শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়াঃ যেমন দেখেছি তাঁরে..পর্ব ১৫




সংবাদ ভয়েস ৯ এর বয়স এখন ৭ মাস। শ্রীবাবাজী মহারাজের আশির্বাদে আর পাঠকদের ভালোবাসায় এই ৭ মাসে সংবাদ ভয়েস ৯ এর পাঠক-সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। আগামী বছরের প্রথম ২ মাসের মধ্যে তা দেড় লক্ষ অতিক্রম করবে বলে আমাদের আশা। এই অল্প সময়ে শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ১২ টি দেশের প্রায় ২৫ হাজার প্রবাসী বাঙালি পাঠক সংবাদ ভয়েস ৯ নিয়মিত দেখেন। শ্রীবাবাজী মহারাজকে নিয়ে এই লেখাটি শুধু ভক্তদের কাছে নয়, বিশ্বের প্রবাসী বাঙালিদের কাছে ভালো লাগছে জেনে, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। বিশ্ব-বাঙালির কাছে দায়বদ্ধ সংবাদ ভয়েস ৯ শ্রীবাবাজীর আশির্বাদ আর পাঠকদের ভালোবাসায় ধন্য।








সময় বড় পেটুক, সব খেয়ে নেয়। খেতে পারে না কেবল সৎ কর্মকে, যে কর্ম করা হয় দশের মঙ্গলের জন্য

তারক ঘোষ 
পর্ব ১৫

 শ্রীদাদাজী মহারাজ অর্থাৎ শ্রীশ্রী স্বামী জানকীদাস কাঠিয়াবাবাজী মহারাজ বলেছিলেন –“লাইগ্যা থাকলে মাইগ্যা খায় না।– “ছাড়িয়া দিলে তো ছাড়িয়াই দিলে।“ তিনি বলতে চেয়েছিলেন লেগে থাকলে তা বৃথা যায় না, সে সাধন হোক, শিক্ষা হোক কিংবা যে কোনো কাজই হোক। শ্রীবাবাজী বলতেন – সময়ে সব হয়। সময় না হলে কিছুই হয় না। 
সত্যিই সময় সবচেয়ে বড় বিচারক। সময় আমাদের রূপ-যৌবন চুরি করে আমাদের বুঝিয়ে দেয়, ‘কিছুই স্থায়ী নয়, সব কিছুই বদলায়। আজ যেটাকে ঠিক বলে ভাবছিস, দেখবি একসময় মনে হবে সেটা ঠিক নয়, আজ রক্তের তেজে আর দম্ভে যেটাকে মনে করছিস পূণ্য, কাল সেটা দেখবি পাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে টাকার পাহাড় বানাচ্ছিস, দেখবি সময়ে সেই টাকার পাহাড়ও কাজে আসবে না, একসময় তা অন্যের হয়ে যাবে। শুধু একটা জিনিষ থেকে যাবে, সেটা হলো সৎ কর্ম, তোর সব কিছু অন্যের হয়ে যাবে। 
তোর বাড়ি-গাড়ি-জমি-ইলেকট্রিক বিলের মালিকানা বদলে যাবে, তোর টাকার মালিক অন্য কেউ হবে। তোর নাম একসময় হারিয়ে যাবে। বাড়ির দেওয়ালে তোর ছবি ঢেকে যাবে ধুলোতে। এমন সময় আসবে, তোর সেই ছবি টেনে ফেলে দিয়ে সেখানে টাঙানো হবে অন্য কারো ছবি। তোর উত্তরপুরুষ ভুলে যাবে পূর্বপুরুষদের নামটাও। এটাই জগতের নিয়ম। কিন্তু, তুই যদি কিছু সৃষ্টি করে যাস, তোরই থাকবে, তোর লেখা গান, কবিতা, সিনেমা, গ্রন্থ –সব তোর নামেই থাকবে। তুই মানুষের মঙ্গলের জন্য যা কিছু করে যাবি, সব তোরই থাকবে। মানুষ তোর কথাই বলবে।“ 


সময় এই শিক্ষাটাই আমাদের দেয়। কী শিক্ষা জানেন? মৃত্যুর পর ‘বেঁচে’ থাকার শিক্ষা। সব মানুষ তো জীবিত অবস্থায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। আর মৃত্যুর পর যারা ‘বেঁচে’ থাকার চেষ্টা করে, তারাই প্রকৃত বেঁচে থাকে। আর এই ‘বাঁচা’ বাঁচতে গেলে করতে হয় নিষ্কাম কর্ম। 
কবির কথায় –
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবনী পরে।
সকলের তরে সকলে আমরা, 
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।“ 
শ্রীবাবাজী বলতেন, কর্ম ছাড়তে নেই। কর্মের মধ্যেই গৃহী মানুষ খুঁজে পায় তার ইপ্সিত ধন। কিন্তু, কোন কর্ম আমরা করবো? যে কর্ম করলে আমাদের মনে কখনো এই প্রশ্ন আসবে না, ‘কেন করলাম!’- সেই কর্ম করবো। যে কর্ম করলে ভয়ে-আশঙ্কায় আমাদের ঘুম আসবে না – সেই কর্ম করবো না। 


আমি দেখেছি গুরুসেবার মধ্যেও সকাম ও নিষ্কাম কর্ম থাকে। কেউ গুরুসেবা করেন, গুরুর কাছ থেকে পার্থিব কিছু পাওয়ার জন্য। সেই গুরুসেবা- সকাম গুরুসেবা। আর যে গুরুসেবার মধ্যে, তাকে ছাড়া সেবকের আর কিছু চাওয়ার থাকে না, সেটাই নিষ্কাম গুরুসেবা। 
শ্রীবাবাজী মহারাজ নিষ্কাম গুরুসেবার এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তিনি গুরুর কাছ থেকে আশ্রমের পরবর্তী দাবিদার হতে চাননি। তার আশ্রমের অধিকার-অর্থ-সম্মান-পদ কোনো কিছুই চাননি। 
একেবারে খালি হাতে চলে এসেছিলেন নতুনগ্রামে। তার মাথার উপর ছিল খোলা আকাশ আর গুরুদেব, পায়ের নীচে ছিল মাটি। আর মনে ছিল লক্ষ্যপূরণের এক তীব্র ইচ্ছা। মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন সাধনার সংকল্প। 


শ্রীবাবাজী মহারাজ কর্মযোগের মাধ্যমে নতুনগ্রামকে এক ভিন্ন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাই ওই গ্রামে তার আগমন মানুষকে বেঁচে থাকা ও বেঁচে ওঠার মধ্যে পার্থক্যটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল।
 শ্রীবাবাজী সন্ধ্যায় বা সকালে মানুষের কাছে তুলে ধরতেন ধর্মের জটিল তত্ব, কিন্তু সহজ করে, সময়োপযোগী করে। তার সেই প্রবচন আমি বারবার শুনেছি। এখনো শুনি ভিডিওতে। কী সহজ ভাষায়, আধুনিক করে ধর্মের জটিল তত্বকে তিনি শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরতেন, আমি অবাক হয়ে যাই। আমার ধৈর্য একসময় কম ছিল, বাবার সেই পাঠের মাঝে মাঝে উঠে বাইরে চলে যেতাম। তারপর বেশ কয়েকবার আশ্রমে যাওয়ার পর মনের স্থিরতা এলো। তিনি যতক্ষণ পাঠে থাকতেন, কোথাও যেতে পারতাম না। 

এটাই বোধহয় শ্রীদাদাজীর কথায়–‘লেগে থাকা’। শ্রীদাদাজী মহারাজের প্রসঙ্গে শ্রীবাবাজী লিখছেন-‘শ্রীভগবানকে নিজের হৃদয়ে রেখেস ব কর্ম তার দ্বারাই করা হচ্ছে, আমি তার হাতের যন্ত্র মাত্র- প্রত্যেক কর্মে অন্তরে এরূপ ঈশ্বরের কর্ম অর্পণের ভাব রেখে সব কর্মে ঈশ্বরস্থ থেকে  নিশ্চিন্তভাবে কর্তব্য করে যাওয়া হলো ঈশ্বরের প্রনিধান। ঈশ্বরকে ভুলে কর্ম করলে, ঈশ্বরে কর্ম সমর্পণ হয় না।“



আগামিকাল

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad