গুজরাতঃ সেতু সংস্কারের ক্ষেত্রে দুর্নীতি,না কি আসন্ন ভোটের জন্য ‘সব জেনেশুনে’ খুলে দেওয়া হয় সেতুটি?

অলোকেশ শ্রীবাস্তব, ভয়েস ৯, নতুন দিল্লিঃ গুজরাতের মোরবির ঝুলন্ত সেতু দুর্ঘটনার কারণ কি? এই প্রশ্নটাই এই মুহুর্তে বড় হয়ে উঠেছে। শুধ তাই নয়, আর কয়েকদিনের মধ্যেই গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধী দল কংগ্রেস তো বটেই, প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে নেমে আম আদমী পার্টিও এই মুহুর্তে গুজরাতের বিজেপি সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। 
সোজা কথায় বলা যেতে পারে, গুজরাতের এই মর্মান্তিক সেতু দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু এই মুহুর্তে রাজনৈতিক উত্তাপকে বাড়িয়ে তুলেছে। আর তার আচ পৌছে গেছে, পশ্চিমবঙ্গেও। সেখানেও শুরু হয়েছে তরজা। কাটমানি অভিযোগে নাজেহাল ওই রাজ্যের তৃণমূল এখন পালটা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে।
গুজরাতের এই মোরবি ঝুলন্ত সেতুটি শুধ স্থানীয় মানুষজনের কাছেই নয়, বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের কাছেও বিশেষ দ্ররষ্টব্যস্থল ছিল। তাই দীপাবলি ও ছট পুজো উপলক্ষে গতকাল সেতুতে উঠে আনন্দে মেতেছিলেন কয়েকশো মানুষ। তারা ভাবেননি, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে। 
 দুর্ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরেই, উঠে এসেছে, উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কীভাবে সেতুটি আবার খুলে দেওয়া হলো জনগণের ব্যবহারের জন্য? এই প্রশ্নটা এখন ভাবাচ্ছে সকলকে। 
মোরবিতে সেতু দুর্ঘটনা সম্পর্কে পৌরসভার মুখ্য আধিকারিক সন্দীপ সিং জালা জানিয়েছিলেন, সেতুটি প্রস্তুত ছিল এবং পৌরসভার যাচাই-বাছাই ছাড়াই সেতুটি চালু করা হয়েছিল, তাই দায়ী সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা বলেন, বেসরকারি সংস্থাটি সেতুটি সংস্কার করার পর যাচাই-বাছাইয়ের সার্টিফিকেট, বহন ক্ষমতা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড বাজেয়াপ্ত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেতুর কাজে গাফিলতি বেরিয়ে এলে দায়ী সকলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য আধিকারিক।
স্বভাবতইঃ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে পৌরসভা কি অন্ধকারে ছিল, পৌর কর্তৃপক্ষ যদি জেনেই থাকে, তাহলে তারা দুর্ঘটনার আগে কথাটা জানায় নি কেন? উপর থেকে কি কোনো চাপ ছিল? সাধারণের প্রশ্ন। আর চাপ যদি থাকে, কী সেই চাপ? ভোটের আগে বাসিন্দাদের দীপাবলীর উপহার? কারণ ৭ মাস বন্ধ থাকার পর দিন ৫ আগে, সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। 
জনগণের প্রশ্ন, ৭ মাস ধরে কী সত্যিই সংষ্কারের কাজ হয়েছিল, না কি এর পিছনে অন্য কারণ। জনগণ প্রশ্নটা না তুললেও কংগ্রেস দাবি তুলেছে - তবে কি গুজরাটেও সেতু সংস্কারের ক্ষেত্রে কাটমানি নেওয়া হয়েছে? যার জেরে সেতু সংস্কারের ক্ষেত্রে নানা গলদ ছিল। তা সত্বেও নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো করে সেতু জনতার জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৮৮০ সালে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিজ তৈরির সব সামগ্রী এসেছিল ব্রিটেন থেকে। ১৪০ বছর পুরনো ওই ব্রিজটির দৈর্ঘ ৭৬৫ ফিট। এরকম একটি ব্রিজে কীভাবে ওই বিপুল সংখ্যাক মানুষ উঠে পড়ল, পুলিস সেইসময় কী করছিল তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে।
স্থানীয় মানুষজন অভিযোগ করেছেন, পৌরসভা যদি সবকিছু জানতো, তবে আগাম জানায় নি কেন? একসঙ্গে অতো মানুষ সেতুর উপর উঠে পড়লো, কোথাও কি প্রশাসনের নজরে আসে নি? ঘটনা ঘটার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই, এক আধিকারিক জানিয়েছিলেন, সেতুর উপর দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ওজন সহ্য করতে না পেরে এটি ভেঙে পড়ে। যখন সেতু দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কী, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়নি, তার আগেই বলে দেওয়া হলো, সেতুটি ভার বহরে অক্ষম ছিল। 
প্রশ্ন হলো, সেতুটির সঠিক ভার বহন ক্ষমতা কত ছিল? সেটা কি সেতুর প্রবেশ পথে লেখা ছিল? মানুষ জনদের জানানো হয়েছিল, কত জন মানুষ সেতুতে একসঙ্গে উঠতে পারে? ১৪০ বছরেরে যে সেতুটি সবেমাত্র ‘সারানো হয়েছে, তার ভার বহন নিয়ে কোনো নজরদারি ছিল কি? একটা দুর্ঘটনা ভোটের আগে অনেক প্রশ্ন তুলেছে। 
স্থানীয় মানুষদের বক্তব্য, এখন মানুষের মৃত্যু, রাজনীতির তরজার জন্ম দেয়। ঝকমকে গুজরাতের অন্তরালে রয়েছে, আর এক গুজরাত। সেই দিকে সরকার কি এবার একবার তাকাবে?

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad