প্রবাসে পুজোঃ লন্ডনের বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন (বিএইচএফ) এর দুর্গাপুজো


 এখানে পুজোর দিনগুলো ঠিক ওখানকার মতোই। বোধন, কুমারী পুজো, নবমীর রাতের দুঃখ আর বিজয়ার সিঁদুর খেলা। বুঝতেই দেয়না আমরা আছি প্রবাসে। হয়তো কাশফুল নেই, নেই শিউলি, কিন্তু বুকের মধ্যে শিউলির গন্ধ মেখে আজও প্রবাসী বাঙালিরা মাতৃ-আরাধনায় নিমগ্ন।

 সংবাদ ভয়েস ৯ এর জন্য ইলিং, লন্ডন থেকে স্নিগ্ধা মুখার্জী

 


বাঙালির সঙ্গে লন্ডনে সম্পর্ক কয়েকশো বছরের। পরাধীন ভারতের সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালির সঙ্গে লন্ডন, টেমস, ওয়েস্টমিনস্টার ব্রীজের সম্পর্ক অতি নিবিড়। প্রথম যখন লন্ডনে আসি, সেটা ছিল ১৯৯৬ সাল। প্রথমে আমি আমার স্বামীকে বলেছিলাম, আমি দুটো জায়গায় যেতে চাই। একটা শেকসপীয়ারের জন্মস্থান স্ট্রাটফোর্ড আর অন্যটা ওয়েস্টমিনস্টার ব্রীজ। ইংরাজী সাহিত্যের ছাত্রী হিসাবে ওই দুটি জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক নাটক, অনেক কবিতা।
তাই বিয়ের পর লন্ডনের নিউহ্যামে যখন এলাম, তখন সর্বাগ্রে মনে পড়েছিল এই দুটি জায়গার কথা। তারপর অনেক জল বয়ে গেছে টেমস দিয়ে। কেটে গেছে ২৫ বছর। অনেক স্মৃতি। দুঃস্বপ্নের মতো মনে পড়ে করোনা আক্রান্ত লন্ডনের শূন্যতা। আতঙ্কে কাটানো ঘুমহীন রাত। এখন সেই আতঙ্ক কাটিয়ে আবার অনেকটাই স্বাভাবিক। কিছু মৃত্যু শূন্যতা রেখে গেছে। রেখে যায়, যা পূরণ হবার নয়।
এবার আসা যাক, লন্ডনের প্রবাসী বাঙালির পুজো নিয়ে। প্রথমেই বলি আমি পশ্চিমবঙ্গের  জলপাইগুড়ির মেয়ে। আমার বাড়ির কাছেই ছিল করলা নদী। করলা আর তিস্তা এই দুই নদীর বুকেই আমার সব স্বপ্ন। আমাদের শহরে দুর্গাপুজো হত। পুজোর অনেক আগে থাকতেই কাশফুল আর শিউলিতে সেজে উঠত নদীর ধার আর আমাদের পাড়ার শিউলি গাছগুলো। আমাদের বাড়ির পুজো, তাই পুজোর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত উন্মাদনা। অষ্টমীর রাতে নাটকের জন্য শুরু হত রিহার্সাল। কিছু মনে করবেন না, বার বার ফিরে যাচ্ছি ফেলে আসা দিনে।

 ‘বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন (বিএইচএফ)’ নামে একটি বাঙালি সংস্থা প্রতি বছর আয়োজন করে শারদীয়া উৎসব। ‘লন্ডন শারদ উৎসব’ নামে পরিচিত এই উৎসব প্রবাসী বাঙালি-জীবনে মরুদ্যান। চারদিন ধরে মায়ের আরাধনার পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠান হয়। মনে করিয়ে দেয় উত্তরবঙ্গের স্মৃতি। করোনার কারণে বিগত দু বছর সেভাবে পুজো না হলেও এবার সব পুষিয়ে নেবে এখানকার প্রবাসী বাঙালিরা। ‘বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’ ইলিং টাউন হলে এবারে চার দিন ধরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছে। এই সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে এই প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতিকে শুধু ধরেই রাখেনি, ছড়িয়ে দিচ্ছে নতুন প্রজন্মের বাঙালিদের মধ্যে যাদের জন্ম এই প্রবাসেই। তাই, এদের পুজোয় লন্ডনের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা একবার, দুবার অন্ততঃ ঘুরে যায়। আর এ ব্যাপারে দু-বাংলার বাঙালিরাই আসেন। পদ্মপারের বাঙালি মিশে যায় তিস্তাপারে। তারপর সব মিলেমিশে টেমসের মধ্যে দিয়ে বয়ে যায়।


 ‘বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের একটি সংগঠন। সংস্থাটি ক্রোয়েডনের সিবিসি, হ্যারোর লন্ডন কালীবাড়ি এবং পড়ার সংস্কৃতির মতো দাতব্য সংস্থাগুলিকে সাহায্য করে। আবার, এলএসইউ ম্যাজিক বাস, বাঞ্চবো, সাবুজ সংঘ, সি ইএফআই এবং ক্যালকাটা রেসকিউ-এর মতো ভারতীয় দাতব্য সংস্থাগুলিকে নানাভাবে সহায়তা করে। গত ১৪ বছর ধরে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রায় ৪০০০ এরও বেশি মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন পেশার বাঙালিরা। কেউ আছেন ব্যাঙ্কিং সেক্টরে, ইনফরমেশন টেকনোলজি, টিচিং প্রফেশনের মানুষজনও আছেন। কিন্তু এদের মিল একজায়গায়। সেটা হল সংস্কৃতি। বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি। 


আর এই সংস্কৃতি আজ গ্লোবাল সংস্কৃতি হয়ে উঠছে। এখানে পুজোর দিনগুলো ঠিক ওখানকার মতোই। বোধন, কুমারী পুজো, নবমীর রাতের দুঃখ আর বিজয়ার সিঁদুর খেলা। বুঝতেই দেয়না আমরা আছি প্রবাসে। হয়তো কাশফুল নেই, নেই শিউলি, কিন্তু বুকের মধ্যে শিউলির গন্ধ মেখে আজও প্রবাসী বাঙালিরা মাতৃ-আরাধনায় নিমগ্ন। এদের পুজো এবার তারিখ: ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ০৩ অক্টোবর।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad