একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে বিএ.৫ অন্যান্য ওমিক্রন সাবভেরিয়েন্টগুলির চেয়ে বেশি সংক্রামক এবং পূর্ববর্তী কোভিড -১৯ টিকা বা সংক্রমণের মাধ্যমে মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে এড়িয়ে যেতে পারে। ১০০ টিরও বেশি দেশে এই স্ট্রেনটি সনাক্ত করা হয়েছে এবং কয়েক মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতে এটি প্রভাবশালী স্ট্রেন ছিল।
তারক ঘোষঃ মানুষ যেমন আক্রান্ত হলে রুখে দাঁড়ায় বা অন্যভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে, করোনা ভাইরাসও তাই করছে। তবে, মানুষ আর ভাইরাসে যে পার্থক্য, তা হল- মানুষ আক্রান্ত হলে, তার জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে না, ভাইরাস সেটা পারে। তাই, বারে বারে রূপ বদলে, সে মানবজাতিকে আক্রমণ করছে। আর দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার এই রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদল করা বা আপডেট করা হচ্ছে না টিকা। যেটা করা হচ্ছে, ২ এর পর ৩, ৩ এর পর ৪ নম্বর টিকার কথা ভাবা হচ্ছে। ভাইরোলজিস্টরা কিন্তু ভাইরাসের রূপ বদলের ব্যাপারে অনেক আগেই সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, হয় তারা দুর্বল হয়ে পড়বে, নয়ত, তারা অন্যভবাএ নিজের বদল ঘটিয়ে আরো মারাত্মক হয়ে উঠবে।
আর একটি বিষয় হল, ভাইরাস নিয়ে বার বার দেখা যাচ্ছে ডাক্তাররা তাদের অভিমত দিচ্ছেন, কেন ভাইরোলজিস্টদের দিয়ে জনগণকে বোঝানো হচ্ছে না? প্রশ্নটা শিক্ষিত মহলের, যারা ভাইরাস নিয়ে একটু পড়াশোনা করেছেন।
সম্প্রতি, গবেষকরা বলেছেন, কোভিড-১৯-এর সাব-ভেরিয়েন্ট, যা চীনে অভূতপূর্ব ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়াতে ইন্ধন জুগিয়েছে, তাতে ভয়াবহ পরিবর্তন আসতে পারে।
গবেষকদের মতে, করোনাভাইরাসের এই সাবভেরিয়েন্ট মস্তিষ্ককে আক্রমণ করার জন্য নিজেদের রূপ বদলাতে পারে।
বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণাটি জানাচ্ছে যে ভাইরাসগুলি পরিবর্তন ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে কম বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কোভিড-১৯ মানুষের শরীরে আক্রমণ করার পথ পরিবর্তন করতে পারে এবং শ্বাসযন্ত্রের পরিবর্তে মস্তিষ্ককে তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে বলে ভাইরাস গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্সের ভাইরাস গবেষকরা বলেছেন, চীনে সাবভেরিয়েন্ট বিএ.৫ উত্থানের ফলে ইঁদুর এবং সংস্কৃত মানুষের মস্তিষ্কের টিস্যুগুলির অনেক গুরুতর ক্ষতি হয়েছিল, যা আগের বিএ.১ সাবভারিয়ান্টের তুলনায় অনেক বেশি। এই আক্রমণের ফলে মস্তিষ্কের প্রদাহ, ওজন হ্রাস এবং মৃত্যু হয়েছিল বলে চিনের ওই দৈনিকটি লিখেছে।
প্রাক-প্রিন্ট প্ল্যাটফর্ম বায়োরক্সিভ-এ আপলোড করা গবেষণা পাণ্ডুলিপিটি থেকে জানা যায় -"বিএ.১ এর সাথে তুলনা করে, আমরা দেখেছি যে একটি বিএ.৫ দ্রুত ওজন হ্রাস, মস্তিষ্কের সংক্রমণ এবং এনসেফালাইটিস এবং মৃত্যুর সঙ্গে K18-hACE2 মাউসের মধ্যে প্যাথোজেনিটি বৃদ্ধি করে। এই ফলাফলগুলি পরামর্শ দেয় যে ওমিক্রন বংশহ্রাসমান প্যাথোজেনিটির দিকে বিকশিত হচ্ছে না।“
গবেষণাটি এখনও পিয়ার-পর্যালোচনা করা হয়নি এবং অন্যান্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা ফলাফলগুলি পড়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গবেষণায় ব্যবহৃত মাউস মডেলটি কেউ কেউ একটি প্রধান সীমাবদ্ধতা হিসাবে তুলে ধরেছে, যুক্তি দেখিয়েছে যে ফলাফলগুলি মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট জিন ডঙ্গিয়ান বলেন, 'তারা দেখিয়েছে যে, বিএ'র মস্তিষ্কের সংক্রমণ থেকে সব ইঁদুরই মারা গেছে।বিএ ৫, যা আপাতদৃষ্টিতে মানুষের সংক্রমণ থেকে খুব আলাদা।“
গত মাসে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে, জাপানি এবং মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি দল রিপোর্ট করেছে যে বিএ.৫ ওমিক্রন সাবভেরিয়েন্টগুলির হ্রাসপ্রাপ্ত প্যাথোজেনিটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।