উইলিয়াম কুটস ও তারক ঘোষ
ইউক্রেনের কাছ থেকে পালটা আঘাত বা প্রত্যাঘাত যত আসছে, পুতিন তত বেশি আক্রমনাত্মক হয়ে উঠছে। আসলে ইউক্রেনের মতো একটা ছোট্ট রাষ্ট্র রাশিয়ার মতো স্কতিশালী একটা দেশকে ‘ল্যাজে-গোবরে’ করে দিচ্ছে, এটা মেনে নিতে পারছে না পুতিন। আর এটাই ক্রমশঃ আক্রমণকে বিধ্বংসী করে তুলছে। ইউক্রেনের উপর আজকের এই হামলা প্রসঙ্গে সমর বিশেষজ্ঞদের এটাই মত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটা কি একটা পারমানবিক হামলার দিকে পুতিনকে টেনে আনছে না? এই বিষয়ে আশংকা একটা থাকছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বের বহু শক্তিশালী রাষ্ট্র যেভাবে ইউক্রেনের পাশে দাড়াচ্ছে, তাতে কাজটা এতো সহজ হবে না রাশিয়ার পক্ষে। এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন কিয়েভের বিরুদ্ধে আরও "কঠোর" প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারপর এই বোমা হামলা। আর হামলা চালানো হয়েছে অসামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর। নষ্ট করা হয়েছে, বিদ্যুত-ব্যবস্থা ও পানীয় জলের লাইন, যাতে সাধারণ মানুষ ভয়ঙ্কর অবস্থার শিকার হয়। পুতিনের কথায় ইউক্রেন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। পুতিন তার নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্দেশ্য করে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, “যদি সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা অব্যাহত থাকে, তাহলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হবে কঠোর।“ এই কঠোরতা কতদূর যেতে পারে? এই আশঙ্কটা এখন ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের। পুতিনের পূর্বসূরি দিমিত্রি মেদভেদেভ সোশ্যাল নেট-ওয়ার্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন জুড়ে জল ও বিদ্যুৎ সেবা বিঘ্নিত করে এমন হামলার 'প্রথম পর্ব'।
তাহলে, কি দ্বিতীয় পর্ব আসবে? তার রূপ কী হবে?
তারা যুদ্ধ চায় নি। ধ্বংস চায় নি, তবু মেনে নিচ্ছে এই মৃত্যুকে, কারণ, সবার আগে দেশের সম্মান। অন্যদিকে রাশিয়া, বিশেষ করে, পুতিনের সামনে রয়েছে তার ‘জেদ’, অন্ততঃ আন্তর্জাতিক যুদ্ধ-নীতি বিশারদদের সেটাই ধারণা। স্থানীয় বাসিন্দা কেসেনিয়া রিয়াজান্তেভা এক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা যখন প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শুনি তখন আমরা ঘুমাচ্ছিলাম। আমরা জেগে উঠি, চেক করতে যাই, তারপর দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে। এখানে কোনো সামরিক লক্ষ্যবস্তু বা এ ধরনের কিছু নেই। তারা শুধু বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে।“
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রুশ বাহিনী দেশটির বিভিন্ন শহরে ৮০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং রাশিয়া প্রতিবেশী বেলারুশ থেকে উৎক্ষেপিত ইরানি ড্রোনও ব্যবহার করেছে।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো আজ দাবি করেছেন, ইউক্রেন তার দেশের ভূখণ্ডে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “রাশিয়া ও বেলারুশ একসঙ্গে 'সেনা মোতায়েন' করবে।“ তবে কোথায় তার উল্লেখ নেই। তিনি প্রতিবেশী পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বেলারুশের জঙ্গিদের নিজ দেশে হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগও করেন।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন, মিনস্ক ও মস্কো বেলারুশের পশ্চিম সীমান্তে 'উত্তেজনা'র প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর একটি যৌথ আঞ্চলিক দল মোতায়েনে সম্মত হয়েছে। বেলতা নিউজ এজেন্সির জানাচ্ছে - বেলারুশের নেতা নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, "রাষ্ট্রের পশ্চিম সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার কারণে, আমরা রাশিয়ান ফেডারেশন এবং বেলারুশ প্রজাতন্ত্রের বাহিনীর একটি আঞ্চলিক গ্রুপ মোতায়েন করতে সম্মত হয়েছি।" ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ লুকাশেঙ্কোর মন্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।“