দেহধারী গুরুদেবকে শিষ্যরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করালে তাতে শিষ্যদেরই অকল্যাণ হয়

(এই লেখাটি কোন ব্যক্তিবিশেষকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়, কাউকে অসম্মান করার জন্য নয়, যা সত্য, সেটা তুলে ধরতেই এই প্রতিবেদন। দয়া করে, নিজেকে এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলবেন না।)
বাবার আশির্বাদে আমাদের পাঠক-সংখ্যা এখন ১ লক্ষ ৪ হাজার। গ্রাহক ১ লক্ষ। মাত্র ৮ মাসে। বিশ্বের ১২ টি দেশের ৩৫ হাজার প্রবাসী বাঙ্গালী 'সংবাদ ভয়েস ৯' পড়েন।
 

দেহধারী গুরুদেবকে শিষ্যরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করালে তাতে শিষ্যদেরই অকল্যাণ হয়


 তারক ঘোষ 

  বাবাজী মহারাজ ‘একটি করুণ ইতিহাস’ প্রবন্ধে লিখছেন – গুরুদেবের কোমল হৃদয়ের সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে নিজেদের  স্বার্থে কিছু বলিয়ে বা লিখিয়ে নেওয়া উচিত নয়। কারণ, গুরু যখন ব্যক্তিসত্বায় থাকেন, তিনি ভুল করতে পারেন। আর শিষ্যদের দ্বারা গুরুদেব চালিত হলে তার গৃহিত সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। এই রকম সিদ্ধান্ত নিলে গুরুদেবও দ্বিধাযুক্ত হয়ে পড়েন।“ 
আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি গুরুদেব এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, যার ফলে তিনি দ্বিধাযুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। একথা বলছি, তাকে ২০০৩ সাল থেকে যেভাবে দেখেছিলাম, ২০১১ সালের পর একটু অন্যরকম মনে হচ্ছিল। 
মনস্তত্ব ও সাংবাদিকতার ছাত্র হিসাবে, আমি সব কিছু খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতাম, মনে মনে বিশ্লেষণ করতাম। কারণ, আমি শ্রীগুরুদেবের সুখের পাখি ভক্ত নই যে বাবার মনোকষ্টের কারণ খুঁজবো না। একশ্রেণির মানুষ আছেন, যারা সুযোগের সন্ধানে ঘোরেন, প্রয়োজনে গুরুর পরামর্শ নেন, নিজের আখের গুছিয়ে কেটে পড়েন। গুরুর প্রয়োজনে তাদের দেখা মেলে না। তারা সুখের পাখি। আমি 'সুখের পাখি' দের কথা বলেছি, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণের উদ্দেশ্যে নয়।
ওনার উপর একটা ওয়েবসাইট করব ঠিক করেছি, কেননা, ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে ডিজিটাল দুনিয়া। সেই দুনিয়ার কেউ বাবাজী সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে, তিনি সেই ওয়েবসাইট থেকে ওনার সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন, তার প্রবন্ধ, জীবন, কর্ম, দর্শন, তার মৃত্যু সব কিছুই। তাই বাংলা ভাষায় না করে শুধু ইংরাজীতে করাই মনোস্থির করি। 
কিন্তু, আমার কাছে বাবাজী সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য থাকলেও, সব তথ্য বা ছবি নেই। আশ্রমে দেখতাম, আনেকেই ছবি তুলছেন। হাজার হাজার শিষ্য-শিষ্যা আসছেন, বাবাজীর সঙ্গে কথা বলছেন। এ সব দেখে মনে হল, তাহলে বাবাজীর যখন এত শিষ্য-ভক্ত, তাদের কাছ থেকে নিশ্চয় অনেক অজানা কথা জানা যাবে। পাওয়া যাবে বহু ছবি, যা তোলা থাকবে ভবিষ্যতের মানুষ-জনের জন্য। তাই নানাভাবে আবেদন জানাই, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, আমার পরিচিত ভক্তদের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে।
আমি টাকা-পয়সা নয়, জায়গা-জমি নয়, বাবার তথ্য সম্পর্কিত ওয়েবসাইট তৈরির জন্য সামান্য ছবি আর তথ্য চেয়েছিলাম। এগিয়ে এসেছেন, মাত্র ২ জন গৃহী-শিষ্য। অথচ, প্রতিদিন দেখি, কম করে ৩০০-৪০০ ভক্ত শিষ্য সোস্যাল মিডিয়ায়, শ্রীবাবাজীর ছবির নীচে  ভক্তির বন্যা বইয়ে দেন। তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই ওটা তাদের সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত অধিকার। 
কিন্তু, আমার মনের প্রশ্ন, আমাদের মতো ভক্ত-শিষ্যদের কাজ কি শুধু, এটুকুই? বাবার জন্য আমাদের কিছুই করার নেই? সময়ের টানে, গুরু-পরম্পরা এগিয়ে যাবে। নতুন পরম্পরার শিষ্য-ভক্ত আসবেন। পুরানো শিষ্য ভক্তরাও চলে যাবেন পৃথিবী ছেড়ে। গ্রন্থ হারিয়ে যাবে। থেকে যাবে শুধু ডিজিটাল তথ্য ভান্ডার। তাই এই পরিকল্পনা। 

দেখলাম, বাবা যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ, তার চারপাশে ভিড় লেগে থাকত। আজ তিনি নেই (আমি মনে করি তিনি আছেন, দেখছেন সবই), তাই কারোর দেখা নেই। কারোর বলতে আমি অনেককে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি, তাই এই কথাগুলো বললাম। তাদের দেখলে, এখন কষ্ট হয়। 
এরা বাবা থাকতে কী না করত! আর আজ! অনেকে অন্য গুরু খুঁজে নিয়েছেন। আমি এই লেখায় ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আঘাত দিচ্ছি না। যা দেখেছি, যা সত্য, তাই লিখছি। কেউ যেন যেচে নিজেকে এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলবেন না। সেটা তার দায়িত্ব। 
এখানে আমি যা বলছি, সাংবাদিক হিসাবে বলছি, যা দেখেছি, যা জেনেছি, যে তথ্য আছে, যে সাক্ষাতকার নিয়েছি, তার উপর নির্ভর করেই বলছি। কারণ, আমি অতি সাধারণ মানুষ, বাবাকে দেওয়ার মতো, এইটুকুই আছে। তাকে নিয়ে প্রামান্য গ্রন্থ রচনা, তার উপর সত্যনিষ্ঠ তথ্য-ভান্ডার তৈরি।
এই প্রসঙ্গে, আমি তার ২ জন সাধু-শিষ্যের কথা বলছি – তারা আমায় বাবার ভিডিও ও বহু ছবি দিয়ে সাহায্য করেছেন। এর মধ্যে একজন আছেন, স্বামী সদগুরুদাসজী। যার প্রবন্ধ পারিজাত সংকলন। বাবার সব লেখাকে একত্রিত করে, অসাধারণ একটা কাজ করেছেন তিনি। অন্যজন, স্বামী রাধামাধব দাসজী- যিনি বাবাজীর বহু ছবি দিয়ে আমায় সাহায্য করেছেন। তার সাহায্যের কথাও আমি ভুলবো না। 

আর একটি কথা বলি, এই প্রসঙ্গে, কোন এক সাধুজী আমায় বলেন, বাবাকে নিয়ে লিখতে গেলে আশ্রমের অনুমতি লাগবে। তাকে ও তাদের মতো সবাইকে সবিনয়ে বলি, বাবাজী আমাদের সকলের গুরু। তিনি সকলের, কারো ব্যক্তিগত নন।  তার স্মৃতি (আমি স্মৃতির কথা বলছি, যা সাক্ষাতকারের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) নিয়ে লিখতে গেলে কোন আশ্রমের বা মহন্তের অনুমতি লাগে না। 
তাদের আর একটা কথা বলে রাখি, বাবাজী তার জীবিতাবস্থাতেই আমাকে বেশ কয়েকটা দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন সাংবাদিক হিসাবে। আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। বাবার কাছে আমার চাওয়ার কিছু কিছু ছিল না, কারণ আমি তার জ্ঞানভান্ডারে ও কর্মযোগে আকৃষ্ট হয়েই তার কাছে দীক্ষা নিয়েছিলাম। শুধু ধর্ম-পালন করারা জন্য নয়। কারণ, বাবাজীকে আমি মনে করি, ধর্মীয় নবজাগরনের স্বর্গীয় দূত।
কাজেই, দয়া করে বাধা দেবেন না, বা সোস্যাল নেট-ওয়ার্কে বে-আইনি আক্রমণাত্মক মন্তব্য লিখে, পরোক্ষ-হুমকি দেবেন না (যা এর আগে অনেকে করেছেন) বা স্বেচ্ছায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন না। কারণ, আমি মনে করি, এটা সাংবাদিক হিসাবে বাবার দিয়ে যাওয়া একটা কাজ করছি, আমার কোনরকম ব্যক্তিস্বার্থ এতে সুরক্ষিত হবে না, বা আমি কোথাও থেকে ৫ টা পয়সা লাভ করবো না। কেবলমাত্র, বাবার গ্রন্থগুলি ওয়েবসাইটে থাকবে না, কারণ, এগুলির কপিরাইট অন্যের। 
কিন্তু, আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে তথ্য-নির্ভর যা কিছু উঠে এসেছে , তা থাকবে। আমি এই লেখায় ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আঘাত দিচ্ছি না। যা দেখেছি, যা সত্য, তাই লিখছি। কেউ যেন যেচে নিজেকে এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলবেন না। সেটা তার দায়িত্ব। আর একটা কথা গুরুদেব দেহে থাকুন বা না থাকুন, তার কাজ করে যাওয়াটাই আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একটা ব্রত।
 বাবাজীর একটা লেখার অংশ দিয়ে শেষ করি –বাবাজী লিখছেন –প্রত্যেক সৎ শিষ্যের উচিত গুরুদেব যাতে তার আদর্শে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেন, তাতে সাহায্য করা।“

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad