রাসে কেবলমাত্র এই প্রতিমার পুজোই তিনদিন ব্যাপী দুর্গামন্ত্রে হয়। শতবর্ষ প্রাচীন ওলাদেবীতলার মুক্তকেশীর ভোগরাগ হয় ইলিশমাছ দিয়ে। খড়েরগোলার বিন্ধ্যবাসিনী অষ্টভুজা–অসুর নেই, দুপাশে পরী, বৈষ্ণব মতে সাত্ত্বিক পুজা হয়। নবদ্বীপের রাসে শাক্তমূর্তির প্রাধান্য দেখা যায়। দেবী কলিজা কত বিচিত্র নামে পূজিত হন—বামকালী, নৃত্যকালী, উড়ন্তকালী, মুক্তকেশীকালী, মহানিশাকালী, তোতাপুরীকালী ইত্যাদি।
তবে, এবারে নবদ্বীপে রাস উতসবের চিত্রটা একটু অন্য হতে পারে। কেননা, নবদ্বীপ থানার উদ্যোগে রাস নিয়ে একটি সভা করা হয়, সেখানে পুলিশের তরফে একাধিক বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। নবমীর অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। নবমীর দিন নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় বাদ্যযন্ত্র-শোভাযাত্রা সহকারেপুজো দিতে আসে বিভিন্ন বারোয়ারি। ফলে ব্যপক ভিড় হয়। তাই, নিরাপত্তার খাতিরে এই শোভাযাত্রই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। বলা হয়েছে প্রতি পুজো কমিটির ৫ জন সদস্য একজন ঢাকি নিয়ে পুজো দিতে পারবেন।
নবদ্বীপের রাসের উৎস ঠিক কবে, তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কথিত আছে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই চৈত্যন্যদেব রাস উৎসবের সূচনা করেন কিন্তু চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পর বৈষ্ণব আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে। কথিত আছে, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বৈষ্ণবীয় রাসকে পরাস্ত করার জন্য শাক্তরাসের প্রবর্তন করেন। তাই, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে (১৭২৮-৮২) রাসের সূচনা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।
নানা সমস্যায় জর্জরিত কৃষ্ণচন্দ্র সঙ্কটমুক্ত হওয়ার পর মঠমন্দির স্থাপন, নানা মেলা-উৎসবের সূচনা করেন। ১৭৫৩-৫৬-র মধ্যে তিনি জগদ্ধাত্রীপুজো, বারোদোলের সূচনা করেন বলে জানা যায়।
ওই একই সময়ে তিনি নবদ্বীপে বৈষ্ণবদের রাস উৎসবের খোলনলচে বদলে দেন নতুন আঙ্গিকে রাস উৎসব শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। কৃষ্ণচন্দ্রের আগে নবদ্বীপের বৈষ্ণবীয় রাসের ছবিটা ছিল অন্য রকম।
১৫৩৩-এ চৈতন্যদেবের তিরোধানের একশো বছরের মধ্যে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মে বহু গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়। নানা সম্প্রদায়, গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ শেষ পর্যন্ত বিদ্বেষে পরিণত হয়। সেই সময়ে রাসপূর্ণিমার দিন পটুয়াদের দিয়ে বড় বড় পট আঁকিয়ে মঠে-মন্দিরে প্রদর্শন করা হত। বড় বড় কাঠের চাকা তৈরি করে তার মাঝখানে রাধাকৃষ্ণকে বসিয়ে চারপাশে অষ্টসখীর মূর্তি বসানো হত। আর ধীরে ধীরে সেই চাকাটি ঘোরানো হত। একে বলা হত 'চক্ররাস'। পরে সেই উৎসব নতুন আঙ্গিকে দেখা যায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে।