“আমরা ওদের ডাকছি, কিন্তু কেউ আসছে না।“ এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুর পদধ্বনি সিরিয়া-তুরস্কে

এ যেন সফেদ এক মৃত্যুপুরী। হাজার হাজার বাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। শীতল চাদরে ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে মাটির নীচে বন্দী মানুষের জীবন। ত্রাণের হাহাকার, বাচার আর্তনাদ, আর চেনা মানুষদের ব্যর্থ খোজ – এই নিয়ে এখন সিরিয়া। সাংবাদিকদের চোখেও জল, জল, উদ্ধাকারী নির্লিপ্ত সেনা-পুলিশদের চোখেও। জীবন নিমেষে কীভাবে বদলে যায় মৃত্যুর কারাগারে – দূর দেশের উষ্ণতায় বসে কল্পনা করাও যায় না

 ভয়েস ৯, ইন্টারন্যাশানাল ডেস্কঃ “হায় ঈশ্বর! আমরা একি দেখছি! ওদের শব্দ পাচ্ছি, বাচাতে পারছি না। ওরা আটকে আছে, বেরোতে পারছে না। যখন পৌছাচ্ছি, তারা আর বেচে নেই।“ উদ্ধারকারীদলের মনের ভিতরে এখন বাচাতে না পারার জমাট কান্না। সিরিয়া-তুরস্ক জুড়ে শুধু মৃত্যুর দাপাদাপি। প্রকৃতির রুদ্র রূপ যে কী নির্মম হতে পারে, সিরিয়া-তুরস্কে এই মুহুর্তে না এলে তারা কেউ বুঝতে পারবে না। এখানে শুধ প্রতীক্ষা। হয় জীবিত বা মৃতদেহের জন্য। র
য়টার্স বার্তা সংস্থাকে এক উদ্ধারকারী বলেন, "তারা শব্দ করছে কিন্তু কেউ আসছে না।" “আমরা বিধ্বস্ত, আমরা বিধ্বস্ত। হায় ঈশ্বর... তারা ডাকছে। তারা বলছে, ‘আমাদের বাঁচাও’ কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না। আমরা কিভাবে তাদের বাঁচাতে যাচ্ছি? সকাল থেকে কেউ নেই।”
 প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর, যা আন্তাক্যা এবং ইস্কেন্ডারুন শহরগুলিতে পরিষেবা দেয়, তার রানওয়ের ব্যাপক ক্ষতির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের হাতায় প্রদেশের বাসিন্দারা, যেখানে অনেক লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে, তারা বলেছেন যে সোমবারের ভূমিকম্পের পর থেকে সামান্য সাহায্য পাওয়া গেছে।
মিডল ইস্ট আই নিউজ ওয়েবসাইটের তুরস্কের ব্যুরো প্রধান রাগিপ সোয়লু বলেছেন, প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকারীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টা ওই প্রদেশে পৌঁছাতে পারেনি। 
তিনি এক ট্যুইট বার্তায় বলেছেন - “শহর থেকে যারা কথা বলে তারা কেবল কাঁদে। এটাই একমাত্র কাজ যা তারা করতে পারে।" ইতিমধ্যে, তুর্কি কর্তৃপক্ষ ২,৯২১ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সিরিয়ায় আরও ১,৪৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। 
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন জাতিসংঘের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে।
ভয়ঙ্কর শীতল আবহাওয়া এবং ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত অঞ্চলে তুষারপাত ভূমিকম্পে আহত এবং গৃহহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষের দুর্দশা বাড়িয়েছে। এ যেন সফেদ এক মৃত্যুপুরী। হাজার হাজার বাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। শীতল চাদরে ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে মাটির নীচে বন্দী মানুষের জীবন। ত্রাণের হাহাকার, বাচার আর্তনাদ, আর চেনা মানুষদের ব্যর্থ খোঁজ – এই নিয়ে এখন সিরিয়া। 
সাংবাদিকদের চোখেও জল, জল, উদ্ধাকারী নির্লিপ্ত সেনা-পুলিশদের চোখেও। জীবন নিমেষে কীভাবে বদলে যায় মৃত্যুর কারাগারে – দূর দেশের উষ্ণতায় বসে কল্পনা করাও যায় না।
ইস্তাম্বুল থেকে রিপোর্ট করা আল জাজিরার নাতাশা ঘোনিমের মতে, দক্ষিণ তুরস্কের দশটি শহরকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। হিমাঙ্কের তাপমাত্রা এবং তুষার উদ্ধারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করেছে এবং এই অঞ্চলে আরও খারাপ আবহাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 
অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস বন্ধ হয়ে গেছে এবং সরকার উভয় পরিষেবা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে ত্রাণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর, ভারত ভূমিকম্পের ত্রাণ সামগ্রীর প্রথম চালান ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানে তুর্কিতে পাঠিয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি টুইট করে বলেছেন –“সঙ্গে গেছে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী একটি দল। যার মধ্যে রয়েছে পুরুষ ও মহিলা উভয় কর্মী, উচ্চ-দক্ষ কুকুর স্কোয়াড, চিকিৎসা সরবরাহের একটি অ্যারে, উন্নত ড্রিলিং সরঞ্জাম এবং সাহায্য প্রচেষ্টার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad