উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় গতকাল রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ২৫ জনের মৃত্যু হয়, নিখোজ অনেকে।
কাল ছিল মহালয়া। তাই শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা করে করোতোয়া নদী পেরিয়ে প্রায় বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা প্রায় ৭০ জন নারী-শিশু-পুরুষ বোদেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন।
জানা গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই উল্টে যায় নৌকাটি। ডুবে মারা যান ২৫ জন।
মৃত ২২ জন হলেন, বোদার আড়াই বছরের প্রিয়ন্তো, দেবিগঞ্জের বাসিন্দা দীপঙ্কর (৩), দেবিগঞ্জের বাসিন্দা ৩ বছর বয়সী কোলি রানী, মারওয়া ফুতকিবাড়ি গ্রামের ১৪ বছর বয়সী তারা রানী, দেবিগঞ্জের ২৪ বছর বয়সী লক্ষ্মী রানী, দেবিগঞ্জের লক্ষ্মী রানী (২৫), বোদা থেকে ২৭, অমল চন্দ্র (৩৫), দেবিগঞ্জ থেকে, সিমলা রানী (৩৫), বোদা থেকে খুশি রানী (৩৬), শাফালাতা রানী, বোদা থেকে হাসান আলী (৫০), বোদা থেকে হাসান আলী (৫২)। ৫৫ বছর বয়সী প্রমীলা রানী, দেবিগঞ্জ থেকে, ফাল্গুনী রানী( ৫৫) বোদা থেকে, ধোনবালা (৫৭) থেকে বোদা থেকে ৫৭ বছর বয়সী সুমিত্রা রানী, বোদা থেকে ৬০ বছর বয়সী সোনেকা রানী, বোদা থেকে প্রমীলা রানী (৭০) এবং বোদা থেকে উশোশি, শ্রেয়সী ও বিলাস, দেবিগঞ্জ থেকে তনুশ্রী এবং শাকোয়া থেকে প্রীতিয়ন্তি। আরও দুই শিশু ও ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের পরিচয় পাওয়া যায় নি। হাসান আলী ছাড়া বাকিরা সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে জানা গেছে।
এদিকে, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “ নৌকাটিতে জায়গা হচ্ছিল না, তাও জোর করে অনেকে উঠে পড়েন। নৌকা টলমল করছিল। মাঝনদীতে উলটে যায়। চাপা পড়ে যায় লোকজন। কেউ কেউ সাঁতরে উঠে আসে। শিশুরা পারেনি। আর ক’দিন পরেই মা আসছেন, তারই আবাহনে সবাই যাচ্ছিলেন বোদেশ্বরী মন্দিরে। কিন্তু নিয়তির এমনই টান, অনেকেই হারিয়ে গেলেন চিরতরে। আনন্দ-মুখর শিশুরা তলিয়ে গেল করোতোয়ার জলে।"
বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার গ্রামে এখন শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন, মৃতের কাছের মানুষগুলো। অনেকের পুজোর কেনাকাটা সারা। এক অদ্ভুত কষ্ট চারিদিকে। পাঁচপীর এলাকার রঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘আমার মা, বাবাকে নিয়ে বোদেশ্বরী পীঠ মন্দিরে মহালয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। নৌকা ডুবে আমার মা মারা যান। বাবা সাঁতরে পারে উঠেছেন। ‘ শুধু রঞ্জিতবাবু নন, স্বজনহারা এই গ্রামের মানুষদের কাছে এখন সব হারিয়ে গেছে, পুজোর আনন্দ শত যোজন দূরে।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী নৌকাটিতে ছিল। ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।“
তিনি জানান, “কেউ নিখোঁজ থাকলে তাদের স্বজনদের যোগাযোগের জন্য মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। “