অবসরের টাকা নিয়ে সন্তানদের দ্বন্দ্ব, অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে রইলো পিতার মৃতদেহ

বিশ্বজিৎ মন্ডল, ভয়েস ৯, ঢাকাঃ সময়টা রোববার (২৫ নভেম্বর) বিকেল চারটার। ব্যাম্বুলেন্সে পড়ে আছে পিতার মৃতদেহ। সন্তানেরা থাকলেও দেখার নাই কেউ! কারন, অবসরের টাকার জন্য ভাইবোনে দ্বন্দ্বে এম্বুলেন্সে পড়ে রইলো পিতার লাশ। ঘটনাটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে। 
মৃত্যুর পর এক দিন কেটে গেছে। বাড়ির সামনেই অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে আছে বাবার লাশ। দাফন দূরে থাক, লাশ নামানো হয়নি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্যও। কারণ, বাবার লাশ গাড়িতে রেখেই, অবসরকালীন ভাতার টাকা নিয়ে সন্তানেরা লিপ্ত হয়েছেন কলহে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। 
 মৃত ব্যক্তি মনির আহমদ (৬৫) একটি তেল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত শনিবার(২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার সময় তাঁর মৃত্যু হয়। রোববার বিকেল গড়িয়ে গেলেও তাঁর দাফন হয়নি। সোমবার ব্যাংক না খোলা পর্যন্ত দাফন হবে না বলে জানা গেছে। নিহতের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছেন। বাবার অবসরকালীন ভাতার টাকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বলে জানা গেছে। 
 রোববার বিকেল চারটার সময় যায়, মনির আহমদের লাশ বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্সে রাখা আছে। বাড়িতে শোকের বালাই নেই। সেখানে ভাই-বোন ও ভাগনেরা ঝগড়াঝাঁটিতে ব্যস্ত। ভাইদের দাবি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৌশলে ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেন তাঁদের এক বোন। এ ঘটনায় এলাকায় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিহত মনির আহমদের প্রতিবেশী আমেনা বেগম বলেন, কী জমানা এল। 
মানুষ মারা গেলে লোকজন কোরআন ও দোয়াদরুদ পড়ে এবং কান্নাকাটি করে। কিন্তু লোকটা মারা গেলেও ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শোকের চিহ্ন নেই। দাফনও করতে দিল না! তবে তাঁর ছেলেরা বলছেন, সোমবার ব্যাংক খুললে টাকার হিসাব শেষে তাঁরা বাবার লাশ দাফন করবেন। মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কিছুদিন আগে আমার বোন বেবী আক্তার আমার বাবাকে হাসপাতালে থেরাপি দেওয়ার নাম করে ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা উঠিয়ে নেন। আমরা বাবা মারা যাওয়ার পরই টাকা তুলে ফেলার খবর পাই। তিনি আরও বলেন, আমার ছোট ভাই সৌদি আরব থেকে আসবেন। 
পাশাপাশি সোমবার ব্যাংক খুললে ব্যাংকে গিয়ে হিসাব পেলে বাবার দাফন করা হবে। তবে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বোন বেবী আক্তার। তিনি বলেন, আমার বাবা কোনো টাকা আমাকে দেননি। আমি কোনো টাকাও ব্যাংক থেকে তুলিনি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। 
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাহাব উদ্দিন বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় মনির আহমদের লাশ বাড়িতে আনা হলেও টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সমস্যা চলছে। মনির আহমদের আরেক ছেলে বিদেশে আছেন, তিনিও দেশে আসবেন বলে শুনেছি। কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad