মৃত তন্ময়ের মা বললেন, "একজন নেতা বা আধিকারিকের সন্তান হলেও কি এত সময় লাগতো উদ্ধার করতে? আমাকে আমার সন্তান ফিরিয়ে দাও।" সব চেষ্টাকে ফাঁকি দিয়ে তন্ময় চলে গেল, কাঁদিয়ে গেল সবাইকে, ছুঁড়ে দিয়ে গেল প্রশ্ন।
মৃত তন্ময়ের মা বললেন, "একজন নেতা বা আধিকারিকের সন্তান হলেও কি এত সময় লাগতো উদ্ধার করতে? আমাকে আমার সন্তান ফিরিয়ে দাও।"
সব চেষ্টাকে ফাঁকি দিয়ে তন্ময় চলে গেল, কাঁদিয়ে গেল সবাইকে, ছুঁড়ে দিয়ে গেল প্রশ্ন।
ভয়েস ৯, নিউজ ডেস্কঃ কূয়ো থেকে যখন ছোট্ট শিশু ৮ বছরের তন্ময়কে বের করে আনা হয়েছিল, বাবা-মা, গ্রামবাসীরা সবাই আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল, কিন্তু সেই আনন্দের কান্না পরিণত হয়ে গেল দুঃখের কান্নায়। চলে গেল ছোট্ট তন্ময়, তাকে বাঁচানো গেল না।
গত ৬ ডিসেম্বর ৫৫ ফুট গভীর একটি কূয়োয় পড়ে যাওয়া আট বছর বয়সী তন্ময় সাহু মারা গেল গতকাল। তন্ময়ের দেহ অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় বেতুল জেলা হাসপাতালে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ), হোমগার্ড এবং স্থানীয় পুলিশ কর্মীরা গত চার দিন ধর তাকে উদ্ধার করার কাজ করছিলেন।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর সংবাদসংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময় অতিরিক্ত জেলাশাসক (এডিএম) শ্যামেন্দ্র জয়সওয়াল জানিয়েছিলেন, শিশুটিকে উদ্ধার করতে আরও দু-তিন ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। যাইহোক, শিশুটি পরে আর সাড়া দিচ্ছিল না কারণ সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার একটি গ্রামে খেলতে খেলতে একটি ৪০০ ফুট কুয়োতে পড়ে যায় ৬ বছরের একটি শিশু।
এরপর, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানানো হয়। ঘটনাস্থলে যায় উদ্ধারকারী দল। বেতুলের জেলা কালেক্টর অমনবীর সিং বেইনস জানিয়েছিলেন, শিশুটির গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য বোরওয়েলে একটি ক্যামেরা ঢোকানো হয়েছিল। বোরওয়েলে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং দুটি জেসিবি মেশিনের সাহায্যে বোরওয়েলের সমান্তরালে একটি সুড়ঙ্গ খনন করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সমস্ত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন বেতুলের অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্যামেন্দ্র জয়শয়াল। শিশুটি ৫৫ ফুট নীচে আটকে ছিল।
এদিকে, পাথুরে মাটিতে গর্ত খুঁড়তেও সময় লেগেছে। সময় যত গড়াচ্ছিল, ততই ভেঙ্গে পড়ছিলেন শিশুটির পরিবার। গত ২ দিন ধরে ক্যামেরা দেখে নজরদারি চালানো হচ্ছিল তার উপরে। দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছিল তাকে।
তন্ময়ের মা জ্যোতি সাহু বলেন, 'আমার সন্তান আমাকে ফিরিয়ে দাও। একজন নেতা বা আধিকারিকের সন্তান হলেও কি এত সময় লাগত উদ্ধার করতে? তন্ময়ের বাবা তার বাবা সুনীল সাহু বলেন, "আমার ১২ বছর বয়সী মেয়ে তাকে কূয়োয় পড়ে যেতে দেখে এবং আমাকে ঘটনাটি জানায়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ও শ্বাস নিচ্ছিল এবং আমরা জিজ্ঞাসা করার সময় আমরা তার কণ্ঠস্বর শুনেছিলাম। ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়।"
প্রশ্ন উঠছে, কেন এতো, সময় লাগলো উদ্ধার কার্যে? মুখ্যমন্ত্রী তো সর্বক্ষণ নজর রাখছিলেন পরিস্থিতির উপর।
তন্ময়ের শিক্ষিকা গীতা মানকর বলেন, তন্ময় ক্লাস থ্রি-র ছাত্র ছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকা-সহ তাঁর স্কুলের ছেলেমেয়েরা গায়ত্রী মন্ত্র জপ করত তাঁর নিরাপত্তার জন্য। তন্ময় যাতে কূয়ো থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসে, সেই জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন শিক্ষক-পড়ুয়ারা। তন্ময় ছিল বুদ্ধিমান ছাত্র"
কিন্তু, সব চেষ্টাকে ফাঁকি দিয়ে তন্ময় চলে গেল, কাঁদিয়ে গেল সবাইকে, ছুঁড়ে দিয়ে গেল প্রশ্ন।