বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুশক্তির তাৎপর্য্য


ই গুরুশক্তির তাৎপর্য্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করলে আমরা দেখতে পাই-- গুরুশক্তি আর আলোকশক্তির মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। 
একটু বিশ্লেষণ করা যাক-- এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে নিত্য প্রকাশ দুই বস্তুর-- জীব ও জগৎ। একটা চৈতন্যময অন্যটা জড়ময়। জীবের অজ্ঞান বা অন্ধকার দূরীভূত হয় গুরুর সংস্পর্শে আর জগতের অন্ধকার বিনাশ হয আলোর প্রকাশে।
 গুরুতত্ত্ব: - গুরু শব্দের অর্থ--'গু' মানে অন্ধকার আর 'রু' মানে নাশক (বা দূর করা) অর্থাৎ যিনি তার ছাত্রের অজ্ঞান বা অন্ধকার বা অবিদ্যা নাশ করেন তিনি ই হলেন গুরু। গুরু হলেন চৈতন্যের প্রকাশ। 

 আলোকতত্ত্ব:- আধুনিক বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটা একটা শক্তি এবং যার প্রকাশে অন্ধকার নাশ হয। এটা জড় জগতের প্রকাশ। এই আলোর প্রধান উত্স-- আদিত্য বা সূর্য যার থেকে জীব বা জগতের প্রকাশ । সূর্য কি-- আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় এটা একটা নক্ষত্র যার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে অনন্তর 'ফিউশন' আর 'ফিশন' এর প্রক্রিযা।
 এর জন্য নিউক্লিয়ার বিভাজনের জ্ঞান থাকা আবশ্যক । এটা একটা নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া যেখানে পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন ঘটে ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয। ভারী পদার্থের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ীয ফিশন একটা তাপ উত্পাদী বিক্রিয়া যা বিপুল পরিমাণে শক্তি নির্গত করে। সুতরাং সূর্য হল এই জগতের সমস্ত শক্তির উত্স যা জগতকে তাপ ও আলো বিকিরণ করে। 
আলোর প্রভাবে সমস্ত অন্ধকার দূরীভূত হয় । 


 গুরু শক্তি কি -- 'ভিদ্যতে হৃদয়গ্রন্থিশ্চিতে সর্বসংশযঃ'। হৃদয়গ্রন্থি বা অবিদ্যাজনিত জ্ঞানকে বিনষ্ট করে সর্ব সংশয় ছিন্ন করা। অর্থাত্ জীবের সমস্ত রকম অবিদ্যা অজ্ঞান নাশ করে আলোকে স্থাপন করা । আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় অন্ধকারের প্রতীক কি-- ব্লাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর । 
কৃষ্ণ গহ্বর কি-- এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে আলো পর্যন্ত বের হতে পারে না বা আলোকের প্রভাব এখানে প্রকাশিত হতে পারে না। এটা উৎপন্ন হয় খুব বেশি পরিমাণ ঘনত্ব বিশিষ্ট ভর থেকে। তাই কৃষ্ণ গহ্বর থেকে কোনো আলোক বিন্দুই ফিরে আসতে পারে না । 
অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোনো বস্তু যার মহাকর্ষীয বলের প্রভাবে এমনকি আলোক তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে। 


আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দুটি কৃষ্ণ গহ্বর এক হলে একটির ভর অপরটিকে শোষণ করে আরো শক্তিশালী হযে ওঠে । এই অন্ধকার থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি তা হলো ' হোয়াইট হোল 'বা' 'শ্বেত বিবর' যেটা আধুনিক বিজ্ঞানীদের কল্পনাপ্রসূত। 
মুক্তির উপায় জানতে হলে স্টিফেন হকিং এর 'বিকিরণ ' বা 'রেডিয়েশন' সমন্ধে জানা প্রযোজন। অনন্তর বিবর্তনের ফলে হযত ঐ কৃষ্ণ গহ্বর আবার নক্ষত্রের রূপ ফিরে পেতে পারে । 
আলো আর অন্ধকারের পাশাপাশি গুরু ও অসদ্ গুরুকে জানা উচিত । অসদ্ গুরু কে-- যিনি নিজেকে প্রজ্ঞানীর মোড়কে ঢেকে ছাত্রকে বা শিষ্যকে অজ্ঞান বা অবিদ্যার পথে ঠেলে দেন।
 অসদ্ গুরুর লক্ষন কি -- যিনি অন্তঃসারশূন্য কিন্তু গীতার ভাষায় ' প্রজ্ঞাবাদাঙ্শ্চ ভাসষে ' অথচ প্রজ্ঞা ব্যাক্তিদের মত আচরণ করেন।
 অসদ্ গুরুর পরিণাম কি -- শ্রুতির পরিভাষায় ' অন্ধেনৈব নীযমানা যথান্ধা।' অর্থাত্ অন্ধ কতৃক চালিত অপর অন্ধ যেরূপ ভ্রমণ করেন সেইরূপ অবস্থা প্রাপ্ত হয অর্থাৎ জীব বা শিষ্যকে কোনো মুক্তির পথ দেখাতে পারেন না । 
অসদ্ গুরুর শিষ্যের গতি কি -- হকিন্সের বিকিরণ তত্ত্বের মত অর্থাত্ চুরাশি লক্ষ যোনি ভোগ করে মনুষ্য জীবন লাভ করতে হবে । 
শ্রী রামকৃষ্ণদেবের ভাষায - অসদ গুরুর সঙ্গ করলে, সেই গুরুর ও ক্ষতি আর শিষ্যের ও ক্ষতি।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad