এই "ধৌলি শান্তি স্তূপ" স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে যখন ইউক্রেন-রাশিয়া এক দীর্ঘ সমরে ব্যস্ত। অথচ সেই যুদ্ধ-বিদ্ধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে শান্তির বার্তা নিয়ে এই শান্তি স্তুপে হাজির হয়েছেন বহু ইয়ক্রেনীয় বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বী। ৫০ বছর বয়সী এই স্মৃতিসৌধটিতে এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা, জাপান এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ১৫০ জন বৌদ্ধ- সন্ন্যাসী।
নারায়ণ পট্টনায়ক, ভুবনেশ্বর, ভয়েস ৯
মনে করা হয়, এই স্থানে হয়েছিল সেই ইতিহাস প্রসিদ্ধ বিভীষিকাময় কলিঙ্গ যুদ্ধ। যুদ্ধের পর এই প্রান্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল শুধু মৃতদেহ, ছিন্ন-মস্তক, পচা-গলা দেহ। আর কলিঙ্গ যুদ্ধের এই পরিণতি দেখে ২৭২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মহান মৌর্য রাজবংশের কিংবদন্তী রাজা অশোক ভেঙ্গে পড়েছিলেন গভীর শোকে। একটা যুদ্ধ তাকে বদলে দিয়েছিল সেদিন। ঘুরে গিয়েছিল ইতিহাসের রথের চাকা। চণ্ডাশোক পরিণত হয়েছিলেন ধর্মাশোকে। প্রভু বুদ্ধের অহিংসার বাণী প্রচারে ব্যয় করেছিলেন বাকি জীবন। এমনকি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও প্রভু বুদ্ধের সেই শান্তির বার্তাকে ছড়িয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন।
তারপর দয়া নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে দয়া নদীর তীরে অবস্থিত একটি পাহাড়ে স্থাপিত হয় এক শান্তিস্তুপ। শুধ এদেশের বাসিন্দা নন, দেশ-বিদেশের বৌদ্ধ ও সাধারণ ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে এই শান্তিস্তুপ আজও এক আকর্ষণীয় স্থান। জাপান বুধ সংঘ এবং কলিঙ্গ নিপ্পন বুধ সংঘ মহান কলিঙ্গ যুদ্ধের সাক্ষী হিসাবে এই ধৌলি পাহাড়ে নির্মান করে একটি শান্তি প্যাগোডা স্মৃতিস্তম্ভ, যেটি "ধৌলি শান্তি স্তূপ" নামে পরিচিত। ১৯৭৩ সালে সম্রাট অশোকের সহিংস স্বৈরাচারী থেকে শান্তিপূর্ণ শাসকে রূপান্তরিত হওয়ার স্মরণে এই সফেদ-চূড়া যুক্ত বৌদ্ধ স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছিল।
এই "ধৌলি শান্তি স্তূপ" স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে যখন ইউক্রেন-রাশিয়া এক দীর্ঘ সমরে ব্যস্ত। অথচ সেই যুদ্ধ-বিদ্ধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে শান্তির বার্তা নিয়ে এই শান্তি স্তুপে হাজির হয়েছেন বহু ইউক্রেনীয় বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বী। ৫০ বছর বয়সী এই স্মৃতিসৌধটিতে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা, জাপান এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ১৫০ জন বৌদ্ধ- সন্ন্যাসী।
জানা গেছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকও এখানে এক মেগা ইভেন্টে অংশ নেবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পাবলিক এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রী অশোক চন্দ্র পান্ডা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ধৌলির উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন। উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।
ইতিহাসবিদ বসন্ত কুমার মল্লিক বলেন, "ধৌলির একটি উল্লেখযোগ্য ইতিহাস রয়েছে এবং এটি দুটি বিশিষ্ট কারণে বিখ্যাত। প্রথমত, এটি ছিল কলিঙ্গ যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল। দ্বিতীয়ত, এটিই সেই জায়গা যেখানে সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার বাকি জীবন বিশ্বব্যাপী শান্তি, একতা এবং নম্রতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, ৫০ বছর উদযাপনের কথা মাথায় রেখে স্মৃতিসৌধটি সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকছে। আজ বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রায় ১৫০ জন সন্ন্যাসী শুভ উদযাপনে যোগ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক আজ এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ভুবনেশ্বর থেকে ধৌলি পর্যন্ত একটি শান্তি মিছিলও হবে বলে জানা গেছে।।