আমরা ভালো নেই, ভালো থাকার অভিনয় করি

কাজেই আমরা ভালো নেই, ভালো থাকার অভিনয় করি। মুখে বলি, ভগবান কী। আবার সেই ভগবানকেই খুঁজে চলি। তাই আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আত্মদর্শন, আত্মসমীক্ষা। তবেই আমরা পাব, সেই আনন্দের সন্ধান, যার অপর নাম ভগবান। 




 তারক ঘোষ 
পর্ব ৩৯

 আমাদের এই বিচিত্র সংসারে নানা ধরণের মানুষ আছেন। তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা,ধারণা, বোধ ও চেতনা ভিন্ন ভিন্ন। একশ্রেণীর মানুষ আছেন, আরা বলে এই বেশ ভালো আছি, ভগবানকে নিয়ে আবার কী করব। বাবাজী মহারাজ লিখছেন – তাদের অনেকেই ভগবান বা ব্রম্ভ জিজ্ঞাসা সম্পর্কে উদাসীন। তাদের জন্য এই ব্রম্ভ দরজাও বন্ধ। আবার একশ্রেণীর মানুষ আছেন, যারা ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করতে করতে, যন্ত্রণার সঙ্গেও বলেন, ‘এই তো ভালো আছি।‘ 
বাবাজী বলছেন, এই ব্যক্তির কথাই গ্রহণযোগ্য। জীব যতক্ষণ নিজেকে ভগবান থেকে আলাদা মনে করেন, ততক্ষণ সে শান্তি পায় না। এই জীব যখন পরমেশ্বরের সং যুক্ত হন, তখনই ভগবান তাকে কৃপা করেন। 
বাবাজী লিখছেন – ব্রম্ভের তিনটি রূপ আছে। একটি হল তার নিয়ন্তা রূপ, আরেকটি তার জীব রূপ ও শেষটি হল তার ভোগ্যজগত রূপ। জ্ঞানীর কাছে যিনি ব্রম্ভ ভক্তের কাছে তিনি ভগবান। ভক্তকে দেখা দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দেন তিনিই ব্রম্ভ। আবার তিনিই ভক্তের হৃদয়ে আত্মারূপে থাকেন। ভক্ত যখন এই আত্মাকে জানেন, তখন তিনি ভগবানকে লাভ করেন।


 ‘আমি’তে পৌঁছাতে পারলেই মেলে মুক্তি। কিন্তু এই ‘আমি’টা কে? দার্শনিক কান্ট স্বীকার করেছিলেন যে "ঈশ্বর, স্বাধীনতা এবং অমরত্ব" বিদ্যমান কিন্তু আশঙ্কা করেছিলেন যে, বিজ্ঞান যদি তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে আদৌ প্রাসঙ্গিক হয় তবে এটি তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ করার কারণ প্রদান করবে। তিনি দেখেছেন বিজ্ঞান ওই প্রশ্নগুলি স্পর্শ করতে পারে না। 
 ‘আমি’ যে আছে তাকে অস্বীকার করা যায় না। ‘আমি’ আছে, এটা সকলকেই স্বীকার করতে হবে। এই ‘আমি’ইচৈতন্যময়। যখন আমরা অনুভব করি ‘আমি’ আছি, তখন এক আনন্দের অনুভুতি হয়। এই আনন্দই আত্মা।
 এই আনন্দকেই কান্ট বলেছেন প্রকৃত কারণ। 
গুরুদেব বলছেন – এই আনন্দই সত্য, এই আনন্দই দুর্গা, এই আনন্দই কৃষ্ণ। আসলে, এই ‘আমি’ নিজেই দেখেন, নিজেকেই দেখেন। অর্থা, তিনিই দ্রষ্টা, তিনিই দ্রষ্টব্য। এই আনন্দ যখন আমি রূপে দেহে আবদ্ধ হয়, তখন জীবাত্মা। আর যখন বিশ্বরূপে সমগ্রে ছড়িয়ে পড়ে, তখন পরমাত্মা। 


আমাদের দেহের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস। এই দেহটাই মন্দির। কাজেই এই দেহ কলুষিত হলে সেখানে ভগবান বাস করতে পারেন না। তাই দেহকে পাপমুক্ত রাখতে হয়। কিন্তু, তা কী সম্ভব? চেষ্টা করলেই সম্ভব, না করলে নয়। এ
টাই সাধনা, এটাই মনকে নিয়ন্ত্রণে আনা। মনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেই দেহ থাকবে পবিত্র। আসলে, এই পবিত্রতার মাপকাঠি সকলের কাছে সমান নয়। 
কেউ, পরপুরুষে আকৃষ্ট হওয়া বা পরনারী গমনকে বর্তমান সময়ের স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন। একাধিক প্রেম, বিবাহত্তোর প্রেম, ভোগ – এগুলি তাদের কাছে পাপ নয়। নিজের আত্মগরিমা। নিজের গ্রহণযোগ্যতার প্রমান। কিন্তু, লক্ষ্য করে যদি দেখেন, এখন সমাজে নারী তার প্রেমিককে হত্যা করছে, বা অন্য কাউকে দিয়ে হত্যা করাচ্ছে। এ
ক পুরুষ তার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে হত্যা করছে, টুকরো টুকরো করে কেটে জলে ফেলে দিচ্ছে। পরিণতি কী? জেলযাত্রা। বাকি জীবনটা আফশোস করে কাটানো। 


কাজেই, আমাদের বাবাজী সেই কথাটা মনে রাখতেই হয় –‘পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।‘ কাজেই আমরা ভালো নেই, ভালো থাকার অভিনয় করি। মুখে বলি, ভগবান কী। আবার সেই ভগবানকেই খুঁজে চলি। তাই আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আত্মদর্শন, আত্মসমীক্ষা। তবেই আমরা পাব, সেই আনন্দের সন্ধান, যার অপর নাম ভগবান।
 চলবে...

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad