৌরা এলাকার একশ্রেণির ‘অসচেতন’ নাগরিক পানীয় জলের অপচয় করছেন বলে বার বার অভিযোগ উঠছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করে শহরবাসীদের সাবধান করা হলেও, অবস্থার পরিবর্তন হয়নি বলে জানা গেছে। হুগলি জেলার ১২ টি পুরসভার প্রায় প্রত্যেকটি থেকেই এই ধরণের অভিযোগ কম-বেশি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, এভাবে জলের অপচয় চলতে থাকলে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারে অচিরেই টান পড়বে, ভুগতে হবে সবাইকেই। একশ্রেণির সচেতন নাগরিকের দাওয়াই, জলের ওপর ট্যাক্স বসালেই সবাই ঠিক হয়ে যাবে। বিনা পয়সার জিনিষ, তাই অপচয়ের চূড়ান্ত করছে।
International Journal of Current Research (IJCR) জানিয়েছে যে হুগলি জেলার বিভিন্ন ব্লক যেমন পান্ডুয়া বলাগড়, সিঙ্গুর, চন্ডিতলা ২, হরিপাল, চণ্ডীতলা ১ এবং তারকেশ্বরের প্রাক-বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে গড় স্ট্যাটিক ভূগর্ভস্থ জলের স্তর (এমবিজিএল)দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। আসলে, জলের অপচয় নিয়ে মাথাব্যাথা নেই একধরণের ‘অচেতন’ নগরিকের। সচেতন ব্যাক্তি তাদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে, তাদের উলটে গালাগাল হজম করতে হয়। দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি উপায়ে পুর এলাকার জলের অপচয় হচ্ছে। জল নেওয়ার পর বা স্নান করার পর রাস্তার কলের ট্যাপগুলিকে বন্ধ না করেই চলে যাওয়া, সেই ঘটনা চোখে দেখেও, অন্য কেউ সেটা বন্ধ করার জন্য এগিয়ে না আসা। বাড়ির নীচে রাখা ট্যাঙ্ক ভর্তি করে, জল ছাদের ট্যাঙ্কে তোলার পর কল বন্ধ না করা। ট্যাঙ্ক উপচে পড়লেও, পাইপ লাইনের ট্যাপ খুলেই রেখে দেওয়া। এই ভাবে প্রতিদিন শহরে লক্ষ লক্ষ গ্যালন জলের অপচয় হয়। কোথাও কোথাও কমে যায় জলের চাপ। একশ্রেণির সুবিধাবাদী, মর্জিমাফিক চলা নাগরিকের দায়িত্বহীন কাজের ফল ভোগ করে সারা শহরের মানুষ।
জেলার তারকেশ্বর, আরামবাগ, বৈদ্যবাটি, চাপদানী, কোন্নগর, উত্তরপাড়া পুর এলাকার চিত্রটা প্রায় একই। এই অপচয়ের জন্য এলাকার সচেতন বাসিন্দারা দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিক ও পুরসভা উভয়কেই দায়ী করেছেন। তাদের বক্তব্য, পুরসভার উচিত, যারা এই ভাবে বাড়ির জলের লাইনের জল অপচয় করছে, তাদের চিহ্ণিত করে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। ফাইনের ব্যবস্থা থাকলে, তা আদায় করা। টাকা ফেলতে হলেই নষ্ট করার বিলাসিতা ঘুচে যাবে। কারণ, ওরা সচেতনভাবেই জল অপচয় করে, তাই এসব স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে সরকারের উচিত জলের উপর কর বসানো। পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন, বাড়িতে বাড়িতে সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে একশ্রেণির মানুষ যেমন ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ক্ষতি করছে, তেমনি আর এক শ্রেণির নাগরিক, বাড়ির পাম্পের বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে নিচ্ছে পুরসভার জল। সেই জলে ট্যাঙ্ক ভর্তি করার পর খোলাই থাকছে কলের ট্যাপ। জলের প্রয়োজন না থাকায় কয়েক ঘন্টা ধরে জল পড়ে পড়ে অপচয় হতে থাকে, দেখেও দেখেনা কেউ। অন্যদিকে, ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ক্ষেত্রে আরামবাগ ব্লকের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে সতর্ক করেছে রাজ্য জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতর। তারপরও এই শহরে বাড়ির ট্যাঙ্ক উপচে জল পড়ে যায় নিত্যদিন। গরুর গা ধোয়ানো, চাষের জমিতে সেচ, পুকুর ভরাটের কাজেও ব্যবহার হচ্ছে পানীয় জল।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad