একসময় তার ঝুলিতে ছিল কয়েকটা তুলি আর একরাশ স্বপ্ন, আর আজ সেখানে জীবনে সাতরং

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ একটা সময় তার ঝুলিতে ছিল একরাশ স্বপ্ন, আর হাতে গুটিকয়েক তুলি আর রঙ। সবাই ঘুমিয়ে স্বপ্ন দে্খত যখন ওর স্বপ্ন ওকে ঘুমাতে দিত না। ওকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতো। সেই স্বপ্নে বিভোর মানুষটার হাতের তুলি রঙ এ সেজে ঘুরে বেড়াতো ক্যানভাসের সাদা অলিগলিতে। একসময় মূক স্বপ্নরা বাংময় হয়ে উঠতো তার তুলির টানে। তিনি মলয় ঘোষ। নেশায় চিত্রকর। 




তার ঠিকানা তারকেশ্বর, কিন্তু তার চিত্রকলা ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে। এখন তার সেই ঝুলিতে সাতরং, যে রঙ এ জীবন হেসে ওঠে, সেজে ওঠে অপরূপা হয়ে, সেই অধরা স্বপ্ন এখন তার ঝুলিতে পূর্ণতা পেয়েছে। অসংখ্য দেশি-বিদেশি শংসাপত্র হয়ে শোভা পাচ্ছে।
শিল্পীর জীবনের সার্থকতা তার সৃষ্টিতে। কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে তাকে ছুঁয়ে যায় দারিদ্রের চোরা স্রোত। বাবা জয়দেব ঘোষ ও মা মঙ্গলা দেবী অসুস্থ। এটা এক লড়াই শিল্পীর সামনে। সব কষ্ট, সব চিন্তা ছবি হয়ে হেসে ওঠে যখন, বাবা মা ও তাতে হেসে ওঠেন।মঁপাসার ‘দি লাস্ট লিফ’ গল্পের মতো এক সুতীব্র ইচ্ছাশক্তি সমগ্র সংসারটাকেই নতুন করে বাঁচিয়ে তোলে।
ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছারও যে একটা শক্তি আছে, তা প্রমান করেছেন মলয়বাবু। আইসক্রিমের কাঠির উপর মনীষীদের ছবি একে তিনি নাম তুলেছেন ইন্টারন্যাশানাল বুক অব রেকর্ডসে।
দুটি আইস্ক্রিম কাঠির একটিতে আছে ইন্দিরা গান্ধী, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, জওহরলাল নেহরু ও মহাত্মা গান্ধী আর অন্যটিতে আছে শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদামণি ও বিবেকানন্দ। এই ছবি আঁকতে তার সময় লেগেছিল মাত্র ৩৫ মিনিট। ইন্টারন্যাশানাল বুক অব রেকর্ডসে এটাই এখনো পর্যন্ত কম সময়ে আঁকা ছবি। ২০২০ সালের ১৪ আগস্ট তিনি ইন্টারন্যাশানাল বুক অব রেকর্ডসে নাম তোলেন। দিল্লিতে তাকে সম্মানিত করা হয়। 
তার হাতের তুলি যেমন বিশ্রাম নেয়নি, তেমনি তার জয়যাত্রাও। এ জয়, শিল্পের জয়। এ জয়, গ্রামের মেঠো পথ ছাড়িয়ে সম্মানের সরনী বেয়ে শিল্পীকে পৌঁছে দেয় সৃষ্টির সাফল্যে। ২০১৮ সালে তিনি শিল্পকলা প্রদর্শনীতে আর্ট অব কালার্স সংস্থার দ্বারা স্পেশাল মেরিট এওয়ার্ডস এ সম্মানীত হন। ২০২০ সালে লাভ করেন মাস্টার এওয়ার্ড ও জুরি এওয়ার্ড। মাত্র ২৫ মিনিটে তালপাতার উপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষুদ্রতম ছবি এঁকে তিনি নাম তোলেন ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে।
এটা একটা লড়াই। পদকের জন্য নয়, সার্টিফিকেটের জন্য নয়, শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা আর প্রমান করা জীবন শুধু ছুরি-কাঁচি-লোহা-লক্কর আর যুদ্ধের জন্য নয়। জীবনের একটা নান্দনিক দিক আছে। মানুষ যখন অর্থ আর ক্ষমতার মদে মত্ত, যখন সাহিত্য আর শিল্প মানেই সময় আর জীবনের অপচয়, তখন মলয়বাবুর তুলিতে জীবনের প্রকৃত মানে ফুটে ওঠে। তার ছবি যেন বলে ওঠে – জীবন যখন বিস্বাদ লাগবে, বেচে থাকার প্রকৃত মানে জানতে চাইবে, যখন মনে হবে, জীবনে মানে কী – সেদিন একবার মুখ ফেরাও শিল্পের দিকে। তুলির টানে খুঁজে পাবে জীবনের সাত রঙ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad