ফার্মেসি বা ওষুধের ব্যবসা মূলতঃ দুইরকম, ওষুধের খুচরো ব্যবসা ও পাইকারি ব্যবসা। দুইধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রেই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, নিতে হয় প্রয়োজনীয় লাইসেন্স। এখানে সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। যারা ফার্মেসী নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তাদের ক্ষেত্রেও অনেক সূযোগ।
ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন
খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রে একক ওষুধের দোকান বা স্ট্যান্ড অ্যালোন ফার্মেসিই আমাদের দেশে সব থেকে বেশি জনপ্রিয়। এই ধরনের ব্যবসা সাধারণত হয় প্রপরাইটারশিপ বা পার্টনারশিপ। তবে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবেও ওষুধের ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন করা যেতে পারে।
ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন
ব্যবসা শুরু করার জন্য জরুরি হল জিএসটি রেজিস্ট্রেশন। নিয়ম অনুযায়ী যেকোনও ব্যবসা যাদের বার্ষিক টার্ন ওভার ২০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি তাদের জিএসটি রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। আপনার ব্যবসা সেই সীমা অতিক্রম করলেই জিএসটি নম্বর সংগ্রহ করে জিএসটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ফার্মেসি লাইসেন্স বা ড্রাগ লাইসেন্স
ফার্মেসি ব্যবসা বা ওষুধের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ফার্মেসি লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। পশ্চিমবঙ্গে এই লাইসেন্স ইস্যু করে পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীনে থাকা ডিরেক্টোরেট অফ ড্রাগ কন্ট্রোল।
নিয়মাবলী
ড্রাগস্ অ্যান্ড কসমেটিকস্ অ্যাক্ট ১৯৪০ অনুসারে সমস্তরকমের ওষুধ বিক্রেতা বা ফার্মেসির ব্যবসায় যুক্ত যেকনোও ব্যবসায়ীকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে ড্রাগ লাইসেন্স নিতে হবে। অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক বা ইউনানি যেকোনও ওষুধের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
ড্রাগ লাইসেন্সের ধরন
সরকারের তরফ থেকে তিন ধরনের ড্রাগ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়ে থাকে – উত্পাদন লাইসেন্স, বিক্রির লাইসেন্স ও ধার নেওয়ার লাইসেন্স বা লোন লাইসেন্স।
ম্যানুফ্যাকচারিং লাইসেন্স বা উত্পাদন লাইসেন্স
একটি নির্দিষ্ট জায়াগায় অ্যালোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরির জন্য এই লাইসেন্স দেওয়া হয়। এই জায়গাটি চিহ্নিত শিল্পাঞ্চলে হওয়া বাধ্যতামূলক।
সেলস্ লাইসেন্স বা বিক্রির লাইসেন্স
দুধরনের বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হয়, খুচরো বিক্রির লাইসেন্স আর পাইকারি বিক্রির লাইসেন্স। ফার্মেসি দোকান খুলতে খুচরো ব্যবসার লাইসেন্স নিতে হবে। এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসির ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা থাকতে হবে। মালিকের নিজের ফার্মেসির ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা না থাকলে, এরকম ডিগ্রি রয়েছে এমন কাউকে নিয়োগ করতে হবে। ওষুধের পাইকারি ব্যবসা করতে চাইলে নিতে হবে পাইকারি ফার্মেসি লাইসেন্স।
লোন লাইসেন্স
অন্য লাইসেন্সের আওতায় থাকা উত্পাদন ইউনিট ব্যবহার করতে চায় এমন ফার্মেসি ব্যবসাকে দেওয়া হয় লোন লাইসেন্স। অর্থাত্ যে ওষুধ ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ওষুধ উত্পাদনের কারখানা নেই, অন্য কোনও ওষুধ কারখানায় ওষুধ প্রস্তুত করতে চান তাদের এই লাইসেন্স নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, আপনি যদি একাধিক রাজ্যে ফার্মেসি ব্যবসা করতে চান তাহলে প্রতিটি রাজ্য থেকে আলাদা আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো
পশ্চিমবঙ্গে ফার্মেসি ব্যবসা (উত্পাদন ব্যবসা ও বিক্রি উভয় ক্ষেত্রেই) করতে হলে ১০৮ বর্গ ফুট (কার্পেট এরিয়া) একটি জায়গা দরকার, সিলিংয়ের উচ্চতা ন্যূনতম ৮ ফুট ২ ইঞ্চি। জায়গাটি হতে হবে ইটের তৈরি ও প্লাস্টার করা মেঝে এবং তার সাথে কংক্রিটের ছাদ থাকতে হবে। প্রবেশ পথ দুটি পৃথক অথচ একইরকম ভাগে ভাগ করা থাকতে হবে। প্রবেশ পথ কোনও বাসস্থানের প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
ওষুধ পরিষ্কার, ঠান্ডা ও হাওয়া চলাচল করতে পারে এমন জায়গায় রাখতে হবে। ভ্যাক্সিন রাখতে হবে ফ্রিজারে, অর্থাত্ রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, পরিকাতঠামো এমন না হলে লাইসেন্স নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় নথি
ফার্মেসি ব্যবসার লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে নিম্নলিখিত ডকুমেন্ট বা নথিগুলো দিতে হবে।
প্রোফর্মা অনুযায়ী নন্-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (যদি থাকে)।
ট্রেড লাইসেন্স যাতে ব্যবসার ধরন উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।
ব্যবসার জায়গার প্রমাণপত্র (ট্যাক্স বিল/ ভাড়ার প্রমাণ)।
ভাড়ার চুক্তিপত্র ও ভাড়ার রসিদ (ভাড়া করা জায়গা হলে)।
ভাড়ার ঘরের ক্ষেত্রে মালিকের অনুমতি পত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট)।
রেজিস্টার্ড পার্টনারশিপ ডিড ও ফার্ম রেজিস্ট্রেশনের রসিদ (পার্টনারশিপ ফার্মেসি ব্যবসার ক্ষেত্রে)।
মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন (প্রাইভেট লিমিটেড ফার্মেসি ব্যবসার ক্ষেত্রে)।
বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের নামের তালিকা ও বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত (প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে)।
ব্যবসার স্থান ও তার আশেপাশের স্কেচ ম্যাপ (সিএডি মডেল)।
ফার্মাসিস্টের নিয়োগ পত্র ও তার স্বীকৃতি পত্র এবং তার নাম (প্রোফর্মা অনুযায়ী)।
প্যান কার্ড ও বাতিল করা চেকের পাতা।
ডিরেক্টরের সচিত্র পরিচয় পত্র ও ঠিকানার প্রমানপত্র।
পাইকারি ফার্মেসি ব্যবসার জন্য সি.পি.আই-এর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও তার বিস্তারিত তথ্য।
ফার্মাসিস্ট/সিপিআই-র রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ও পুনর্নবীকরণ সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়)।
প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ফার্মাসিস্ট/সিপিআই-র শপথ গ্রহণের অ্যাফিডেভিট।
ফার্মাসিস্টের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট।
প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আবেদনকারীর (প্রপরাইটার/পার্টনার/ডিরেক্টর) শপথ গ্রহণের অ্যাফিডেভিট (প্রোফর্মা অনুযায়ী)।
সৌজন্যঃ khatabook.com