'সি-তরাং' এর আগমনে ত্রস্ত বাংলা, ওড়িশা ও বাংলাদেশঃ মোকাবিলায় তৎপর প্রশাসন
10/22/2022 07:07:00 AM
0
ভয়েস৯, কলকাতা ডেস্ক ও ভয়েস ৯, ঢাকা ডেস্কঃ তাইল্যান্ড এর নাম দিয়েছে 'সিতরাং' বা 'সি-তরাং', ভিয়েতনামী ভাষায় যার অর্থ হলো পাতা।।তাইল্যান্ডের উচ্চারণ অনুযায়ী এই ঝড়ের নাম 'সি-তরাং'বা' সিতরাং'। যেহেতু এটি এখনো ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়নি, তাই ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর এর কোন পোষাকি নাম দেয়নি। নাম থাকুক বা নাথাকুক, কিংবা নাম সি-তরাং হোক। এর আগমনের খবরে এখন ত্রস্ত পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বাংলাদেশ। কেননা, ইতিমধ্যেই আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটির অন্ধ্র-উপকূলের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় এটির প্রভাব বেশি পড়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। তবে, কবে এটির ল্যান্ডফল হবে, বা ঠিক কোথায় হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অনেকটাই আন্দাজে বলা হচ্ছে।
তবে, ফণি’, ‘আমপান’, ‘ইয়াস'-এর মতোই ‘সি-তরাং’ এর আগমনের খবরে ভারতের দুই রাজ্য এবং বাংলাদেশ প্রশাসনিক বৈঠক সেরে তৎপর হয়েছে এই ঝড় মোকাবিলায়। আমেরিকার নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্য মতে, আন্দামান ও নিকোবর সমুদ্র এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটির ‘ইনভেস্ট ৯২বি’ নামকরণ করা হয়েছে। নিম্নচাপটির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২ থেকে ২৮ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে। এটি ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠলে নিন্মচাপটি ঘূর্ণিঝড় সি-তরাং এর রূপ নেবে।
অন্যদিকে, আমেরিকার মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস) এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটির ২২ থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জনের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এখনো পর্যন্ত জানা গেছে, ঝড়টির সঠিক অভিমুখ ঠিক কী হবে, তা বুঝতে আর একটু সময় লাগবে।
মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম জানিয়েছে, খুলনা বিভাগে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি যদি কিছুটা পূর্বদিকে সরে গিয়ে পুরোপুরি খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে আছড়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে ঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, সি-তরাং এর মোকাবিলায় ওড়িশা সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। উপকূল এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড-এলার্ট, বাতিল হয়েছে এই এলাকার সরকারী কর্মীদের ছুটি। শুক্রবার ভুবনেশ্বর আবহাওয়া কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জগৎসিংপুর, কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক, বালাসোর, কটকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে, ২৪ ও ২৫ অক্টোবর কেওনঝাড়, ময়ূরভঞ্জ, জাজপুর, খোরধা, পুরী এবং গঞ্জাম জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, ভারতীয় আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, সি-তরাং এর বেশি প্রভাব পড়তে পারে সুন্দরবন এলাকায়। ফলে, কলকাতা সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি জেলাতেও সি-তরাং-এর প্রভাব পড়তে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, এই ঝড়ের প্রভাবে উপকূলের জেলাগুলিতে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে আগামী ২৪ তারিখ ঘন্টায় ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইবে। ২৪ তারিখ কলকাতায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা। ২৫ তারিখ আরও বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ। কলকাতা ও সংলগ্ন হাওড়া, হুগলি জেলাগুলিকে ঘন্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবারই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাগুলির জেলাশাসক, পুলিশসুপার ও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলের ৯টি ব্লক এলাকা থেকে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলায় এনডিআরএফের তিনটি টিম থাকবে। তারা থাকবে দিঘা, মন্দারমণি ও হলদিয়াতে। এসডিআরএফের দু’টি টিম থাকবে দেশপ্রাণ ব্লক, পেটুয়াঘাট ও নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে।