মনে রাখতে হবে, জনগণ এমনিতেই আতঙ্কিত। ভবিষ্যত প্রজন্মের চাকরি নেই, মূল্যবৃদ্ধির দাপটে সংসার চালানোর আতঙ্ক, একের পর এক রোগব্যাধির আতঙ্ক, মেয়ের বিয়ে ঠিক ছেলের সঙ্গে হচ্ছে কি না, তার আতঙ্ক।আর এসব নিয়ে বেঁচে থাকাটাই যখন আতঙ্কে পরিণত হয়ে যায়, আর কোন বড় আতঙ্ক তাদের জন্য সৃষ্টি করা হবে।
তারক ঘোষ
রাজনীতির ময়দান এখন যেন ছোটখাট একটা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। কখনো বাগযুদ্ধ, কখনো সেই বাগযুদ্ধ পরিণত হচ্ছে সম্মুখ সমরে। কিন্তু, রাজনীতির ময়দান তো যুদ্ধক্ষেত্র নয়, এটা একটা ক্লাসরুম। ভালো ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। যে ভালো উত্তর লিখে পরীক্ষককে খুশি করতে পারবে, সেই প্রথম স্থান পাবে। এখানে শিক্ষকের আসনে আছে জনগণ। তাদের খুশি করলেই ভোটবাক্স ভরে উঠবে। জয় টীকা পাবেন জয়ী রাজনৈতিক দল।
আমার কথায় কি বিশ্বাস হচ্ছে না? না হবারই কথা, কারণ এই চিত্রটা দেখতে আমরা অভ্যস্ত নই। বরং, এক রাজনৈতিক নেতা অন্য এক নেতার উদ্দেশ্যে অকথা-কুকথা বলছেন, একে অন্যের দুর্নীতির খতিয়ান দিচ্ছেন, কীভাবে ভোটে লড়তে হবে তার নিদান দিচ্ছেন শাসক-বিরোধী দলের নেতারা, কর্মীরা মন দিয়ে শুনছেন। প্র্যাক্টিশ করছেন। দু চারটে লাশ পড়ছে। শুরু হচ্ছে মিডিয়াতে তার ধারাবিবরণী। পর্দায় পক্ষ-প্রতিপক্ষের হাতের ও মুখের তর্জন-গর্জন। কার দল কবে-কোথায় কত উচ্চমানের দুর্নীতি করেছে তার হিসাব-নিকাশ চলছে এ রাজ্যে, সে রাজ্যে।
যেটা থাকে না, তা হল শিষ্টাচার, যা থাকে, তা হল জনগণের বিরক্তি।
এই পক্ষ বা বিপক্ষের নেতারা ভাবেন না, তাদের তুলে ধরা এই দুর্নীতি আর পালটা দুর্নীতির খতিয়ান দেখে সাধারণ মানুষ আর কারো উপরেই নির্ভর বা ভরসা করতে পারেন না। নেতারা তা জানেন, তাই ভোটের আগে রাজনীতির মানুষজন আর সাধারণ মানুষের উপর খুব একটা ভরসা করেন। যেটার উপর ভরসা করেন, সেটা সকলেই জানেন।
অনেকে বলেন, দুর্নীতি এই সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এখন আর দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারেরা তাড়াতাড়ি কাজ করার জন্য ঘুষ চান না। মানুষ আগে থেকেই ঘুষ নিয়ে রেডি থাকেন, কারণ তারা বুঝে গেছেন, এমন কিছু জায়গা আছে, সেখানে ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না। আর এটা রাজনীতির জগতেও কম-বেশি দেখা যায়। প্রকাশ্যে এলেই শোরগোল। তরজা আর কবির লড়াই।
কিন্তু, শাসক বা বিরোধী দল সবাই যদি ‘দুর্নীতি’কেই তাদের শত্রু ভাবতে শুরু করেন এবং তার বিরুদ্ধে লড়েন, তাহলে কেমন হয়? জনগণের মঙ্গল, দেশের মঙ্গল আর অগ্রগতি যদি সব দলেরই লক্ষ্য হয়, তাহলে, নিজেদের মধ্যে লড়াই না করে, নিজেদের ‘নাক না কেটে’, ‘পরের যাত্রা ভঙ্গ’ না করে তারা জনগণের জন্য কী করেছেন, সেটাই প্রচার করুন। যাদের হাতে এই উদাহরণ আছে, তাদের জনগণ নিশ্চয়ি আশীর্বাদ করবেন।
মনে রাখতে হবে, জনগণ এমনিতেই আতঙ্কিত। ভবিষ্যত প্রজন্মের চাকরি নেই, মূল্যবৃদ্ধির দাপটে সংসার চালানোর আতঙ্ক, একের পর এক রোগব্যাধির আতঙ্ক, মেয়ের বিয়ে ঠিক ছেলের সঙ্গে হচ্ছে কি না, তার আতঙ্ক।আর এসব নিয়ে বেঁচে থাকাটাই যখন আতঙ্কে পরিণত হয়ে যায়, আর কোন বড় আতঙ্ক তাদের জন্য সৃষ্টি করা হবে। একদিকে হাজারো কার্ডের আতঙ্ক, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার আতঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বুদ্ধজীবীদের কালিমালিপ্ত করার আতঙ্ক।
আর সেই আতঙ্কের পরিবেশে থাকতে থাকতে, মানুষ আজ দিশেহারা। বিশ্বাসের জায়গাটা তাই ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসছে।