এই পৃথিবী কি আবার একটা বিশ্বযুদ্ধ দেখবে? আসন্ন কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?

বিশেষ প্রতিনিধিঃ কোথাও যুদ্ধ চলছে, কোথাও যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কোথাও চলছে গৃহযুদ্ধ। সবমিলিয়ে এই বিশ্ব আবার অশান্তির আগুনে পুড়তে বসেছে। একাধিক দেশ ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধে। একদিকে করোনার মতো ভাইরাসের সঙ্গে গত দু বছর লড়াই চালাতে গিয়ে ভেঙ্গে পড়ছে অর্থিনীতি, বাড়ছে বে-রোজগার, গরীবী। এই মুহূর্তে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বিশ্বের অনেক দেশেই মন্দা নিয়ে এসেছে। মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। মানুষের চাকরি হারানোর ঝুঁকি বেড়েছে। বলা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মন্দা ধাক্কা খাবে আমেরিকা-সহ বিশ্বের একাধিক দেশে। অন্যদিকে পেশী-শক্তির আষ্ফালন দেখাচ্ছে রাশিয়া, ইউক্রেন, চীন, তাইওয়ান, ইরান, ইজ্রায়েল। এ সবের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সত্যিই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব? 

দীর্ঘ লড়াই চলেছে রাশিয়া-ইউক্রেনে। থামার লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেন আক্রমণ করে। দু'দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত যুদ্ধ চলছে। বহুবার পরমাণু হামলার কথা উঠেছে। তাই সংশয় যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই, ইউক্রেনের বহু শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক শহর এখন রাশিয়ার দখলে।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনেও যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখানে দুই দেশ একে অপরের ওপর মিসাইল আক্রমণ চালাচ্ছে। প্রতিন মারা জাচ্ছে সামরিক ও অসামরিক মানুষ। গাজার একটি আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি রকেট হামলা চালানো হয়। গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর ইরানও সতর্ক করেছে। ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিলিস্তিনিরা একা নয়। আমরা তাদের সাথে আছি এবং জেরুজালেমকে মুক্ত করার জন্য কাজ করছি। অর্থাৎ ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের যুদ্ধে আশপাশের অনেক দেশও ভাগ হয়ে যাবে। এর প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বেও।
অন্যদিকে, চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে ক্রমশঃ উত্তাপ বাড়ছে। তাই ওয়ানের আকাশে উড়ছে চীনের বোমারু বিমান। তাইওয়ানের আকাশ-পথ এড়িয়ে চলছে বহু উড়ান সংস্থা। একটা টানটান উত্তেজনা। চীন ও তাইওয়ানে যুদ্ধ হলে আমেরিকার অবস্থান কী হবে তা নিয়ে ভাবিত গোটা বিশ্ব। যদি আমেরিকা চীনকে আক্রমণ করে, তাহলে এশিয়া মহাদেশের একটা বিরাট অংশে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানে আবারও যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি: আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার বিতর্কিত এলাকা নাগোর্নো-কারবাখকে কেন্দ্র করে আবারও যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর আগেও দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে পরপর ছয় মাস দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত প্রায় ছয় মাস স্থায়ী হয়। এ সময়ে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। এর পর রাশিয়ার নির্দেশে দুই দেশ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এমন পরিস্থিতিতে যদি আবার দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধে, তাহলে আবার তাতে আরও অনেক দেশও জড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে, সব মিলিয়ে এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকা এখন পাখির চোখ। আর যুদ্ধ হলে সেটা কি হবে পারমানবিক যুদ্ধ, এই আশঙ্কটা কিন্তু তলে তলে বাড়ছে।
এ ব্যাপারে, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং অবসরপ্রাপ্ত ভাইস চিফ, এয়ার মার্শাল আর সি বাজপেয়ী একটি সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন "এটা সত্য যে, সারা বিশ্বেই অশান্তি চলছে। অনেক দেশের মধ্যে বিরোধ এখন যুদ্ধের দিকে ঙ্গেগোচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হতে পারে চীন ও তাইওয়ানের। চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকবে না। এই লড়াইয়ে সামিল হবে আমেরিকাও। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের দুই মহাশক্তির সংঘর্ষ হলে তার প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বে। সেক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাও থাকতে পারে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad