শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়াঃ যেমন দেখেছি তাঁরে... পর্ব ৯

আশ্রম ও মহন্ত পদ নিয়ে শ্রীশ্রী১০৮ স্বামী জানকীদাসজী শ্রীবাবাজী মহারাজকে যা বলেছিলেন… 



 “বাড়ি ও জমি বিক্রির যেমন দালাল থাকে, সাধুদের মধ্যে এই রকম মহন্তাই পদবী বেচা-কেনার দালালও দেখতে পাই। তাই অবাক হয়ে ভাবি এই সবের মধ্যে ঈশ্বরপ্রাপ্তির পথ কোথায়?”” – শ্রী ১০৮ স্বামী জানকীদাসজী মহারাজ 

 আশ্রম সম্পর্কে শ্রী ১০৮ স্বামী জানকীদাসজী শ্রীবাবাজী মহারাজজীকে বলেছিলেন – আশ্রম করার আসল উদ্দেশ্য হল অধ্যাত্ম চিন্তার নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত সুযোগ পাওয়া। এই উদ্দেশ্যে যদি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং আশ্রমিকরা যদি বাস্তবরূপ আচরণের মধ্য দিয়ে এই উদ্দেশ্যকে কার্যে রূপান্তরিত করে, তাহলে তাদের নিজেদের এবং বাইরের লোকেরও কল্যাণ অবশ্যম্ভাবি হবে। কিন্তু উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে এবং আচরণাদির পথ ছেড়ে দিলে, কেবল আশ্রম নামটাই থাকবে, কাজের কাজ কিছু হবে না।“ 

 আশ্রমে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও শ্রীদাদাজী মহারাজ শ্রীবাবাজীকে বলেছিলেন- “আমি আশ্রমে বিগ্রহ স্থাপন করে যদি, নিজে ওই বিগ্রহের সেবা না করি, বা অন্যের সাহায্যে বা অন্য কাউওকে বেতন দিয়ে সেবা করাই, তাহলে আমার চিত্তশুদ্ধি হবে বলে মনে হয় না। 
টাকা নিয়ে যিনি সেবা করবেন, তার যদি চিত্তশুদ্ধির উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে ওই সেবার দ্বারা তিনি জীবিকা সংগ্রহ করতে পারবেন, চিত্তশুদ্ধি হবে না। অনেকে বিগ্রহ স্থাপন করে ঠিকমতো সেবা না করতে পারায় মানসিক উদ্বেগের শিকার হন। এতে হিতে বিপরীত হয়। এর চেয়ে বিগ্রহ স্থাপন না করে সাধন ভজন করাই ভালো। 
এই চিত্তশুদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে যদি কোন আশ্রমে কোনো সাধু আসেন, আর ওই আশ্রমের অন্য সাধু যদি চিত্তশুদ্ধির দিকে লক্ষ্য না রেখে কেবল অর্থ-যশ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিগ্রহ রাখেন, তাহলে ওই দুই শ্রেণির সাধুদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। ক্রমে, এ থেকে কলহ ও শেষে আশ্রম খন্ড-বিখন্ড হয়ে যায়। "

একবার মহন্ত পদ নিয়ে তিনি শ্রীবাবাজী মহারাজকে বলেছিলেন –“ আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতায় বহু আশ্রম ও পদবীর এই পরিণতিই দেখছি। বাড়ি ও জমি বিক্রির যেমন দালাল থাকে, সাধুদের মধ্যে এই রকম মহন্তাই পদবী বেচা-কেনার দালালও দেখতে পাই। তাই অবাক হয়ে ভাবি এই সবের মধ্যে ঈশ্বরপ্রাপ্তির পথ কোথায়?” 
বহুদিন পর শ্রীবাবাজী মহারাজ রচিত শ্রী ১০৮ স্বামী জানকীদাসজীর জীবন চরিত পড়তে গিয়ে এই কথাগুলো পড়েছিলাম। ভাবছিলাম, ওই জ্ঞানী মহাপুরুষের যদি এই অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, আমরা তো তুচ্ছ মানুষ। আমরা শুধু বাইরে থেকে দেখে ভাবি, সাধুরাই হয়তো সুখী, তারা ঈশ্বর দর্শনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। নিরালা আশ্রমে বসে তারা সাধন-ভজনের একটা সুন্দর পরিমন্ডল তৈরি করেছেন। 
জানি, সবাই সমান নয়, সবাই ঈশ্বরের পথে যেতে পারেন না। জ্ঞান না থেকেও অনেকে ‘জ্ঞানী’ ভাব দেখান। নিজে পালন না করেও অন্যকে পালন করার শিক্ষা দেন। এটা যে নিজেই নিজেকে ঠকানো, এই সত্যটাও তারা বোঝেন না। 

যাইহোক, ১৩ চৈত্র আমরা দীক্ষা নিলাম, মন্ত্রের মাধ্যমে যুক্ত হলাম গুরুর মধ্য দিয়ে পরমপিতার সঙ্গে। এক অনাস্বাদিত আনন্দে ভরে গিয়েছিল মন। আশ্রমের সবুজ আমবাগান, দূরের নীল আকাশের সীমানা আর নতুনগ্রামের মাটি সব মিশে গেল আমার সঙ্গে। মনে হল, আজ থেকে এই তপোবন আশ্রমে আমি আর অতিথি নই। আমারও অধিকার রয়েছে আশ্রমে আসার। 
হায়! এখন মনে হয়, বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক কিছু বদলে গেছে। তিনি বলতেন, “আমি তো আছি।“ তিনি আছেন, সত্যি আছেন। তাকে নিজের মনের মধ্যে সারাক্ষণ রাখতে গেলে সাধন করতে হয়। নিয়মিত জপ করতে হয়, সৎ পথে থাকতে হয়, অন্যায়কে অন্যায় বলতে হয়। শ্রীবাবাজী আমাকে বলে গিয়েছিলেন, “শরণাগত হও।“
আগামিকাল

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad