ধর্মান্তরিত সন্তানের লাশ গ্রহণ করেননি পিতা, দাফন করলেন সহপাঠীরা!

ভয়েস ৯,ঢাকা ব্যুরো: ঢাকা বিজ্ঞান কলেজের মেধাবী ছাত্র সাঈদের লাশ তার পিতা গ্রহণ না করায় সহপাঠীদের সহযোগিতায় বাড্ডা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কক্সবাজারের চকরিয়া থানা ও কমলাপুর থানা পুলিশের সহায়তায় সহপাঠীরা তার লাশ গ্রহণ করে শুক্রবার বাদ মাগরিব বিজ্ঞান কলেজ মাঠে জানাজার পর রাতেই বাড্ডা কবরস্থানে দাফন করা হয়। 
ধর্মান্তরিত হওয়ায় কৈশোরে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সাঈদ আবদুল্লাহ (২২)। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। কক্সবাজারের চকরিয়া গ্রামার স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকায় গিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ছাত্র পড়িয়ে সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে অপেক্ষায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়ে অবসান হলো তার জীবন সংগ্রামের। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। রেলওয়ে থানা (ঢাকা-জিআরপি) জানায়, সাঈদ মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন পার হচ্ছিলেন। কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনে কাটা পড়ে সাঈদ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। 
পরে জিআরপি থানার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায়। পশ্চিম কোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সইফুল হক কে বলেন, সাঈদ আবদুল্লাহর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের হেতালিয়া পাড়ায়। তার নাম জুয়েল শীল পিতা বিধু কুমার শীল। সে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবার তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং তার সঙ্গে সম্পর্কছেদ করে। সাঈদ এসএসসি পাস করে ঢাকায় গিয়ে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়।


তিনি জানান, সাঈদের মৃত্যুর খবর শুনে তার বাবা-মা'কে লাশ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে এলাকাবাসীর পক্ষে আমরা গিয়েছিলাম ওর বাবা তার লাশ গ্রহণ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এদিকে সাঈদ আবদুল্লাহর সহপাঠী ও বন্ধু আবদুল্লাহ নোমান বলেন, সাঈদ অনেক কষ্ট করে চলত। কিন্তু কারো কাছে কিছু খুলে বলত না। পরিবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও সাঈদ তার মায়ের সঙ্গে গোপনে দেখা করত। আমাকে সে বলেছিল, এইচএসসির রেজাল্ট দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই বাড়িতে গিয়ে গোপনে মায়ের সঙ্গে আবার দেখা করবে। তার সে আশা আর পূরণ হলো না। 
চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সাঈদের পিতা বিধু কুমার শীল ছেলের লাশ গ্রহণ করবেন না বলে লিখিত দিয়েছেন। বিষয়টি তেজগাঁও থানাকে অবগত করা হয়েছে। তেজগাঁও থানার ওসি অপুর্ব হাসান বলেন, সাঈদের লাশ তার বাবা গ্রহণ করবেন না মর্মে চকরিয়া থানার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজের সহপাঠীদের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad