তারক ঘোষ
ইংল্যান্ডের জিসিএইচকিউ এর পরিচালক জেরেমি ফ্লেমিং মঙ্গলবার লন্ডনে একটি বক্তৃতার আগে বিবিসিকে একটি সাক্ষাত্কারটি দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি প্রায় আট মাসব্যাপী যুদ্ধে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর কর্মক্ষমতা সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের বিরাম নেই। আর বিরাম নেই ইউক্রেনের অসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রাশিরা মিজাইল হানা। পাশাপাশি, রাশিয়া এই মুহুর্তে বেছে নিচ্ছে ইউক্রেনের বিদ্যুত-প্রকল্প ও পানীয় জল প্রকল্পগুলিকে, যাতে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয় দেশ জুড়ে। ইউক্রেন সাফ জানিয়েছে, বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে রাশিয়া জেনেভা কনভেনশনের চুক্তি লঙ্ঘন করছে। একইসঙ্গে, পৃথিবীর বহু দেশ রাশিয়ার এই আক্রমণকে যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে বলে তোপ দেগেছেন। কিন্তু তা সত্বেও রাশিয়া কোন কথাই কানে নিচ্ছে না আর সেটা বোঝা যাচ্ছে অসামরিক এলাকাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা দেখে।
১১ ই অক্টোবরের হামলায় কমপক্ষে ২০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং দেশব্যাপী ১০৮ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস। এছাড়া, ওই ১১ অক্টোবর ইউক্রেনের পশ্চিম অঞ্চলের ভিনিৎসিয়ার একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ কোম্পানি ডিটিইকে। উদ্ধারকারীরা যখন ঘটনাস্থলে কাজ করছিল, ঠিক তখনই রাশিয়ার ইরানি ড্রোনগুলো আবারও ওই কেন্দ্রে আঘাত হানে, যার ফলে আরও ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এদিকে রাশিয়ার এই অনড় অবস্থানকে "মরিয়া" বলে আখ্যায়িত করেছেন ইংল্যান্ডের জিসিএইচকিউ এর পরিচালক জেরেমি ফ্লেমিং।
বিবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই গুপ্তচর প্রধান বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি যে রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্রশস্ত্রের অভাব রয়েছে, আর অভাব আছে মিত্র-শক্তির। রাশিয়া ও রাশিয়ার কমান্ডাররা তাদের সামরিক অস্ত্র-ভান্ডার নিয়ে উদ্বিগ্ন।"
তিনি বলেন, "আমি যে শব্দটি ব্যবহার করেছি তা হলো 'মরিয়া'। আমরা রাশিয়ান সমাজের অভ্যন্তরে এবং রাশিয়ান সামরিক বলের অভ্যন্তরে অনেক স্তরে এই হতাশা দেখতে পাচ্ছি।"
ইংল্যান্ডের জিসিএইচকিউ এর পরিচালক জেরেমি ফ্লেমিং মঙ্গলবার লন্ডনে একটি বক্তৃতার আগে বিবিসিকে একটি সাক্ষাত্কারটি দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি প্রায় আট মাসব্যাপী যুদ্ধে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর কর্মক্ষমতা সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
ফ্লেমিং বলেন, “আমরা জানি এবং রাশিয়ার কমান্ডাররা জানে যে, তাদের সরবরাহ ও অস্ত্রশস্ত্র ফুরিয়ে যাচ্ছে।“
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রিমিয়ায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কের্চ সেতুতে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৪৮ ঘণ্টায় ইউক্রেন জুড়ে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিয়েছেন, ফ্লেমিং যুক্তি দেখিয়েছেন যে এর ফলে তাদের অস্ত্রাগার আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
তিনি পুতিনের নেতৃত্বের ব্যাপারে বলেন, “সামান্য কার্যকর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের কারণে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। রাশিয়ান জনগণও এটি বুঝতে শুরু করেছেন পুতিন পরিস্থিতিকে কতটা বাজেভাবে বিচার করেছেন এবং তারা তার যুদ্ধের ভয়াবহ দিকটাও অনুভব করছে।“
ফ্লেমিং এর যুক্তি যদি ঠিকঠাক হয় যে, রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডারে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, তা হলে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তিনি যে ‘মরিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তার ফলে আর একটা নেতিবাচক দিক দেখা যেতে পারে। যেভাবেই হোক যুদ্ধ জেতা বা যুদ্ধের ন্যায়-নীতি-আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে লাগাতার আক্রমণ আচমকাই বদলে যেতে পারে এক ভ্যঙ্কর সিদ্ধান্তে।
Photo by Pavlo Palamarchuk/SOPA Images/LightRocket via Getty Images
AFP