হঠাৎ তরুণ-তরুণীদের মাথার চুল প্রচুর পরিমানে উঠতে শুরু করায় চিন্তিত যুব ও তরুণ সম্প্রদায়

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সম্প্রতি দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ‘হেয়ার স্পেশালিস্ট’দের কাছে। অনেকে ইউ-টিউব খুলে চুল ওঠা সংক্রান্ত নানা ভিডিও দেখছেন আর নিজেদের মাথার দিকে তাকিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও এই সমস্যা ক্রমশঃ প্রকট হয়ে পড়ছে। প্রথমে অনেকে এই প্রচুর চুল পড়ার জন্য জেনেটিক কারণকে দায়ী করেছিলেন, পরে পরিবেশ দূষণকে ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে। কিন্তু বহু চুল বিশেষজ্ঞও এর সঠিক কারণ খুজে পাচ্ছেন না। চুল ওঠা রোধ করার নানা শ্যাম্পু, সিরাম, মেডিকেল তেল মেখে উপকারের পরিবর্তে আরও চুল পড়তে শুরু করেছে, এরকম অভিযোগ প্রচুর পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞান বলে, চুলের ফলিকল জীবন্ত কোষ দিয়ে তৈরি যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একজন মানুষের মাথার ত্বকে প্রায় ১০০,০০০ থেকে ১৫০,০ চুল থাকে। মানুষের চুল এক মাসে ০.৫ ইঞ্চি হারে বৃদ্ধি পায়। মানুষের চুল বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়। প্রথমত, ভ্রূণের চুল (লানুগো চুল নামেও পরিচিত) গর্ভের অভ্যন্তরে শিশুর মাথায় তৈরি হয়ে কয়েক মাস পরে পড়ে যায়। চুল পড়া একটি সার্বজনীন ঘটনা সত্ত্বেও, ভারতে এই সমস্যাটা বেড়ে চলেছে। এক সময় পশ্চিমের দেশগুলিতে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যেত। ২০-এর দশকের গোড়ার দিকে যুবকদের চুল পড়ার প্রাথমিক লক্ষণ গুলি ধরা পড়ে। একইভাবে অকাল ধূসর এবং টাক পড়াও পুরুষ ও মহিলা উভয়ের সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অটো-ইমিউন রোগের মাধ্যমে চুল পড়াও ভারতে খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। উচ্চ দূষণের মাত্রা মহানগরগুলিতেও চুলের উপর প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও, অনাক্রম্যতা কোষগুলি তাদের নিজস্ব শরীরের কোষগুলিকে আক্রমণ করতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাটিকে একটি অটো-ইমিউন ডিজিজ বলে অভিহিত করেছেন। পরিবেশগত কারণগুলি চুল পাতলা করতে এবং চুল পড়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশগত কারণগুলি, যেমন দূষণ, ধুলো, শুষ্ক আবহাওয়া, ভেজা আবহাওয়া সবই চুল পড়া এবং চুল পড়ার কারণ হতে পারে। ভারতের মতো দেশে, যেখানে দূষণের মাত্রা বেশি, সেখানে চুলের সমস্যা বেশি দেখা যায়। দূষণের ফলে চুল পড়ার কারণ হতে পারে, এবং বিশেষত ভারতের মতো দেশে এটি চুল পড়ার সমস্যাগুলির অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বাতাসে দূষণের মধ্যে ধূলিকণা রয়েছে, যেমন পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০, যা আসলে চুলের চেয়ে সূক্ষ্ম। পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৯৫% চুলের ক্ষতি androgenetic alopecia দ্বারা সৃষ্ট হয়। প্রায় ৫০% নারী ৫০ বছর বয়সে তাদের চুল হারাতে শুরু করে। মহিলাদের চুল পড়ার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে চুল পড়ার সাথে ২৯% মহিলা বিষণ্নতার শিকার হচ্ছেন। জেনে রাখুন, প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল হারানো স্বাভাবিক। চুল পড়ার পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে আপনি ১৫ বা ১৬ এর মধ্যে আপনার চুল হারাতে শুরু করতে পারেন।
কিন্তু, এই চুল পড়ার প্রবণতা যেভাবে অল্প-বয়সীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে আশঙ্কিত হয়ে পড়ছেন নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা। সমাধান খুজতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন বিজ্ঞাপনের উপর কিংবা নানা ধরণের ইউ-টিউব ভিডিওর উপর। এতে আরো ক্ষতি হচ্ছে। বাড়ছে বিষণ্ণতা। জানালেন এক হেয়ার স্পেশালিস্ট। তার কথা, আগে দেখুন চুল পড়ার এই হার বাড়ছে কিনা। কীরকম পরিবেশে আপনি বাস করেন, কীভাবে চুলের যত্ন নেন, সেগুলো পর্যালোচনা করুন। বংশে চুল পড়ার রোগ আছে কি না দেখুন, কী ধরণের তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন, দেখুন। তারপর প্রকৃত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad