নেতাদের দুর্নীতি গড় মানুষকে আর প্রভাবিত করে না, তারা বেঁচে থাকার নতুন পাস-ওয়ার্ড খুঁজে পেয়ে গেছে

দুর্নীতি আর বেঁচে থাকা, দুটোই এখন অভ্যাসের বিষয়। বেঁচে থাকা অভ্যাস করে ফেলেছে গড় মানুষজন। তাই বিরোধীরা ‘দুর্নীতি, দুর্নীতি’ করে আষ্ফালন করলেও, এরা ওদের সঙ্গে লাফায় না। চা খেতে খেতে টিভির সামনে বসে দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে যাওয়া দেখে। প্রতিবাদ করলে, কে জানে, কলমের নকশাল বলে কবে জেলে ভরে দেবে।

 অজয় সে

কটা সময় ছিল যখন বলা হতো –“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।“ কথাটা আজ শুধুমাত্র ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আংশিক সত্য। আংশিক বলছি এই কারণে, সবার ভোটাধিকার থাকে না, যদিও তারা সবাই মানুষ। আর এখন কবির কথায় বলি, “মানুষ আজ কাঁদছে, তার পাশে এসে দাঁড়াও।“ মানুষের এই কান্না কীসের জন্য? সমষ্টির জন্য, না ব্যক্তির জন্য? যদি বলি দুটোই সত্যি, তাহলে এই কান্নার উৎস কী? কান্নার উৎস অনেক। 
মূল্যবোধের মৃত্যু, মূল্যবৃদ্ধির অগ্নিচোখ, চাকরির বাজারে শূন্যতা, নিরাপত্তাহীন জীবন, অর্থনৈতিক সমস্যা – এরকম অসংখ্য সমস্যা আজ মানুষের সামনে। আর এর পরতে পরতে আছে রাজনীতির চোরা স্রোত। সেই রাজনীতি থেকে মুক্তি নেই মানুষের। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানুষকে বেঁধে রেখেছে রাজনীতির অদৃশ্য দড়ি। বন্ধন বোঝা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে না, ছেঁড়া যাচ্ছে না। এমন কঠিন এই বাঁধন। যখন রাজনীতি ও দূর্নীতির মধ্যে সন্ধি হয়, মানুষ তখন আরও অসহায় হয়ে পড়ে।
 গড় মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ, সর্বাঙ্গে সেই অদৃশ্য বাঁধন। প্রতিবাদ করার ইচ্ছে হয়, কিন্তু পিছুটান সংসার। তাই মেনে নিতে হয়। বাজির প্রচন্ড শব্দে ঝালাপালা কান, হৃদয়। ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে প্রতিবাদ করতে। হাতের মুঠো বন্ধ করে বসে বসেই সহ্য করতে হয় একশ্রেণির মানুষের নির্দয়তা। কারণ, প্রতিবাদের সাহস হারিয়ে যাচ্ছে, মেরুদন্ড শিরশির করছে। রাজনীতির বাঁধন নিয়ে মানুষ তাই ক্রমশঃ হয়ে উঠছে আত্মকেন্দ্রিক। 

এই আত্মকেন্দ্রিকতা শুধুই নিজেকে ও পরিবারকে একটু ‘নিশ্চিন্তে’ বাচিয়ে রাখার জন্য। মানুষ সহ্য করতে করতে অন্যায়কেও সহ্য করতে শিখে গেছে। ন্যায় আর অন্যায় এর প্রভেদ নিয়ে গড় মানুষ আর মাথা ঘামায় না। কারণ, মাথাগুলো ক্রমশঃ নীচু হচ্ছে নানা চাপের কাছে। তাই মাথা তুলতে ইচ্ছে করে না। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের খবরে ক্লান্ত গড় মানুষ। কারণ, দুর্নীতি আর বেঁচে থাকা, দুটোই এখন অভ্যাসের বিষয়। বেঁচে থাকা অভ্যাস করে ফেলেছে গড় মানুষজন। 
তাই বিরোধীরা ‘দুর্নীতি, দুর্নীতি’ করে আষ্ফালন করলেও, এরা ওদের সঙ্গে লাফায় না। চা খেতে খেতে টিভির সামনে বসে দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে যাওয়া দেখে। ভোট দেওয়ার সময় সেই তথাকথিত ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি’কেই ভোট দেয়। কারণ, এটা অভ্যাস, মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস। 
সবাই মানিয়ে নিচ্ছে, মেনে নিচ্ছে। আর এভাবেই বেঁচে থাকার নতুন পাস-ওয়ার্ড খুঁজে নিয়েছে, যেমন করে ‘বুদ্ধিজীবীরা’ খুঁজে নেয় রাজনৈতিক ছাতা। কারণ, এই ছাটাই তাদের সম্পদ, তাদের সৃষ্টিটা নয়। নিজেরা যা লেখেন, তা বিশ্বাস করেন না। প্রতিবাদ কলমে, নির্দিষ্ট সময় তা গর্জে ওঠে। মুখে মুখোশ। তাই নাগরিক সমাজের প্রতিবাদে এরা একটু নড়ে-চড়ে বসে, নতুন চুমুক দেয় চায়ের কাপে। গড় মানুষ ভুলে যায়, তারা সিরিয়াল দেখছে না কি খবর। 
আর এভাবেই পাঁকাল মাছের মতো বেঁচে থাকার জন্য নতুন পাস-ওয়ার্ড তৈরি হয়। কারণ, কে জানে, কলমের নকশাল বলে কবে জেলে চলে যেতে হবে!

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad