শান্তিপুরের রাস, পুরাণের রাইরাজা মিশে যায় বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে


  শ্রীরাধাকে একদিনের জন্য কৃষ্ণ সাজিয়ে দোলায় চাপিয়ে নগর পরিভ্রমণ করা হয়, তাই ওই একদিন রাই হলেন রাইরাজা।


  নিজস্ব প্রতিনিধি, নদিয়াঃ নদিয়া জেলার দু জায়গায় রাস বিখ্যাত। শান্তিপুর আর নবদ্বীপ। রাস উদযাপন নিয়ে ধারে-ভারে শান্তিপুর আর নবদ্বীপ, বারংবার চেষ্টা করেছে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার। এটা শুধু বর্তমান সময়ের টেক্কা দেওয়ার বিষয় নয়। প্রাচীন সময় থেকেই এটা হয়ে আসছে বলে জানা গেল। দুই অঞ্চলের মানুষজনই চায় তাদের অঞ্চলে রাস উৎসবের সাড়ম্বর বেশি হোক। তাই একসময় শান্তিপুরের গোস্বামীপ্রভুরা ঠিক করলেন নবদ্বীপের রাসের উৎসবকে টেক্কা দিতে গেলে পুরাণের আশ্রয় নেওয়া প্রয়োজন। আর সেই পুরাণেই তাঁরা পেয়ে গেলেন রাইরাজার কথা। কিন্তু কে এই রাইরাজা?
পুরাণ বলে, একবার বৃন্দাবনের রাস উৎসব দেখার ইচ্ছা হয়েছিল দেবাদিদেব মহাদেবের। কিন্তু রাস উৎসবের মূল আকর্ষণ শ্রীকৃষ্ণ।
তিনি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের প্রবেশের অধিকার সেখানে নেই। কী করেন দেবাদিদেব? বাধ্য হয়ে দেবাদিদেব তখন ছদ্মবেশে রাসের উৎসবে প্রবেশ করলেন। কিন্তু তাকে চিনে ফেললেন যোগমায়া। বলা বাহুল্য মহাদেবের ত্রিনয়ন দেখে শ্রীকৃষ্ণও তাঁকে চিনে ফেলেন এবং অন্য পুরুষ রাসের উৎসবে প্রবেশ করেছে বুঝতে পেরে তিনি প্রস্থান করেন। 


এই অবস্থায় সখীরা চিন্তায় পড়ে যান – শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া রাস উৎসব হবে কী করে? সেই সময় তাঁরা ঠিক করেন, শ্রীরাধাকে একদিনের জন্য কৃষ্ণ সাজিয়ে দোলায় চাপিয়ে নগর পরিভ্রমণ করা হবে। তাই ওই একদিন রাই হলেন রাইরাজা। তবে জনশ্রুতি অনুযায়ী, মহাদেব যে হেতু দ্বাপরে রাস ভেঙেছিলেন তাই তিনি কলিযুগে শ্রীঅদ্বৈতাচার্য অবতারে জন্মগ্রহণ করে মর্ত্যে রাস উৎসবের সূচনা করেন।
রাইরাজাদের নিয়ে নগরপরিক্রমা আজও পালিত হয় শান্তিপুরের রাস উৎসবে এবং ভাঙারাসের শোভাযাত্রা যেন সেই প্রাচীন ঐতিহ্যকে আজও ধরে রেখেছে। পুরাণের রাই-রাজা আজ আধুনিক প্রজন্মের বুকে দাঁড়িয়ে আরো মধুর হয়ে উঠেছেন।
জানা গেছে, ১২ বছরের নীচে ব্রাহ্মণবাড়ির কন্যাকে সাজানো হয় রাইরাজা রূপে।। যে শিশুকন্যা রাইরাজা হন তাঁকে আগের দিন নিরামিষ আহার করতে হয়। পরের দিন যথাযথ ভাবে নিয়ম মেনে তাঁকে সাজানো হয় এবং যুগলবিগ্রহের সামনে তাঁকে বসানো হয়। শান্তিপুরের রাস উৎসবের কেন্দ্রে থাকেন শ্রীরাধারমণ জিউ। 

   এদিকে শান্তিপুরের রাস দেখতে এলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দপাধ্যায়। শান্তিপুরের বিখ্যাত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বাড়িতে।ঘুরে দেখলেন শান্তিপুরের রাস। মুখ্যমন্ত্রী জানান, "আমি ব্রজকিশোর গোস্বামীর বাড়িতে এলাম। ও আমার ভাইয়ের মতো। এটা একটা ঐতিহাসিক বাড়ি৷ চিরকালীন প্রাধান্য রয়ে গেছে চৈতন্যদেবের। আমি কৃতজ্ঞ ব্রজদের বাড়িতে এলাম। আমি ইচ্ছা করেই সময় বেছে নিয়েছি। আমি এই প্রথম এলাম, দারুণ অভিজ্ঞতা হল। বিভিন্ন রূপে সকলের পুজো হল। আমি ঘুরে দেখব সবটাই। নদিয়ায় থাকার জায়গা নেই৷ আমি ব্রজকে বলেছি এখানে এসেই থাকব।" উল্লেখ্য, আগামিকাল শান্তিপুরের ভাঙ্গা রাস।

ভাঙ্গা রাসের 'রাই-রাজা'র ছবি সংগৃহিত

বাকি ছবিঃ অঙ্কিতা প্রামানিক

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad