২১ জুলাইঃ বিরোধীদের সমালোচনার পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বার্তা দিলেন মমতা




রজত সেন, কলকাতাঃ
বিরোধী দলগুলির সমালোচনার পাশাপাশি দলীয় কর্মী, নেতা, বিধায়ক ও সাংসদদের একটা বার্তা এদিন ধর্মতলার ২১ জুলাই সমাবেশ থেকে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। দলের অন্দরে নয়, লক্ষ মানুষের প্রকাশ্য সমাবেশে এই বার্তা দিয়ে নেত্রী বুঝিয়ে দিলেন, তিনি সাধরণ মানুষের সঙ্গেই আছেন। দলের কর্মী, নেতা, বিধায়ক ও সাংসদদের কী কর্তব্য হওয়া উচিত তা স্মরণ করিয়ে  দিয়ে মমতা বলেন, নেতারা এমন কিছু করবেন না যা দলের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করে। 

উল্লেখ্য, বিগত কয়েকমাস ধরে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার নানাভাবে আদালতের কাছে সমালোচিত হয়েছে এক শ্রেণীর নেতাদের কিছু কাজের জন্য। মমতা সেই প্রসংগ না টেনেও বুঝিয়ে দিলেন, দল এসব মেনে নেবে না। তিনি মনে করিয়ে দেন, ব্যাক্তি নয়, দলই আগে। তাই দলের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাজ যেন নেতারা না করেন।  
পাশাপাশি, ২০২৪ সালের দিকে তাকিয়ে মানুষের পাশে থাকার এবং মানুষকে নিয়ে চলার জন্য নেতা-কর্মীদের বেশ কিছু নির্দেশ দিলেন।




মমতা ব্যানার্জী এদিন বলেন,আমি দেখতে চাই, কর্মীরা সাইকেলে ঘুরবে, বিধায়করা হেটে যাবে আর সাংসদরা রিক্সায় চেপে মানুষের কাছে যাবে। মনে রাখবেন, মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে। কর্মী ও নেতাদের সতর্ক করে বলেন, বেশ কিছু অভিযোগ আসছে। দলের জন্য জোর করে টাকা তুলবেন না। মনে রাখবেন, ব্যাক্তির চেয়ে দল বড়ো।

 এদিন, বৃষ্টি আর রোদের খেলার মধ্য দিয়েই পালিত হলো ২১ জুলাই সমাবেশ কর্মসূচি। অভিষেক বানার্জীর পরে মঞ্চে আসেন বিশিষ্ট গায়ক নচিকেতা। তিনি গানে গানে বলে ওঠেন, "তুমি আসবে বলেই সন্ত্রাস গুটিয়ে নিয়েছে থাবা। তুমি আসবে বলেই দেশটা এখন গুজরাট হয়ে যায়নি।" 

 এরপর বক্তব্য রাখেন মমতা। উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই বৃষ্টি যখন আপনাদের সরাতে পারেনি, তখন ২০২৪ সালে আপনাদের সাহায্যে এই বৃষ্টি বিজেপিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, করোনার জন্য আমরা গত ২ বছর সভা করতে পারিনি। এই ২ বছরে আমরা অনেককে হারিয়েছি। তিনি তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিজেপি সব জায়গায় সরকার ভাঙ্গছে, এটাই ওদের কাজ। কিন্তু, এখানে পারেনি। তৃণমূল কংংগ্রেস থাকলে লক্ষীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, স্বাস্থসাথী সহ অনেক কিছুই পাবেন। তিনি বলেন, কর্মীদের উচিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করা। তিনি মনে করিয়ে দেন, সারা ভারতে যেখানে বেকারী বাড়ছে, রাজ্যে কমছে। মনে রাখবেন, রাজ্য শিল্প ও কৃষিকে নিয়ে এগোবে। প্রছুর কর্মসংস্থান হবে। রাজ্যে বিনিয়োগ বাড়ছে।

 মমতার মতো, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী বলেন, “নেতাদের চাটুকারী করে পঞ্চায়েতের টিকিট পাওয়া যাবে না।“ এভাবেই অভিষেক ব্যানার্জী বুঝিয়ে দিলেন এই দল ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে। তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এবার পথে নামুন, মানুষকে নিয়েই পঞ্চায়েত জিততে হবে। আর, ২০২৪ এ আমরা সর্বভারতীয় দল হিসাবেই লড়বো। একশ্রেণির নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, নেতাদের হতে হবে কর্মীদের মতো। ২১ শুধুমাত্র একটা আবেগ নয়, ২১ মানে মানুষের প্রত্যাশা। আজকের ২১ এ নতুন করে শপথ নিতে হবে, নিজের খাওয়ার জায়গা এই দল নয়। তৃণমূল করতে হলে মমতার আদর্শে করতে হবে। 

মমতা এদিন সিপিএম ও বিজেপি দলের সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, ২০২৪ বিজেপির কাছে সহজ হবে না। তিনি ও তার দল যে বিজেপিকে সহজে জিততে দেবেন না, সেটা বুঝিয়ে দিয়ে বলেন, এই সরকার শুধু কয়েকটি কাজ জানে – ইডি, সিবিআইদের তৃণমূলের পিছনে লাগানো, রাজ্যের সরকার ভাঙ্গা আর মুড়ি-মুড়কির উপর জিএসটি চাপানো। 

সম্প্রতি নিত্য-প্রয়োজনীয় কিছু জিনিষের উপর জিএসটি চাপানোর সমালোচনা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, বিজেপি এবার মুড়িতেও জিএসটি বসিয়েছে। বিজেপির বন্ধুরা কি মুড়ি খাবেন না? মিষ্টি, চিড়ে,দই, লস্যি,বাতাসা সবেতেই জিএসটি। তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সব জিনিষের মূল্য বাড়ছে। গ্যাস, ডিজেল, পেট্রোল। আর কমছে টাকার দাম। একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিচ্ছে। কোল ইন্ডিয়া বন্ধ। এখন, ওরা টোপ দিচ্ছে অগ্নিপথের। সেনাবাহিনীকে বঞ্চিত করে ঘুরপথে ক্যাডার তৈরি? রাজ্য থেকে একাধিক ট্যাক্স তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র, কিন্তু আমাদের কী দেয়? বহু টাকা আমাদের পাওনা। দিচ্ছে না। এদিনের সমাবেশে তিনি বলেন, 'সিপিএম তাদের পার্টি কাগজের সাংবাদিকদের স্ত্রীদের শিক্ষকতার চাকরি দিয়েছিল। আমরা যদি ভুল করি, নিশ্চয় সেটা শুধরে নেবো। রাজ্যে এখন শিক্ষকদের জন্য ১৭০০০ চাকরি রেডি আছে। মমতা ব্যানার্জী এদিনের সমাবেশে বলেন, আমরা জাত দেখে চাকরি দিই না। যারা চাকরি পাবনে তারা নিজেদের যোগ্যতাতেই পাবেন।
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad