Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

বাবাজী মহারাজ বিপদগ্রস্ত ভক্ত-শিষ্যদের কাছে আজও ত্রাতারূপে হাজির হন, তবে ডাকার মতো ডাকা চাই

তিনি সমদর্শী, তিনি শিক্ষাদাতা, তিনি পিতা, তিনি মাতা, আবার তিনি রক্ষাকর্তাও। তিনি হলেন শ্রীগুরু।

 বাবাজী মহারাজের জীবন ও কর্ম পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ছিলেন, তার শ্রীগুরুদেব শ্রীশ্রী জানকীদাসজীর ছায়ামাত্র। সারাটা জীবন তিনি শিষ্যরূপেই কর্ম করে গেছেন। আর সব কর্মকেই শ্রীভগবানের কাজ রূপে দেখেছেন। তিনি শ্রীগুরুর কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। গুরুবাক্যকেই মাথায় নিয়ে একের পর এক কর্ম করেছেন সেবা বুদ্ধি দিয়ে, বাসনাহীন ভাবে। ছড়িয়ে দিয়েছেন তার আদর্শ ও ভাবনাকে দেশ জুড়ে। 
তাই সেই গুরুর শিষ্যদের ভয় কীসের! তিনি তো রয়েছেন বরাভয় রূপেই। 
আমরা বহু ভুল করি, মিথ্যা বলি। এক ভুল আর মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে আসে হাজার ভুল, হাজার মিথ্যা। সরে যেতে থাকি সত্যের আলোক থেকে অনেক অনেক দূরে। যখন সব মিথ্যা শেষ হয়ে যায়, দেখি, একা দাঁড়িয়ে আছি কোন সুগভীর খাদের কিনারায়। আমাদের পাশে কেউ নেই। 
যাদের জন্য ভুল করেছি, মিথ্যা বলেছি, তারা সময়মতো তাদের স্বার্থ পূরণ করে কেটে পড়েছে। আর আমরা আছি একা। দস্যু রত্নাকর হয়ে। বাল্মীকি হতে পারি নি।
তখনো যদি, আমরা সেই ভুলকে চিনতে চেষ্টা না করি, কিংবা মিথ্যার আড়ালেই আশ্রয় নিই, তাহলে আমরা আর কোনদিন সত্যের সামনে দাঁড়াতে পারবো? ভয় লাগবে সত্যকে। সত্যের মুখোমুখি হওয়ার মতো মেরু্দন্ডের জোর থাকবে না। জীবন হয়ে উঠবে বিষময়। তখন, আমাদের সেই একাকীত্বের মাঝে থাকেন আমাদের গুরুদেব। কেন থাকেন জানেন? 
আসলে, যে মুহুর্তে আমরা তার কাছে নিজেদের নিবেদন করে ফেলি, সেই মুহুর্তে আমাদের রক্ষাকর্তা হয়ে তিনি আমাদের পাশে থাকেন। লাটাই তো তার হাতে। ঘুড়ি যতই উচ্চে যাক না কেন! হয়তো ভাবছেন, আমরা যখন ভুল করি, তখন গুরুদেব আমাদের বাধা দেন না কেন? 
আমি দেখেছি, আমরা খারাপ কাজ করার আগে শ্রীগুরু নানারূপে আমাদের বাধা দেন। কেউ না কেউ আমাদের সেই কাজ করতে নিষেধ করেন, যে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা তখন তাকে চিনতে পারি না। কিংবা, মোহের বশে পরিণামের কথা না ভেবে আমরা এগিয়েই যাই, যতক্ষণ না বিপদ আমাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। 
লোভ আর মোহ – এই দুইয়ের টান অগ্রাহ্য করার মতো মানুষ খুব কম। তাই আমাদের বিপথে চালিত করার জন্য, লোভ আসে। নানা রূপ ধরে। মোহময়ী নারী, পুরুষ, বেআইনি অর্থ-সম্পত্তির রূপ নিয়ে। আমাদের দুকানে তখন ঢোকেনা গুরুদেবের নিষেধাজ্ঞা, আমাদের দুচোখে ভাসে না শ্রীগুরুর বরাভয় মূর্তি, আমাদের মস্তিষ্কে থাকে না শ্রীগুরুর পদপদ্ম। 
আমাদের জিভে উচ্চারিত হয় না, শ্রীগুরুর দেওয়া মন্ত্রধ্বনি। আমাদের কান শুধু শোনে প্রিয়-প্রিয়া বা প্রতারকের মধুর ভাষন, আমাদের চোখ জুড়ে থাকে লালসা, আমাদের মস্তিষ্কে থাকে একরাশ অলীক বাসনার স্বপ্ন, আর আমাদের জিভে আসে শুধু –‘দাও মোরে আরো দাও।
শ্রীগুরু লাটাই হাতে অন্তরালে থেকে আমাদের দেখেন আর হাসেন। হয়তো ভাবেন, ‘ওর যতক্ষণ না পাখা ক্লান্ত হয়, যতক্ষণ না কোন বিপদ আসে, উড়ে যাক। লোভের খোলা আকাশে উড়তেই থাক।“ আমরা তখন হয়ে যাই, বাসনা, কামনার উদগ্র দাস। তারাই তখন আমার পিতা-মাতা-গুরু। বোধ তখন হারিয়ে যায়, চেতনা মিলিয়ে যায়, কামনার উষ্ণতায়। 
আর যুক্তি? 
যুক্তি তখন লোভের কানাগলিতে ঘুরে বেড়ায়। ভক্তের এমতাবস্থাতেও শ্রীগুরু থাকেন তার পাশে, পরীক্ষা নিতে থাকেন, কখন ভক্ত-শিষ্য তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে তাকে একবার ডেকে উঠবে। একেবারে অন্তর ভেদ করে সেই ডাক উঠে আসবে, কানে বাজবে শ্রীগুরুর বাণী, চোখে বইবে অনুতাপের বারিধারা, হৃদয় শুধু কান্নার শব্দ আর মস্তিষ্ক জুড়ে থাকবে, সত্যের আলোর দাপাদাপি। তখন আর পারবেন না শ্রীগুরু দূরে থাকতে। তাকে তখন আসতেই হবে। 
ছুটে এসে তিনি ভক্ত-শিষ্যকে জড়িয়ে ধরবেন। তার সেই স্পর্শে কেটে যাবে, তার সব পাপ, সব অনাচার, সব মিথ্যা। লোভের আগুন নিভে গিয়ে জ্বলে উঠবে সত্যের সূর্য। কেননা, তিনি যে ভক্তের ভগবান।
আমাদের শ্রীগুরু, এরকমই এক সদগুরু, যিনি তার দেহান্তের পরও তার শিষ্য ভক্তদের আগলে রেখেছেন। যিনি বিশ্বাস করেন, তিনি বুঝতে পারবেন, টের পাবেন আর যিনি বিশ্বাস করবেন না, তিনি টের পাবেন না, কিন্তু উদ্ধার পেয়ে যাবেন বিপদ থেকে। 


 আপনাদের আর একবার সেই কথাটা বলি, বাবাজীর শ্রীগুরু শ্রীজানকীদাসজী তাকে বলে গিয়েছিলেন, শিষ্য-ভক্তদের দেখতে। সেই জন্যই তাকে দিয়ে গিয়েছিলেন গুরুশক্তি, তাকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিলেন, যাতে তিনি হয়ে উঠতে পারেন যুগপোযোগী। শ্রীগুরুর সেই আদেশ তিনি আজও পালন করে চলেছেন সবার অলক্ষ্যে, যেমন দেহে থাকালীন গুরুদেবের কোন আদেশ তিনি অমান্য করতে পারেন নি। 
একইসঙ্গে তার এই কর্মের মাধ্যমে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন, গুরুদেবের ভালোবাসা পেতে গেলে, তার আদেশ নির্বিচারে পালন করতে হয়, তাকে ডাকতে হয় মন-প্রাণ দিয়ে – ডাকার মতো ডাকা, দেখার মতো চোখ নিয়ে। তাকে চিনতে পারার মন নিয়ে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies