নিজস্ব প্রতিনিধি, নতুন দিল্লিঃ ওম রাউত পরিচালিত ‘আদিপুরুষ’ এর টিজার প্রকাশিত হওয়া মাত্র দেশ গর্জে উঠেছিল। ওম রাউতের কথায় যে নতুন প্রজন্মের জন্য তিনি ‘নতুনভাবে’ হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ তথা ভারতের মহাকাব্য রামায়ণের চিত্রায়ণ করেছেন, সেই নতুন প্রজন্মের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ‘নব-রামায়ণের’ শ্রীরাম, রাবণ, হনুমান চরিত্রের মেক আপ নিয়ে ওমকে তুলোধনা করে ছেড়েছেন হয়তো অপেক্ষা করছেন ট্রেলারের জন্য, তখন নতুন করে আবার তুলোধনা করবেন।
অবশ্য ওম হাসিমুখে ইন্টারভিউ দিয়ে দাবি করেছেন, তিনি নতুন প্রজন্মকে হ্যারি পটার এর মতো অভিনব কিছু একটা ‘উপহার’ দিতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে বহু স্কুল-কলেজে পড়া ছেলে-মেয়ে বলেছিলেন, “আমরা দেশের ধর্মীয় মহাকাব্য আর হ্যারি পটার” এর পার্থ্ক্যটা বুঝি, উনি হয়ত ভেবে নিয়েছেন আমরা অশিক্ষিত, শুধু হলিউডে মজে আছি। ঠিকই ধরেছেন উনি, হলিউড না দেখলে বুঝতেই পারতাম না, কীভাবে উনি বানর সেনা, বাদুড়ের উড়ে আসার চিত্রগুলি খুঁজে পেয়েছেন।“
‘আদিপুরুষ’-এর টিজারে পর্দার রাবণরূপী সাইফকে দেখে রেগে যান বেশ কিছু মানুষ। তার চুলের আধুনিক ছাঁট, দাড়ি নিয়ে বিতর্ক ওঠে। অনেকের মতে, রাবণ সম্পর্কে বিস্তরিত না পড়েই নিজের’অল্প-জ্ঞান’ দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো রাবণ তৈরি করেছেন ওম। রাবণের মধ্যে নেগেটিভ ও পজিটিভ দুটি স্বত্তাই থাকা সত্বেও উনি শুধু ‘কালো’ টাই দেখতে পেয়েছেন। রাবণ ব্রাম্ভণ ও শ্রীলঙ্কার রাজা হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন মুঘল সম্রাটের মতো করে সাজানো হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। অনেকে ঠাট্টা করে বলেছেন, মাত্র ৯৫ সেকেন্ডের টিজারে নাকি, ঠিকমতো বোঝা যায় না, হয়তো ১২০ মিনিট দেখলে সব বদলে যাবে, আর ৩ডি তে দেখলে তো কথাই নেই, আমরা যা চেয়েছিলাম তাই দেখতে পাবো।“
স্বভাবতইঃ রাবণকে কেন মুঘল সম্রাটদের মতো করে মেকআপ করানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ছবির পরিচালক এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে। হিন্দু ব্রাহ্মণ রাবণকে ভুল ভাবে একটি ভয়ানক রূপে দেখানো হয়েছে যা হিন্দু সভ্যতা, হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, মূর্তি এবং আদর্শের প্রতি চরম অপমান।
ছবিতে রাবণ সম্পর্কিত দৃশ্যটি রামায়ণের প্রকৃত ঘটনা এবং গল্প থেকে একটি সম্পূর্ণ বিকৃতি। আবেদনে বলা হয়েছে, ফিচার ফিল্ম আদিপুরুষ-এর পরিচালক ওম রাউত এই চলচ্চিত্রের ধর্মীয় নেতা বা চরিত্রগুলির ভুল চিত্রায়নকে সমর্থন করে জনসমক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন যে রামানন্দ সাগরের রামায়ণের ধর্মীয় নেতা বা চরিত্রগুলির উপস্থাপনায় ভিএফএক্সের নিজস্ব সংস্করণও ছিল।
হিন্দুদের ভগবান রাম, সীতা এবং হনুমানের চিত্র সম্পর্কে একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কাজেই চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেতাদের দ্বারা তাদের ঐশ্বরিক চিত্রের যে কোনও পরিবর্তন বা হস্তক্ষেপ তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে যে দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে একটি সমাজ ব্যবস্থা করা হয়েছে কারণ ভারতীয় সমাজ বহুধর্মীয়। ধর্মীয় সম্প্রীতি, সততা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য, প্রতিটি ধর্মের পারস্পরিক শ্রদ্ধা একটি অপরিহার্য বিষয়। সুতরাং, ভারতীয় সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের ধর্মকে মৌলিক অধিকারের অংশ করে তুলেছে। সুতরাং, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেতারা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অধীনে রয়েছে যাতে ধর্মীয় অনুভূতি, অনুভূতি এবং উপলব্ধিগুলি কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ না করা হয়। আবেদনে বলা হয়েছে, আর সেই কারণে, ফিচার ফিল্মের বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য সিনেমাটোগ্রাফ আইন, ১৯৫২ প্রণয়ন করেছে।
এই জনস্বার্থ মামলার ব্যাপারে, সিনিয়র সিভিল জজ অভিষেক কুমার বলেন, ১ নং বিবাদীকে (ভূষণ কুমার) প্রাক-সমন পর্যায়ে মামলার রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আদালতে বক্তব্য রাখার সূযোগ দেওয়া হবে।
আদালত আইনজীবী রাজ গৌরবের দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি করছিল, যেখানে অভিযুক্ত ভূষণ কুমার, প্রযোজক এবং ওম রাউত, পরিচালক ও সহ-প্রযোজকের বিরুদ্ধে স্থায়ী ও বাধ্যতামূলক আদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল।মামলাকারীর অভিযোগ ছিল যে তারা প্রচারমূলক ভিডিওতে হিন্দু দেবতাদের অযৌক্তিক এবং ভুল উপায়ে চিত্রিত করেছে।
প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে আদিপুরুষ এর টিজার থেকে
Sangbad Voice 9 is thankful to
Gulshan Kumar and T-Series