এখন জানা যাক - প্রাচীন নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের অনেক ধারা আছে এবং ওনাদের প্রতিষ্ঠিত অনেক মঠ মন্দির ও আছে আবার প্রত্যেক মঠ মন্দিরের জন্য শ্রী মহন্ত ও আছেন।
এই সমস্ত শ্রী মহন্তদের প্রসঙ্গে বলতে হলে শ্রী রামদাস কাঠিযাবাবার ভাষায বলা যেতে পারে - এনাদের অনেকেই সদগুরু বা সামর্থী পুরুষ। এই সমস্ত শ্রীমহন্তদের শ্রীচরণে প্রণাম জানাই।
এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য - যেমন মা গঙ্গা হিমালয়ের গঙ্গোত্রী থেকে আবির্ভূত হয়ে বঙ্গোপসাগরে লীন হযেছেন - এটাই ওনার মূল প্রবাহ বলে মানা হয। মা গঙ্গার প্রবাহ কালে ওনার অনেক উপনদী বা শাখানদী আছে যার মধ্যে দিয়ে গঙ্গার জল প্রবাহিত হয় - তবে তারা মূল ধারায় প্রবাহিত নয় বলে মানা হয়।
বাবাজী গীতার ব্যাখ্যা করে বলেছেন ঈশ্বরের দেওয়া জিনিষ যদি নিজেরা ইচ্ছেমতো, স্বার্থপরের মতো ভোগ করি, তবে আমরা চোর, ভগবানের রোষ তো নেমে আসবেই - SANGBAD VOICE 9 latest Bengali News
তেমনি নিম্বার্ক ধারার যে সমস্ত মঠ মন্দির আছে, তারা কিন্তু মূল ধারায প্রবাহিত নয বা ওনাদের গুরুশক্তির কথা এখানে বিশেষ ভাবে আলোচিত নয। এই সমস্ত মঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শ্রী বাবাজী মহারাজ বলতেন - এই পরম্পরা ( এখানে নিম্বার্ক পরম্পরা ) মঠ মন্দিরের পরম্পরা নয়, ইহা সাধন ভজনের পরম্পরা, মঠ মন্দির সাধন ভজন চিত্ত শুদ্ধির স্থান। যতদূর পর্যন্ত এই উদ্দেশ্য সাধিত হয ততদূর পর্যন্তই এই সকল স্থান স্থাপনের সার্থকতা।
তেমনি নিম্বার্ক ধারার যে সমস্ত মঠ মন্দির আছে, তারা কিন্তু মূল ধারায প্রবাহিত নয বা ওনাদের গুরুশক্তির কথা এখানে বিশেষ ভাবে আলোচিত নয। এই সমস্ত মঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শ্রী বাবাজী মহারাজ বলতেন - এই পরম্পরা ( এখানে নিম্বার্ক পরম্পরা ) মঠ মন্দিরের পরম্পরা নয়, ইহা সাধন ভজনের পরম্পরা, মঠ মন্দির সাধন ভজন চিত্ত শুদ্ধির স্থান। যতদূর পর্যন্ত এই উদ্দেশ্য সাধিত হয ততদূর পর্যন্তই এই সকল স্থান স্থাপনের সার্থকতা।
শ্রী বাবাজী মহারাজ আর একটি সুন্দর কথা বলতেন - মোহন্তাই, পদবী এসব সাধককে অন্তর্মুখী না করিয়া বহির্মুখী করিয়া দিতেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্ত পদের মোহ সাধককে অহংবাদী করিতেছে।
শ্রী রামদাস কাঠিয়াবাবা সাধন ভূমির বা সাধকের ক্রিয়া ভূমির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রথমেই বললেন -
'গুরু তীর্থে অনুরাগ বিষয় বিষ্ কর মান।'
অর্থাৎ শ্রী গুরুদেব আর মহাতীর্থে অনুরাগ থাকতে হবে আর এই সংসারে বিষয়-সম্পত্তিকে বিষ জ্ঞান করতে হবে বা বিষয়ের প্রতি অনাসক্ত ভাব রাখতে হবে- এটাই সাধনার প্রথম সোপান।
স্বামী বিবেকানন্দ একবার বলেছিলেন - 'বুঝলাম সত্ উদ্দেশ্যে সাধুর অর্থ সংগ্রহ করা উচিত নয় '।
শ্রী সন্তদাসজী মহারাজজী বলতেন - সাধু কেবল নিজে নির্দোষ থাকলেই চলিবে না, বাহিরের লোকেও যাহাতে দোষ আশাঙ্কা করতে পারে এইরূপ আচারণ করা উচিত নয়'।
অথচ এই সমস্ত অনেক শ্রীমহন্তরা আছেন যাঁরা বড় বড় মঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন আর বিষয়ের প্রতি অনুরাগ বেড়েই চলেছে, বিষ মনে করা তো দূরের ব্যাপার। এই সমস্ত শ্রী মহন্তদের চরণে প্রণাম জানাই।
শ্রী বাবাজী মহারাজ অর্পণম অস্তু।
শ্রী শ্রীগুরবে নমঃ।
এখানে নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের আচার্যদের গুরুশক্তির কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে শ্রী রামদাসজী ও ওনার পরবর্তী গুরুদেবদের সমন্ধে আমরা এখন অনেক কিছু জানতে পারি কারণ ওনাদের বিচরণ স্থল বর্তমান সমাজে বা এই জগত সংসারে। এই সমস্ত আচার্যগণ শ্রী ভগবানের অংশ বা মুক্ত পুরুষ। ওনাদের প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা এখানে করা হচ্ছে না , কারণ ওনাদের প্রসঙ্গে অনেক ভাল ভাল পুস্তক আছে।
এখন জানা যাক - প্রাচীন নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের অনেক ধারা আছে এবং ওনাদের প্রতিষ্ঠিত অনেক মঠ মন্দির ও আছে আবার প্রত্যেক মঠ মন্দিরের জন্য শ্রী মহন্ত ও আছেন।
এই সমস্ত শ্রী মহন্তদের প্রসঙ্গে বলতে হলে শ্রী রামদাস কাঠিয়াবাবার ভাষায বলা যেতে পারে - এনাদের অনেকেই সদগুরু বা সামর্থী পুরুষ। এই সমস্ত শ্রীমহন্তদের শ্রীচরণে প্রণাম জানাই।
এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য - যেমন মা গঙ্গা …
গুরুশক্তি কিভাবে অবতার বা ভগবানের অংশ বা মুক্ত পুরুষ রূপে মনুষ্য শরীরে আবিষ্ট বা সঞ্চারিত হযে শ্রী গুরুদেব রূপে এই জগত সংসারে ক্রিয়া করেন বা মানব কল্যাণ সাধন করেন - সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । এখন সাধারণ ভাবে প্রশ্ন জাগে- এই সংসারে সমস্ত শ্রী গুরুদেব কি গুরুশক্তির আধার বা গুরুশক্তির বাহক?
এখন পূর্বে উল্লেখিত সেই সমস্ত শ্রী গুরুদেবের ব্যতিক্রমী অন্যান্য শ্রী গুরুদেবের সমন্ধে আলোচনা করা যেতে পারে।
ভারতবর্ষ - শ্রী গুরুদেব প্রধান দেশ। এখনে সত্ শিষ্যের আধিক্য না থাকলেও তথাকথিত শ্রী গুরুদেবের সংখ্যা কম নয়। তাই শ্রী রামকৃষ্ণদেবের ভাষায় বলি -- মানুষ গুরু মেলে লাখ লাখ- সকলেই গুরু হতে চায়। শিষ্য পাওয়া যায় না।
তাছাড়া আর একটা কারণ দেখা যায়। সাধারণ মানুষ ' গুরুকরণ ' করা নিয়ে বিশেষ ভাবে উৎসাহিত।
তাই মনে প্রশ্ন আসে-
'গুরুকরণ' করা কি খুব প্রয়োজন? বা কেন প্রয়োজন? বা কি জন্য প্রয়োজন?
এইসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করলে উত্তর পাওয়া যায় - সাধারণ মানুষ এতসব চিন্তা ভাবনা করে না। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষের ধারনা - গুরুকরণ করলে এই সংসারে সহজেই সমস্ত রকম দুঃখ বা বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় এবং লৌকিক জগতের অনেক কিছুই ' প্রেয় ' বস্তু ও লাভ করা যায়। এদের কাছে ' শ্রেয় ' বস্তু বা ' প্রেয় ' বস্তুর পার্থক্য ও বিশেষভাবে উপলব্ধ হয় না।
এই প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে -
এই জগতের মহানপুরুষ, বিদগ্ধ পন্ডিত ও শ্রী ভগবানের কৃপা লাভে ধন্য শ্রী ব্যাসদেবের কথা। তিনি বেদান্ত দর্শন বা শ্রী ব্রহ্ম সূত্রের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রথম শ্লোকে বললেন -
' অথোতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা '
অর্থাৎ এরপর ব্রহ্ম বা ব্রহ্মের স্বরূপ সমন্ধে জিজ্ঞাসা বা বিশেষ ভাবে জানা।
স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন আসে - তাহলে এর আগে কখন বা কি পরিস্থিতির উদয হলে ব্রহ্মাকে বা ব্রহ্মার স্বরূপ সমন্ধে সাধক ব্যাকুল হয় বা কখন ব্রহ্মার স্বরূপ সমন্ধে জানার জন্য সাধক প্রকৃত অধিকারী হতে পারেন?
তেমনি মনে হয গুরুকরণের পূর্বে সাধারণ মানুষের ভাবা উচিত - অথোতো গুরু জিজ্ঞাসা? অর্থাত এরপর কখন শ্রী গুরুদেবের সমন্ধে জানা উচিত বা কখন গুরুকরণ করা প্রয়োজন বা কখন উপযুক্ত সময়?
তাছাড়া গুরুকরণের পূর্বে সাধারণ মানুষের ভাবা অবশ্যক যে কিভাবে প্রকৃত শিষ্যের অধিকারী হওয়া যায়? কারণ উপযুক্ত শিষ্য হতে হলে মানুষকে শ্রীগীতায় বর্ণিত এই সমস্ত গুণের অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন। যেমন শিষ্যকে শাসনযোগ্য হতে হবে অর্থাৎ শ্রী গুরুদেবকে শাসন করার অধিকার দিতে হবে। শিষ্যকে শ্রী গুরুদেবের উপদেশ গ্রহণ করার যোগ্যতা থাকতে হবে। শ্রী গুরুদেবের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস বা ভক্তি রাখতে হব এবং সবার শেষে শিষ্যকে শ্রী গুরুদেবের শরণাগত হতে হবে।
কারণ গুরুরূপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন - যদি সব কিছু ত্যাগ করে আমার বা শ্রী গুরুদেবের শরণাগত হওয়া যায়, তিনি শিষ্যকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করবেন। অর্থাৎ এই সমস্ত গুণের অধিকারী হলে গুরুকরণ করার সার্থকতা থাকবে। কারণ এটাই হল প্রকৃত শিষ্যের স্বরূপ।
পূর্বে শিষ্যের স্বরূপ সমন্ধে বলা হয়েছে।
এখন শ্রী গুরুদেবের স্বরূপ কি হওযা উচিত?
যা পূর্বেই আলোচিত। তাই শ্রীরামকৃষ্ণের ভাষায বলি-- সচ্চিদানন্দই গুরু। আর শ্রী বাবাজী মহারাজের ভাষায় বলি-- গুরু আসলে পরমাত্মা বা ব্রহ্ম। তাই গুরুকরণের পূর্বে সাধারণ মানুষের উচিত সদগুরুর সন্ধানে প্রবৃত্ত হওযা। এই ব্যাপারে শ্রী রামদাস কাঠিযাবাবার উপদেশ - '
কর সদ্ গুরু কী আশ্ , হোয ঘট্ মে প্রকাশ, হোয তিমির কা নাশ্ '।
অর্থাৎসদগুরু লাভের আকাঙ্খা করবে, সদগুরু লাভ হলে হৃদয়ে জ্ঞানের আলোক প্রকাশিত হবে এবং অজ্ঞান অন্ধকার নাশ হয়ে যাবে।
তাই এককথায় বলা যেতে পারে - শ্রী গুরুদেবের স্বরূপ মানে শ্রী ভগবানের স্বরূপ - এর বেশি বিচার করার সামর্থ্য আমাদের নেই।